পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী ধনসঞ্চয় হইবে, তদ্বিষয়ে সন্দেহ নাই। উষ্ণতার দ্বিতীয় ফল, বিকল এই বলেন যে, তাপাধিক্য হেতু লোকের শারীরিক তাপজনক খাদ্যের তত আবশ্যকতা হয় না। যে দেশ শীতল, সে দেশে শারীরিক তাপজনক খাদ্য অধিক আবশ্যক। শারীরিক তাপ শ্বাসগত বায়ার অম্লজানের সঙ্গে শরীরস্থ দ্রব্যের কাব্বানের রাসায়নিক সংযোগের ফল। অতএব যে খাদ্যে কাব্বান অধিক আছে, তাহাই তাপজনক ভোজ্য। মাংসাদিতেই অধিক কাব্বান। অতএব শীতপ্রধান দেশের লোকের মাংসাদির বিশেষ প্রয়োজন। উষ্ণদেশে মাংসাদি অপেক্ষাকৃত অনাবশ্যক-বনিজের অধিক আবশ্যক। বনজ সহজে প্রাপ্য-কিন্তু পশহনন কািন্টসাধ্য, এবং ভোজ্য পশি দলভ। অতএব উষ্ণ দেশের খাদ্য অপেক্ষাকৃত সালভ। খাদ্য সলভ বলিয়া শীঘ্র ধনসঞ্চয় হয়। ভারতবর্ষ উষ্ণদেশ এবং তথায় ভূমিও উদ্বারা। সতরাং ভারতবর্ষে আতি শীঘ্র ধনসম্প্রচয় হওয়াই সম্ভব। এই জন্য ভারতবর্ষে অতি পািব্বকালেই সভ্যতার অভু্যদয় হইয়াছিল। ধনাধিক্য হেতু একটি সম্প্রদায় কায়িক পরিশ্রম হইতে অবসর লইয়া জ্ঞানালোচনায় তৎপর হইতে পারিয়াছিলেন। তাঁহাদিগের অজিত ও প্রচারিত জ্ঞানের কারণেই ভারতবর্ষের সভ্যতা। পাঠক বঝিয়াছেন যে, আমরা ব্ৰাহ্মণদিগের কথা বলিতেছি। কিন্তু এইরূপ প্রথমকালিক সভ্যতাই ভারতীয় প্রজার দরদন্টির মািল। যে যে নিয়মের বশে অকালে সভ্যতা জন্মিয়াছিল, সেই সেই নিয়মের বশেই তাহার অধিক উন্নতি কোন কালেই হইতে পারিল না,-সেই সেই নিয়মের বশেই সাধারণ প্রজার দন্দশা ঘটিল। প্ৰভাতেই মেঘাচ্ছন্ন। বালতর ফলেবান হওয়া ভাল নহে। যখন জনসমাজে ধনসম্প্রচয় হইল, তখন কাজে কাজেই সমাজ দ্বিভাগে বিভক্ত হইল। এক ভাগ শ্রম করে; এক ভাগ শ্রম করে না। এই দ্বিতীয় ভাগের শ্রম করিবার আবশ্যকতা নাই বলিয়া তাহারা করে না; প্রথম ভাগের উৎপাদিত অতিরিক্ত খাদ্যে তাহদের ভরণপোষণ হয়। যাহারা শ্রম করে না, তাহারাই কেবল সাবকাশ; সতরাং চিন্তা, শিক্ষা ইত্যাদি তাহাদিগেরই একাধিকার। যে চিন্তা করে, শিক্ষা পায়, অর্থাৎ যাহার বদ্ধি মাডিজত হয়, সে অন্যাপেক্ষা যোগ্য, এবং ক্ষমতাশালী হয়। সতরাং সমাজমধ্যে ইহাদিগেরই প্রধানত্ব হয়। যাহারা শ্রমোপজীবী তাহারা ইহাদিগের বশবত্তীর্ণ হইয়া শ্রম করে। তাহাদিগের জ্ঞান ও বন্ধির দ্বারা শ্রমোপজীবীরা উপকৃত হয়, পরিস্কারস্বরপ উহারা শ্ৰমোপজীবীর অভিজাত ধনের অংশ গ্ৰহণ করে; শ্রমোপজীবীর ভরণপোষণের জন্য যাহা প্রয়োজনীয়, তাহার অতিরিক্ত যাহা জন্মে, তাহা উহাদেরই হাতে জমে। অতএব সমাজের যে অতিরিক্ত ধন, তাহা ইহাদেরই হাতে সঞ্চিত হইতে থাকে। তবে দেশের উৎপন্ন ধন দাই ভাগে বিভক্ত হয়,-“এক ভাগ শ্রমোপজীবীর, এক ভাগ বদ্ধ্যাপজীবীর। প্রথম ভাগ, “মজরির বেতন”, দ্বিতীয় ভাগ ব্যবসায়ের “মনোফা”।* আমরা “বেতন” ও “মনোফা”, এই দাইটি নাম ব্যবহার করিতে থাকিব। “মনোফা” বদ্ধপজীবীদের ঘরেই থাকিবো। শ্রমোপজীবীরা “বেতন” ভিন্ন “মনোফা’র কোন অংশ পায় না। শ্রমোপজীবীরা সংখ্যায়। যতই হউক না কেন, উৎপন্ন ধনের যে অংশটি “বেতন”, সেইটিই তাহদের মধ্যে বিভক্ত হইবে, “মনোফা’র মধ্য হইতে এক পয়সাও তাহারা পাইবে না। মনে কর, দেশের উৎপন্ন কোটি মাদ্রা; তন্মধ্যে পঞ্চাশ লক্ষ “বেতন”, পঞ্চাশ লক্ষ “মনাফা”। মনে কর, দেশে পাচিশ লক্ষ শ্ৰমোপজীবী। তাহা হইলে এই পশ্চাশ লক্ষ মাদ্রা “বেতন”, পাঁচিশ লক্ষ লোকের মধ্যে ভাগ হইবে, প্রত্যেক শ্রমোপজীবীর ভাগে দই মাদ্রা পড়িবে। মনে কর, হঠাৎ ঐ পাঁচিশ লক্ষ শ্রমোপজীবীর উপর আর পাচিশ লক্ষ লোক কোথা হইতে আসিয়া পড়িল। তখন পঞ্চাশ লক্ষ শ্ৰমোপজীবী হইল। সেই পঞ্চাশ লক্ষ মাদ্রাই ঐ পঞ্চাশ লক্ষ লোকের মধ্যে বিভক্ত হইবে। যাহা “মনাফা”, তাহার এক পয়সাও উহাদের প্রাপ্য নহে, সতরাং ঐ পঞ্চাশ লক্ষ মাদ্রার বেশী এক পয়সাও তাঁহাদের মধ্যে বিভাজ্য নহে। সতরাং এক্ষণে প্রত্যেক শ্রমোপজীবীর ভাগ দাই মাদ্রার পরিবত্তে এক মাদ্রা হইবে। কিন্তু দাই মাদ্ৰাই ভরণপোষণের জন্য মুকাক বলিয়াই তাহা পাইত। অতএব এক্ষণে তাহদের প্রাসাচ্ছাদনের কন্টে বিশেষ দর্শ

  • “ভূমির কর” এবং “সদ” ইহার অন্তৰ্গত। এ স্থলে বিবেচনা করিতে হইবে। সংক্ষেপাভিপ্ৰায়ে আমরা কর বা সদের উল্লেখ করিলাম না।

O Ο Ο