পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-বঙ্গদেশের কৃষক দ্বিতীয়তঃ, বাস্তবিক বিদেশীয় বণিকেরা এ দেশ হইতে নগদ টাকা জাহাজে তুলিয়া লইয়া যান না। বাণিজ্যের মাল্য হান্ডিতে চলে। সঞ্চিত অৰ্থ দলিলে থাকে। অতি অলপমাত্র নগদ টাকা বিলাতে যায়। আমাদিগের ধনহানি নাই, বরং বদ্ধি হইতেছে। কেন না, যে পরিমাণে নগদ টাকা বা রাপা আমাদিগের দেশ হইতে অন্য দেশে যায়, তাহার অনেক গণ বেশী রাপা অন্য দেশ হইতে আমাদের দেশে আসিতেছে, এবং সেই রােপায় নগদ টাকা হইতেছে। নগদ টাকাই যদি ধন হইত, তবে আমরা অন্য দেশকে নিধন করিয়া, নিজের ধন বদ্ধি করিতেছি, নিজে নিধন হইতেছি না। এ সকল তত্ত্ব যাঁহারা বঝিতে যত্ন করবেন, তাঁহারা দেখিবেন যে, কি আমদানিতে, কি রপ্তানিতে, বিদেশীয় বণিকেরা আমাদের টাকা লইয়া যাইতেছেন না, তর্ষিবন্ধন আমাদিগের দেশের টাকা কমিতেছে না। বরং বিদেশীয় বাণিজ্য কারণ আমাদিগের দেশের ধন বদ্ধি হইতেছে। যাঁহারা মোটামটি ভিন্ন বঝিবেন না, তাঁহারা একবার ভাবিয়া দেখিবেন, বিদেশ হইতে কত অৰ্থ আসিয়া এ দেশে ব্যয় হইতেছে। যে বিপল রেলওয়েগালি প্রস্তুত হইয়াছে, সে অথবা কাহার ? বিদেশীয় বণিক দিগের সম্পবন্ধে শেষে যাহা বলিয়াছি, রাজপরিষদিগের সম্পবন্ধেও তাহা কিছ কিছর বত্তে । কিন্তু ইহা অবশ্য সবীকাৰ্য্য যে, রাজকৰ্ম্মচারীদিগের জন্য এ দেশের কিছ: ধন বিলাতে যায়, এবং তাহার বিনিময়ে আমরা কোন প্রকার ধন পাই না। কিন্তু সে সামান্য মাত্ৰ।।*।। বাণিজ্য জন্য এ দেশে যে ধন বদ্ধি হইতেছে, এবং প্রথম পরিচ্ছেদের পরিচয় মত কৃষি জন্য যে ধন বদ্ধি হইতেছে, তাহাতে সে ক্ষতি পরিণ হইয়া আরও অনেক ফাজিল থাকিতেছে। অতএব আমাদের ধন বৎসর বৎসর বাড়িতেছে, কমিতেছে না। ৩। লেখক বলিতেছেন, “যদি মহাত্মা কণাওয়ালিস জমীদারদিগের বিত্তমান শ্ৰীীর উপায় না করিয়া যাইতেন, তবে দেশ এত দিন আরও দরিদ্র হইয়া পড়িত। দেশে যাহা কিছর অর্থ সম্পত্তি আছে, তাহা এই কয়েকজন জমীদারের ঘরেই দেখিতে পাওয়া যায়।” এ কথাও সকলে বলেন, এ ভ্রমও সাধারণের। আমাদিগের জিজ্ঞাস্য এই যে, জমীদারী বন্দোবস্তে যদি দেশে ধন আছে- তবে প্ৰজাওয়ারি বন্দোবস্তে ধন থাকিত না কেন ? যে ধন এখন জমীদারদিগের হাতে আছে, সে ধন তখন দেশে থাকিত না ত কোথায় যাইত ? জমীদারের ঘরে ধন আছে, তাহার একমাত্র কারণ যে, তাঁহারা ভূমির উৎপন্ন ভোগ করেন। প্ৰজাওয়ারি বলেন্দাবস্ত হইলে, প্রজারা সেই উৎপন্ন ভোগ করিত, সতরাং সেই ধনটা তাহদের হাতে থাকিত। সে বিষয়ে দেশের কোন ক্ষতি হইত না। কেবল দই চারি ঘরে তাহা রাশীকৃত না হইয়া লক্ষ লক্ষ প্রজার ঘরে ছডাইয়া পড়িত। সেইটিই এই ভ্ৰান্ত বিবেচকদিগের আশঙ্কার বিষয়। ধন দাই এক জায়গায় কড়ি বাঁধিলে তাঁহারা ধন আছে বিবেচনা করেন; কড়ি না। দেখিতে পাইলে তাঁহারা ধন আছে বিবেচনা করেন না। লক্ষ লক্ষ টাকা এক জায়গায় গাদা করিলে অনেক দেখায়; কিন্তু আধ ক্রোশ অন্তর একটি একটি ছডাইলে টাকা দেখিতে পাওয়া যায় না। কিন্তু উভয় অবস্থাতেই লক্ষ টাকার অস্তিত্ব স্বীকার করিতে হইবে। এখন বিবেচনা করা কত্তব্য, ধনের কোন অবস্থা দেশের পক্ষে ভাল, দই এক স্থানে কড়ি ভাল, না ঘরে ঘরে ছড়ান ভাল ? পািব্বপশ্চিডতেরা বলিয়াছেন যে, ধন গোময়ের মত, এক স্থানে অধিক জমা হইলে দগন্ধ এবং অনিন্টিকারক হয়, মাঠময় ছডাইলে উক্ৰবৰ্তরতাজনক, সতরাং মঙ্গলকারক হয়। সমাজতত্তবিদেরাও এ তত্ত্বের আলোচনা করিয়া সেইরােপই স্থির করিয়াছেন। এবং তাঁহাদের অন্যাসন্ধানানসারে ধনের সাধারণতাই সমাজোন্নতির লক্ষণ বলিয়া স্থির হইয়াছে। ইহাই ন্যায়সঙ্গত। পাঁচ সাত জন টাকার গাদায় গড়াগড়ি দিবে, আর ছয় কোটি লোক অন্নাভাবে মারা যাইবে, ইহা অপেক্ষা অন্যায়। আর কিছ কি সংসারে আছে ? সেই জন্যই কশৰ্মওয়ালিসের বলেন্দাবস্ত অতিশয় দৰ্ষ্য। প্ৰজাওয়ারি বন্দোবস্ত হইলে, এই দই চারি জন অতিধন্যবান ব্যক্তির পরিবত্তে আমরা ছয় কোটি সখী প্ৰজা দেখিতাম। দেশশদ্ধ অশ্লেষর কাঙ্গাল, আর পাঁচ সাত জন টাকা খরচ করিয়া ফরাইতে পারে না, সে ভাল না-সকলেই সখি স্বচ্ছন্দে আছে, কাহারও

  • এই কথাটাই বড় বেশী ভুল। এ সকল বিচারে ভুল আছে, গোড়ায় স্বীকার করিয়াছি।

臀 ON LO