পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e- ངu বহবিবাহ করিয়া থাকেন, তাঁহাদিগেরই মাখে৷ বহবিবাহপ্রথার ভূয়সী নিন্দা এবং কৌলীন্যর উপর ধিক্কার আমরা শতবার শনিয়াছি। তবে যে তাঁহারা কেন এত বিবাহ করেন, সে সর্বতন্ত্র কথা। এমত চোর কেহই নাই যে, জিজ্ঞাসা করিলে চুরিকে অসংকলেম বলিয়া স্বীকার করিবে না-কিন্তু অসৎকৰ্ম্ম বলিয়া স্বীকার করিয়াও সে আবার চুরি করে। কুলীনেরাও বহবিবাহ নিন্দনীয় বলিয়া স্বীকার করিয়াও বহবিবাহ করেন। কিন্তু সে যাহা হউক, বহবিবাহ যে কুপ্ৰথা, তদ্বিষয়ে বাঙ্গালীর মতৈক্য সম্পবন্ধে আমাদের কোন সংশয় নাই। এই ঐকমত্য যে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কৃত বহবিবাহবিষয়ক প্রথম পশুক প্রচারের পর হইয়াছে, এমত নহে। অনেক দিন হইতেই ইহা সংস্থাপিত হইয়া আসিতেছে। ইহা দেশের মধ্যে সংশিক্ষা প্রচার বা ইউরোপীয় নীতির প্রচার বা সাধারণ উন্নতির ফল। তথাপি তাঁহার প্রথম পর্যন্তকের জন্য আমরা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট কৃতজ্ঞ। যাহা কিছ সাদভিপ্ৰায়ে অনঠিত, তাহা সাৰ্থক হউক বা নিরর্থক হউক, প্রয়োজনবিশিষ্ট হউক বা নিম্প্রয়োজনীয় হউক, তাহাই প্রশংসনীয় এবং কৃতজ্ঞতার স্থল। বিশেষ বহবিবাহ সম্পবন্ধে লোকের মত যাহাই হউক, বহবিবাহপ্রথা দেশ হইতে একেবারে উচ্ছিন্ন হয় নাই। তবে বহবিবাহ এ দেশে যতদর প্রবল বলিয়া বিদ্যাসাগর প্রতিপন্ন করিবার চেন্টা করিয়াছেন, বাস্তবিক ততটা প্রবল নহে। আমাদিগের সমরণ হয়, হগলি জেলায় যতগলিন বহবিবাহপরায়ণ ব্রাহ্মণ আছেন, বিদ্যাসাগর প্রথম পর্যন্তকে তাঁহাদিগের তালিকা দিয়াছেন। অনেকের মাখে শনিয়াছি যে, তালিকাটি প্রমাদশান্য নহে। কেহ কেহ বলেন যে, মত ব্যক্তির নাম সন্নিবেশ দ্বারা তালিকাটি সাফীত হইয়াছে। আমরা স্বয়ং যে দই একটির কথা সবিশেষ জানি, তাহা তালিকার সঙ্গে মিলে নাই। যাহা হউক, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের খ্যাতির অনরোধে আমরা সেই তালিকাটি যথাৰ্থ বলিয়া গ্ৰহণ করিলাম। তাহা করিলেও হগলি জেলার সমদায় লোকের মধ্যে কয়জন বহবিবাহপরায়ণ পাওয়া যায় ? এই বাঙ্গালায় এক কোটি আশী লক্ষ হিন্দ বাস করে; ইহার মধ্যে আঠার শত জন ব্যক্তিও যে অধিবেদনপরায়ণ নহে, ইহা নিশিচত বলা যাইতে পারে। অর্থাৎ দশ সহস্র হিন্দির মধ্যে একজনও অধিবেদনপরায়ণ কি না। সলেদহ। এই অলপসংখ্যকদিগের সংখ্যাও যে দিন দিন কমিতেছে, সাবতঃই কমিতেছে, তাহাও সকলে জানেন। কাহারও কোন উদ্যোগ করতে হইতেছে না-কোন রাজব্যবস্থার আবশ্যক হইতেছে না-কোন পণিডতের ব্যবস্থার আবশ্যক হইতেছে না, আপনা হইতেই কমিতেছে। ইহা দেখিয়া অনেকেই ভরসা করেন যে, এই কুপ্রথার যাহা কিছ: অবশিষ্ট আছে, তাহা আপনা হইতেই কমিবে। এমত অবস্থায় বহ-বিবােহরপ রাক্ষসবধের জন্য বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ন্যায় মহারথীকে ধতোস্ত্ৰ দেখিয়া অনেকেরই ডন কুইক্সোটকে মনে পড়িবে। কিন্তু সে রাক্ষস বধ্য, তাহাতে সন্দেহ নাই। মািমষ হইলেও বাধ্য। আমরা দেখিয়াছি, এক এক জন বীরপরিষ, মত সাপ বা মত কক্কাের দেখিলেই তাহার উপর দই এক ঘা লাঠি মারিয়া যান; কি জানি, যদি ভাল করিয়া না মরিয়া থাকে। আমাদিগের বিবেচনায় ইহারা বড় সাবধান এবং পরোপকারী। যিনি এই মন্মষ রাক্ষসের মতাকালে দাই এক ঘা লাঠি মারিয়া যাইতে পরিবেন, তিনি ইহলোকে পাজ্য এবং পরলোকে সদগতি প্রাপ্ত হইবেন সন্দেহ নাই। কিন্তু একটা কথায় একটি গোলযোগ বোধ হয়। আমরা স্বীকার করিলাম, বহবিবাহ এ দেশে বড় চালিত-আপামর সাধারণ সকলেই বহলপত্নীক। জিজ্ঞাস্য এই এ প্রথা কি প্রকারে নিবারিত হওয়া সম্ভব ? বিদ্যাসাগর মহাশয় যে সকল উপায় অবলম্বন করিতে ইচ্ছক, বহবিবাহের অশাস্ত্রীয়তা প্রমাণ করা তাহার একটি প্রধান। বাস্তবিক এই প্রথা শাস্ত্রবিরাদ্ধ কি না, তাহা আমরা বলিতে পারি না; কেন না, পািব্বজন্মাভিজাত পণ্যবলে ধৰ্ম্মশাস্ত্র সম্পবন্ধে আমরা ঘোরতর মােখ। দেখা যাইতেছে যে, এ বিষয়ে মতভেদ আছে। তবে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের উদ্যম, পস্তকের আকার, এবং সমিতিশাস্ত্ৰোদ্ধত বচনের আড়ম্বর দেখিয়া আমরা তাঁহার পক্ষ অবলম্বন করিতে প্ৰস্তুত আছি। মনে করন, দেশশদ্ধ লোক সকলেই সবীকার করিল যে, বহবিবাহ প্রাচীন হিন্দীশাল-বিরাদ্ধ। তাহাতে কি বহবিবাহ প্রথা নিবারিত হইবে ? আমরা সে বিষয়ে বিশেষ সংশয়াবিলট। বঙ্গীয় হিন্দসমাজে যে সকল সামাজিক প্রথা প্রচলিত আছে, তাহা সকলই শাস্ত্রসক্ষমত বলিয়া প্রচলিত, এমত নহে। সে সমােজমধ্যে ধৰ্ম্মমশাস্ত্রপেক্ষা লোকাচার প্রবল। যাহা লোকাচারসম্মত, তাহা শাস্ত্রবিরদ্ধে হইলেও প্রচলিত; বাহা লোকাচারবিরাদ্ধ, তাহা শাস্ত্রসম্মত হইলে প্রচলিত হইবে না। বিদ্যাসাগর মহাশয় পকেবা একবার Sct