পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম গ্রী, নৰলা সপ্তশতীদিগের পঞ্চবর্ণপরিষগণও বহবিবাহপরায়ণ ছিলেন, ইহা অনমানে দোষ হয় না। কেন না, বহবিবাহ তৎকালে বিলক্ষণ প্রচলিত দেখা যাইতেছে। তবে এমন হইতে পারে যে, কান্যকুব্জীয়গণ বিশেষ সৱাহ্মণ বলিয়া সপ্তশতীগণও তাঁহাদিগকে কন্যাদানে উৎসক হইতেন, এই জন্য তাঁহারা অনেক বিবাহ করিয়াছিলেন; সপ্তশতীগণের পক্ব পরিষের মত বিবাহ করিবার কোন কারণ ছিল না। তেমন এদিকে পাঁচ জন মাত্র যে তাঁহাদিগের আদিপরে ষ, ইহা অসম্ভব। বরং ব্রাহ্মণ আসিতে একবার আরম্ভ হইলে, ক্ৰমে ক্ৰমে, একত্রে বা একে একে রাজগণের প্রয়োজনানসারে বা রাজপ্ৰসাদ লাভাকাঙক্ষায় অধিকসংখ্যক আসাই সম্ভব। অতএব ক্যান্যকুব্জ হইতে পঞ্চ ব্রাহ্মণ আসিবার পঝেব এক শত বৎসরের মধ্যেই বঙ্গদেশে ব্ৰাহ্মণদিগের প্রথম বাস, বিচারসঙ্গত বোধ হইতেছে। অর্থাৎ খ্ৰীষ্টীয় অস্টম শতাব্দীর পকেব বাঙ্গালা ব্ৰাহ্মণশান্য অনাৰ্য্যভূমি ছিল। পাবে কদাচিৎ কোন ব্রাহ্মণ বঙ্গদেশে যদি আসিয়া বাস কুরি কেন, তাহা গণনায়ের মধ্যে নহে। অষ্টম শতাব্দীর পথে বাঙ্গালায় ব্রাহ্মসমাজ 2ा । কেহ কেহ বলিতে পারেন যে, আদিশরের সময়ে যে কেবল সাড়ে সাত শত ঘর মাত্র ব্রাহ্মণ দেখিতেছি, তাহার কারণ এমত নহে যে, ব্ৰাহ্মণেরা সবলপদিন মাত্র বাঙ্গালায় আসিয়াছিলেন । বৌদ্ধধর্মের প্রাবল্যই ব্ৰাহ্মণসংখ্যার অলপতার কারণ। কিন্তু বঙ্গদেশে বৌদ্ধধৰ্ম্মেমরি যেরপে প্ৰাবল্য ছিল, মগধ, কান্যকুব্জাদি দেশেও তদ্রুপ বা তদাধিক ছিল। বৌদ্ধধৰ্ম্মেমর প্রাবল্য হেতু যদি বাঙ্গালায় ব্রাহ্মণসংখ্যা সবলপীভূত হইয়াছিল, তবে সমগ্র ভারতবর্ষে ও সেই কারণে ব্রাহ্মণবংশ লিপ্তপ্রায় হইয়াছিল, স্বীকার করিতে হইবে। কোন কোন আপত্তিকারী তাহাও স্বীকার করিতে পারেন। বলিতে পারেন যে, তখন সমস্ত ভারতেই অলপ ব্ৰাহ্মণ ছিল--এক্ষণে বদ্ধি পাইয়াছে। কিন্তু তাহা হইলে জিজ্ঞাসা করি, যদি পকিব হইতে বঙ্গে ব্রাহ্মণের বাস ছিল, তবে আদিশরের পকাবকালজাত কোন গ্রন্থে তাহার নিদর্শন পাওয়া যায় না কেন ? বরং প্রাচীন গ্রন্থাদিতে তথায় ব্রাহ্মণের বাস না থাকারই নিদশন পাওয়া যায় কেন ?* আমরা পাঠকদিগকে জিজ্ঞাসা করি যে, অষ্টম শতাব্দীর বা আদিশরের পকেবািবত্তী কোন বঙ্গবাসী গ্ৰন্থকারের নাম তাঁহারা সমরণ করিয়া বলিতে পারেন ? কল্পকভট্ট, জয়দেব, গোবদ্ধ নাচাৰ্য্য, হলায়ািধ, উদয়নাচায্য প্রভতি যাহার নাম করিবেন, সকলই আদিশরের পরবত্তীর্ণ। ভাটনারায়ণ ও শ্ৰীহষ তাঁহার সমকালিক। প্রাচীন আয্যজাতি যেখানে বাস করিয়াছেন, সেইখানেই ব্ৰাহ্মণগণ তাঁহাদিগের পান্ডিতের চিহ্নস্বরপ গ্রন্থাদি রাখিয়া গিয়াছেন। বাঙ্গালায় যখন ব্রাহ্মণ ছিলেন না, তখনকার প্রণীত পান্তকাদিও নাই। আমরা অবশ্য ইহা স্বীকার করি যে, অষ্টম শতাব্দীর পকেবাঁও আৰ্য রাজকুল বাঙ্গালায় ছিল, এবং তাহাদিগের আনষঙ্গিক ব্রাহ্মণও থাকিতে পারেন। সেরাপ অলপসংখ্যক ব্রাহ্মণ আমাদিগের আলোচনার বিষয় নহে। সেরাপ সকল জাতিই সকল দেশে থাকে। কালিফৰ্ণিয়াতেও অনেক চীন আছে। আমরা যে কথা সপ্রমাণ করিবার জন্য যত্ন পাইয়াছি, তাহা যদি সত্য হয়, তবে অনেকেই মনে করবেন যে, বাঙ্গালার ও বাঙ্গালীর বড় লাঘব হইল। আমরা আধনিক বলিয়া বাঙ্গালীজাতির আগৌরব করা হইল; আমরা প্রাচীন জাতি বলিয়া আধনিক ইংরেজীদিগের সমখে সম্পদ্ধা করি।--তা না হইয়া আমরাও আধনিক হইলাম। আমরা দেখিতেছি না যে, অগৌরব কিছ হইল। আমরা সেই প্রাচীন আৰ্য্যজাতিসম্প্ৰভুতই রহিলাম-বাঙ্গালায় যখন আসি না কেন, আমাদিগের পঞ্চবর্ণপরিষগণ সেই গৌরবান্বিত আয্য। বরং গৌরবের বদ্ধিই হইল। আৰ্য্যগণ বাঙ্গালায় তােদশ কিছ মহৎ কীত্তি রাখিয়া যান নাইআৰ্য্যকীত্তিভূমি উত্তর পশ্চিমাঞ্চল। এখন দেখা যাইতেছে যে, আমরা সে কীত্তি ও যশোরও উত্তরাধিকারী। সেই কীৰ্ত্তিমন্ত পরিষগণই আমাদিগের পঞ্চবর্ণপরিষ। দেবে, চোবে, পাঁড়ে, তেওয়ারীর মত আমরাও ভারতীয় আযগণের প্রাচীন যশের ভাগী বটে।

  • আমাদের আর একটি কলঙ্কের লাঘব হইতেছে। আদিশরের সময়ে মোটে সাড়ে সাত শত ঘর ব্রাহ্মণ ছিল। বল্লালের সময় সেই সাড়ে সাত শত ঘরের বংশ এবং পঞ্চ ব্রাহ্মণের বংশ একাদশ
  • বঙ্গে ব্ৰাহ্মণাধিকার প্রথম প্রস্তাব দেখ।

OR.