পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-বাঙ্গালার ইতিহাস সম্পবন্ধে কয়েকটি কথা সতের জন্য অশ্বারোহীতে বাঙ্গালা জয় করিয়াছিল, এ উপন্যাসের ঐতিহাসিক প্রমাণ কি ? মিনহাজ উদ্দীন বাঙ্গালা জয়ের ষাট বৎসর পরে এই এক উপকথা লিখিয়া গিয়াছেন। আমি যদি আজ বলি যে, কাল রাত্রে আমি ভূত দেখিয়াছি, তোমরা তাহা কেহ বিশ্বাস কর না। কেন না, অসম্ভব কথা। আর মিনহাজ উদ্দীন তাহা অপেক্ষাও অসম্ভব কথা লিখিয়া গিয়াছেন, তোমরা অম্লানবদনে বিশ্বাস করা। আমি জীবিত লোক, তোমাদের কাছে পরিচিত, আমার কথা বিশ্বাস কর না, কিন্তু সে সাত শত বৎসর মরিয়া গিয়াছে, সে বিশ্বাসী কি অবিশ্বাসী কিছই জান না, তথাপি তুমি তাহার কথায় বিশ্বাস করা। আমি বলিতেছি, আমি নিজে ভূত দেখিয়াছি, আমার কথায় বিশ্বাস করিবে না, অথচ ভূত আমার প্রত্যক্ষদস্টি বলিয়া বলিতেছি! আর মিনহাজ, উদ্দীনের প্রত্যক্ষদলটি নহে, জনশ্রতি মাত্র। জনশ্রুতি কি সবকপোলকল্পিত, তাহাতেও অনেক সন্দেহ। আমার প্রত্যক্ষদন্টিতে তোমার বিশ্বাস নাই, কিন্তু সেই গোহিত্যাকারী, ক্ষৌরিতাচিকুর, মসলমানের সবকপোল্যকলাপনের উপর তোমার বিশ্বাস। এ বিশ্বাসের আর কোন কারণ নাই, কেবল এই মাত্র কারণ যে, সাহেবরা সেই মিনহাজ উদ্দীনের কথা অবলম্পবন করিয়া ইংরেজিতে ইতিহাস লিখিয়াছেন। তাহা পড়িলে চাকরী হয়! বিশ্বাস না করিবে কেন ? তুমি বলিবে যে, তোমার ভূতের গলপ বিশ্বাস করি না, তাহার কারণ এই যে, ভূত প্রাকৃতিক নিয়মের বিরাদ্ধ। আরিসটটল হইতে মিল পৰ্যন্ত সকলে প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে বিশ্বাস করিতে নিষেধ করিয়াছেন। ভাই বাঙ্গালি! তোমায় জিজ্ঞাসা করি, সতের জন লোকে লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালীকে বিজিত করিল, এইটাই কি প্রাকৃতিক নিয়মের অন্যমত ? যদি তাহা না হয়, তবে হে চাকরীপ্রিয়! তুমি কেন এ কথায় বিশ্বাস করা ? বাস্তবিক সপ্তদশ অশ্বারোহী লইয়া বখতিয়ার খিলিজি যে বাঙ্গালা জয় করেন নাই তাহার ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে। সপ্তদশ অশ্বারোহী দরে থাকুক, বখতিয়ার খিলজি বহতর সৈন্য লইয়া বাঙ্গালা সম্পণেরপে জয় করিতে পারে নাই। বখতিয়ার খিলজির পর সেনবংশীয় রাজগণ পািকব বাঙ্গালায় বিরাজ করিয়া আদ্ধেক বাঙ্গালা শাসন করিয়া আসিলেন। তাহার ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে। উত্তরবাঙ্গালা, দক্ষিণবাঙ্গালা, কোন অংশই বখতিয়ার খিলিজি জয় করিতে পারে নাই। লক্ষণাবতী নগরী এবং তাহার পরিপাশ্বাস্থ প্রদেশ ভিন্ন বখতিয়ার খিলিজি সমস্ত সৈন্য লইয়াও কিছ জয় করিতে পারে নাই। সপ্তদশ অশ্বারোহী লইয়া বখতিয়ার খিলিজি বাঙ্গালা জয় করিয়াছিল, এ কথা যে বাঙ্গালীতে বিশ্বাস করে, সে কুলাঙ্গার। বাঙ্গালার ইতিহাসের ক্ষেত্রে এইরূপ সৰ্ব্বত্র। ইতিহাসে কথিত আছে, পলাশির যন্ধে জন দই চারি ইংরেজ ও তৈলঙ্গসেনা সহস্ৰ সহস্ৰ দেশী সৈন্য বিনষ্ট করিয়া অদ্ভুত রণজয় করিল। কথাটি উপন্যাসমাত্রে। পলাশিতে প্ৰকৃত যাদ্ধ হয় নাই। একটা রঙ তামাসা হইয়াছিল। আমার কথায় বিশ্বাস না হয়, গোহত্যিকারী ক্ষৌরিতাচিকুর মসলমানের লিখিত সএর মতাখখেরীন নামক গ্রন্থ পড়িয়া দেখ। নীতিকথায় বাল্যকালে পড়া আছে, এক মনষ্য এক চিত্র লিখিয়াছিল। চিত্রে লেখা আছে, মনষ্য সিংহকে জােতা মারিতেছে। চিত্রকর মনষ্য এক সিংহকে ডাকিয়া সেই চিত্র দেখাইল । সিংহ বলিল, সিংহেরা যদি চিত্র করিতে জনিত, তাহা হইলে চিত্র ভিন্ন প্রকার হইত। বাঙ্গালীরা কখন ইতিহাস লেখে নাই। তাই বাঙ্গালীর ঐতিহাসিক চিত্রের এ দশা হইয়াছে। বাঙ্গালার ইতিহাস নাই, যাহা আছে, তাহা ইতিহাস নয়, তাহা কতক উপন্যাস, কতক বাঙ্গালার বিদেশী বিধৰ্ম্মী অসার পরপীড়কদিগের জীবনচরিতমাত্র। বাঙ্গালার ইতিহাস চাই, DDDBBD DBBBB DB DDD S S BD DBB তুমি লিখিবে, আমি লিখিব, সকলেই লিখিবে। যে বাঙ্গালী, তাহাকেই লিখিতে হইবে। মা যদি মারিয়া যান, তবে মারা গলপ করিতে কত আনন্দ । আর এই আমাদিগের সব্বসাধারণের মা জন্মভূমি বাঙ্গালাদেশ, ইহার গলপ করিতে কি আমাদিগের আনন্দ নাই ? আইস, আমরা সকলে মিলিয়া বাঙ্গালার ইতিহাসের অন্যাসন্ধান করি। যাহার যত দর। সাধ্য, পুৰুষক ক্ষত্র কষ্ট যোজনবাপী বীপ নিৰ্মাণ করে। একের কাজ নয়, সকলে মিলিয়া করিতে অনেকে না বঝিলে না বুঝিতে পারেন যে, কোথায় কোন পথে অন্যসন্ধান করিতে হইবে। অতএব আমরা তাহার দই একটা উদাহরণ দিতেছি। 3 &-SS bo6