পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী মধ্যে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্ৰিয়-বৈশ্যভেদ। এটি ব্যবসায়ভেদেই উৎপন্ন হইয়াছিল। এখন আমরা ইউরোপে দেখিতে পাই যে, কোন কোন কুলীনবংশ পরিষানক্রমে রাজকায্যে লিপ্ত। কোন সম্প্রদায় পরিষানক্রমে বাণিজ্য করিতেছেন। কোন সম্প্রদায় পরষানক্রমে কৃষিকাৰ্য্য বা মজারী করিতেছে। কিন্তু ইউরোপে এক সম্প্রদায়ের লোক অন্য সম্প্রদায়ের ব্যবসায় গ্রহণ করার পক্ষে কোন বিঘা নাই। এবং সচরাচর এরপে ব্যবসায়ান্তর গ্রহণ করিয়া থাকে। কিন্তু ভারতবর্ষের প্রাচীন আয্যেরা বিবেচনা করিতেন যে, যাহার পিতৃপিতামহ যে ব্যবসায় করিয়াছে, সে সেই ব্যবসাতেই সদক্ষ হয় তাহাতে সংবিধা আছে বলিয়া লোকে প্রথমতঃ ইচ্ছা করিয়া পৈতৃপিতামহক ব্যবসায় অবলম্বন করিত। শেষ উচ্চব্যবসায়ীদিগের নিকট নীচব্যবসায়ীরা ঘণ্য হওয়াতেই হউক অথবা ব্ৰাহ্মণদিগের প্রণীত দঢ়বদ্ধ সমাজনীতির বলেই হউক, বিদ্যাব্যবসায়ী যাদ্ধব্যবসায়ীর সঙ্গে মিশিল না। যাদ্ধব্যবসায়ী বণিকের সঙ্গে মিশিল না। এইরপে তিনটি আৰ্য্যবর্ণের সন্টি। জাতিভেদ উৎপত্তির দ্বিতীয় রােপ শািন্দ্রদিগের বিবরণে দেখা যায়। তাহা উপরে বাবাইয়াছি। শ্রেষ্ঠ ব্যবসায় সকল আয্যেরা আপনার হাতে রাখিল, নীচব্যবসায় শদ্রের উপর পড়িল। বোধ হয়, প্রথম কেবল আয্যে ও শদ্রে ভেদ জন্মে; কেন না, এ ভেদ সবাভাবিক। শদ্রেরা যেমন নতেন নতেন আৰ্যসমাজভুক্ত হইতে লাগিল, তেমনি পথিক বৰ্ণ বলিয়া, আৰ্য হইতে তফাত রহিল। বৰ্ণ শব্দই ইহার প্রমাণ। বৰ্ণ অর্থে রঙ। পর্ক্সেবাই দেখাইয়া আসিয়াছি যে, আয্যেরা গৌরী, অনায্যেরা “কৃষ্ণত্বচ”। তবে গৌর কৃষ্ণ দাইটি বর্ণ পাওয়া গেল। সেই প্রভেদ প্রথম আৰ্য্য ও শব্দ্র, এই দাইটি বণ ভিন্ন হইল। একবার সমাজের মধ্যে থাক আরম্ভ হইলে, আৰ্য্যদিগের হস্তে ক্রমেই থাক বাড়িতে থাকিবে। তখন আৰ্য্যদিগের মধ্যে ব্যবসায়ভেদে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্ৰিয়, বৈশ্য, তিনটি শ্রেণী পথক হইয়া পড়িল, সেই ভেদ বাবাইবার জন্য পৰবৰ্ধপরিচিত “বৰ্ণ” নােমই গহীত হইল। তার পর আয্যে আয্যে, আয্যে অনায্যে বৈধ বা অবৈধ সংসগো সঙ্করজাতিসকল উৎপন্ন হইতে লাগিল। সঙকরে সঙকরে মিলিয়া আরও জাতিভেদ বাড়িল। জাতিভেদের তৃতীয় উৎপত্তি এইরপে। এক্ষণে আমরা বাঙ্গালী শব্দ্রদিগের মধ্যে অনাৰ্য্যত্বের অন্যসন্ধান করিব। BDD BBBBDBYLDDBD DDD BD বাঙ্গালার মধ্যে মাল ও মালো বলিয়া দাইটি জাতি আছে। রাজমহল জেলার অন্তগত মালপাহাড়িয়া বলিয়া একটি অনাৰ্য্য জাতি আছে; তাহারা কোন আৰ্যভাষা কহো না। কিন্তু বাঙ্গালী মালেরা বাঙ্গালা কথা কয় এবং বাঙ্গালী বলিয়া গণ্য। জেনেরাল কানিংহ্যাম প্রাচীন রোমীয় লেখক প্লিনি হইতে দাইটি বাক্য উদ্ধত করিয়া দেখাইয়াছেন যে, তখনও মালেবা বলিয়া জাতি ভারতবর্ষে ছিল। পরাণাদিতে মালবের প্রসঙ্গ ভুয়োভুয়ঃ দেখা যায় এবং মেঘদতে মালবদিগের নাম উল্লেখ আছে। অতএব এখন যেমন মালজাতি আছে, প্রাচীন মালজাতিও সেইরূপ ছিল। কিন্তু প্লিনি যে ভাবে বৰ্ণনা করিয়াছেন, তাহাতে বোধ হয় যে, মালেরা আৰ্যজাতি হইতে একটি পথক জাতি ছিল। জেনেরল কানিংহ্যাম বলেন, এই প্লিনির লিখিত মালেরা টলেমিপ্রণীত মন্ডলজাতি। টলেমিলিখিত মন্ডলজাতি আধনিক মন্ড কোলজাতি বলিয়া অনমিত হইয়াছে। বিভারলি সাহেব অনামান করেন যে, ঐ প্লিনির লিখিত মালজাতি এখনকার বাঙ্গালী মাল। এখন বাঙ্গালার বাহিরে যেখানে মাল নাম পাই, সেইখানে সেইখানে অনাযাদিগকেই দেখিতে পাই। কান্দ নামক অতি অসভ্য অনাৰ্য্যজাতির দেশের বিভাগকে মাল বা মালো বা মালিয়া বলে। অনাৰ্য্যপ্রধান মানভূম প্রদেশকে মালভূম বা মল্লভূমি বলে। রাজমহলের দ্রাবিড়বংশীয় অনায্য পাহাড়িদিগকে মালের জাতি বলে। উড়িষ্যার কিউবািড় নামক আরণ্য রাজ্যে ভুইয়া নামক এক অনায্য জাতি আছে, তাহদের একটি থাকের নাম মালভূইয়া। বকানন হ্যামিলটন ভাগলপার জেলার ভিতরে বন্য জাতির মধ্যে মালের

  • বঙ্গদশন, ১২৮৮), বৈশাখ।

Dalton, p. 299. Dalton, p. 145. 巴总曾