পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্রবন্ধ-বাজলা ভাষা এমত বোধ হয় না। কেন না, আমাদের স্থলে বদ্ধিতে ইহাই উপলব্ধি হয় যে, যাহা বঝিতে না পারা যায়, তাহা হইতে কিছদ শিক্ষালাভ হয় না। আমাদের এইরূপ বোধ আছে যে, সৱল ভাষাই শিক্ষাপ্রদ। ন্যায়রত্ন মহাশয় কেন সরল ভাষাকে শিক্ষাপ্রদ নহে বিবেচনা করিয়াছেন, তাহা আমরা অনেক ভাবিয়া স্থির করিতে পারিলাম না। বোধ হয়, বাল্যসংস্কার ভিন্ন আর কিছরই সরল ভাষার প্রতি তাঁহার বীতরাগের কারণ নহে। আমরা আরও বিস্মিত হইয়া দেখিলাম যে, তিনি স্বয়ং যে ভাষায় বাঙ্গালাসাহিত্যবিষয়ক প্রস্তাব লিখিয়াছেন, তাহাও সরল প্রচলিত ভাষা। টেকচাঁদী ভাষার সঙ্গে এবং তাঁহার ভাষার সঙ্গে কোন প্রভেদ নাই, প্রভেদ কেবল এই যে, টেকচাঁদে রঙ্গরস আছে, ন্যায়রত্নে কোন রঙ্গরস নাই। তিনি যে বলিয়াছেন যে, পিতা পত্রে একত্র বসিয়া অসঙ্কুচিত মাখে টেকচাঁদী ভাষা পড়িতে পারা যায় না, তাহার প্রকৃত কারণ রঙ্গরস আছে। বাঙ্গালাদেশে পিতা পত্রে একত্র বসিয়া রঙ্গরস পড়িতে পারে না। সরলচিত্ত অধ্যাপক অতটকু বঝিতে না পারিয়াই বিদ্যাসাগরী ভাষার মহিমা কীত্তনে প্রবত্ত হইয়াছেন। ভাষা হইতে রঙ্গরস উঠাইয়া দেওয়া যদি ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয়দিগের মত হয়, তবে তাঁহারা সেই বিষয়ে যত্নবান হউন। কিন্তু তাহা বলিয়া অপ্রচলিত ভাষাকে সাহিত্যের ভাষা করিতে চেন্টা করিবেন না। ন্যায়রত্ন মহাশয়ের মত সমালোচনায় আর অধিক কাল হরণ করিবার আমাদিগের ইচ্ছা নাই। আমরা এক্ষণে সশিক্ষিত অথবা নব্য সম্প্রদায়ের মত সমালোচনায় প্রবত্ত হইব। এই সম্প্রদায়ের সকলের মত একরােপ নহে। ইহার মধ্যে এক দল এমন আছেন যে, তাঁহারা কিছল বাড়াবাড়ি করিতে প্ৰস্তৃত। তন্মধ্যে বাবা শ্যামাচরণ গঙ্গোপাধ্যায়। গত বৎসর কলিকাতা রিভিউতে বাঙ্গালা ভাষার বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিখিয়াছিলেন। প্রবন্ধটি উৎকৃষ্ট। তাঁহার মত গলি অনেক স্থলে সসঙ্গত এবং আদরণীয়। অনেক স্থলে তিনি কিছ বেশী গিয়াছেন। বহ,বচন জ্ঞাপনে গণ শব্দ ব্যবহার করার প্রতি তাঁহার কোপদন্টি। বাঙ্গালায় লিঙ্গভেদ তিনি মানেন না। পথিবী যে বাঙ্গালায় স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দ, ইহা তাঁহার অসহ্য। বাঙ্গালায় সন্ধি তাঁহার চক্ষাংশলৈ। বাঙ্গালায় তিনি “জনৈক” লিখিতে দিবেন না। ত্ব প্রত্যয়ন্ত এবং য প্রত্যয়ান্ত শব্দ ব্যবহার করিতে দিবেন না। সংস্কৃত সংখ্যাবাচক শব্দ, যথা-একাদশ বা চত্বারিংশৎ বা দই শত ইত্যাদি। বাঙ্গালায় ব্যবহার করিতে দিবেন না। ভ্রাতা, কল্য, কৰ্ণ, সাবণ, তাম, পত্র, মন্তক, অশ্ব ইত্যাদি শব্দ বাঙ্গালা ভাষায় ব্যবহার করিতে দিবেন না। ভাই, কাল, কান, সোণা, কেবল এই সকল শব্দ ব্যবহার হইবে। এইরুপ তিনি বাঙ্গালাভাষার উপর অনেক দৌরাত্ম্য করিয়াছেন। তথাপি তিনি এই প্রবন্ধে বাঙ্গালাভাষা সম্পবন্ধে অনেকগালিন সারগভর্ণ কথা বলিয়াছেন। বাঙ্গালা লেখকেরা তাহা সন্মরণ রাখেন, ইহা আমাদের ইচ্ছা। শ্যামাচরণবােব বলিয়াছেন এবং সকলেই জানেন যে, বাঙ্গালা শব্দ ত্ৰিবিধ। প্রথম, সংস্কৃতমলক শব্দ, যাহার বাঙ্গালায় রপোন্তর হইয়াছে, যথা-গহ হইতে ঘর, ভ্রাতা হইতে ভাই। দ্বিতীয়, সংস্কৃতমালক শব্দ, যাহার রপোন্তর হয় নাই। যথা-জল, মেঘ, সােয্য। তৃতীয়, যে সকল শব্দের সংস্কৃতের সঙ্গে কোন সম্প্রবন্ধ নাই। প্রথম শ্রেণীর শব্দ সম্পবন্ধে তিনি বলেন যে, রূপান্তরিত প্রচলিত সংস্কৃতমালক শব্দের পরিবত্তে কোন স্থানেই অরপোন্তরিত মল সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করা কীৰ্ত্তব্য নহে, যথামাথার পরিবত্তে মস্তক, বামনের পরিবত্তে ব্ৰাহ্মণ ইত্যাদি ব্যবহার করা কীৰ্ত্তব্য নহে। আমরা বলি যে, এক্ষণে বামনও যেমন প্রচলিত, ব্রাহ্মণ সেইরূপ প্রচলিত। পাতাও যেরপে প্রচলিত, পত্র ততদার না হউক, প্রায় সেইরূপ প্রচলিত। ভাই যেরূপ প্রচলিত, ভ্ৰাতা ততদার না হউক, প্রায় সেইরােপ প্রচলিত। যাহা প্রচলিত হইয়াছে, তাহার উচ্ছেদে কোন ফল নাই এবং উচ্ছেদ সম্ভবও নহে। কেহ যত্ন করিয়া মাতা, পিতা, ভ্রাতা, গাহ, তাম বা মন্তক ইত্যাদি শব্দকে বাঙ্গালা BDD DBDB DB BBDB BDB DDD S DDBD DDDBBMB uDDDD DDD BDB DBD BBBL দেশে কোন চাষা আছে যে, ধান, পঙ্করিণী, গহ বা মস্তক ইত্যাদি শব্দের অর্থ বঝে না। যদি সকলে বাঝে, তবে কি দোষে এই শ্রেণীর শব্দগলি বাধাহা ? বরং ইহাদের পরিত্যাগে ভাষা কিয়দংশে ধনশন্য হইবে মাত্র। নিম্পকারণ ভাষাকে ধনশন্যা করা কোন ক্রমে বাঞ্ছনীয় নহে। আর কতকগালি এমত শব্দ আছে যে, তাহদের রূপান্তর ঘটিয়াছে আপাতত বোধ হয়, কিন্তু বান্তবিক রূপান্তর ঘটে নাই, কেবল সাধারণের উচ্চারণের বৈলক্ষণ্য ঘাঁটিয়াছে। সকলেই উচ্চারণ OS