পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰঙ্কিম রচনাবলী আসিয়াছি, অনেক উচ্চ শ্রেণীস্থ মনষ্যের নৈমিত্তিক বিবাহে বিশেষ আদর। যাঁহারা আমাদিগের ন্যায় সসভ্য, সতরাং পশ্যবিত্ত, তাঁহারই এ বিষয়ে আমাদিগের অন্যাকরণ করিয়া থাকেন। আমার এমনও ভরসা আছে যে, কালে মনষ্যজাতি আমাদিগের ন্যায় সসভ্য হইলে, নৈমিত্তিক বিবাহ তাহদের মধ্যে সমাজসম্মত হইবে। অনেক মনষ্যেপন্ডিত তৎপক্ষে প্রবত্তিদায়ক গ্রন্থাদি লিখিতেছেন। তাঁহারা সবজাতিহিতৈষী, সন্দেহ নাই। আমার বিবেচনায়, সম্পমানবদ্ধ নাথ তাঁহাদিগকে এই ব্যাঘ্র-সমাজের অনরারি মেম্বর নিযক্ত করিলে ভাল হয়। ভরসা করি, তাঁহারা সভাস্থ হইলে, আপনারা তাঁহাদিগকে জলযোগ করিবেন না। কেন না, তাঁহারা আমাদিগের ন্যায় নীতিজ্ঞ এবং লোকহিতৈষী । মনকেষ্যমধ্যে বিশেষ এক প্রকার নৈমিত্তিক বিবাহ প্রচলিত আছে, তাহাকে মৌদ্রিক বিবাহ বলা যাইতে পারে। এ প্রকার বিবাহ সম্পন্নাথ মানষি মাদ্রার দ্বারা কোন মানষীর করতল সংস্পষ্ট করে। তাহা হইলেই মোদ্রিক বিবাহ সম্পন্ন হয়। মহাদংষ্ট্ৰী। মাদ্রা কি ? বহল্লাঙ্গল। মাদ্রা মনষ্যদিগের পজ্যে দেবতাবিশেষ। যদি আপনাদিগের কৌতহল থাকে, তবে আমি সবিশেষ সেই মহাদেবীর গণি কীৰ্ত্তন করি। মনষ্যে যত দেবতার পজা করে, তন্মধ্যে ইহার প্রতিই তাহদের বিশেষ ভক্তি। ইনি সাকারা। সবণ, রৌপ্য এবং তামে ইহার প্রতিমা নিশ্চিমত হয়। লৌহ, টিন এবং কাঠে৷ ইহার মন্দির প্রস্তুত করে। রেশম, পশম, কাপাস, চশম প্রভৃতিতে ইহার সিংহাসন রচিত হয়। মানষিগণ রাত্রিদিন ইহার ধ্যান করে, এবং কিসে ইহার দশন প্রাপ্ত হইবে, সেই জন্য সব্বদা শশব্যন্ত হইয়া বেড়ায়। যে বাড়ীতে টাকা আছে জানে, অহরহ সেই বাড়ীতে মনষ্যেরা যাতায়াত করিতে থাকে,-এমনই ভক্তি, কিছতেই সে বাড়ী ছাড়ে না-মারিলেও যায় না। যে এই দেবীর পরোহিত, অথবা যাহার গহে ইনি অধিষ্ঠান করেন, সেই ব্যক্তি মনষ্যেমধ্যে প্রধান হয়। অন্য মনষ্যেরা সব্বদাই তাঁহার নিকট যক্ত করে স্তব ঘুতি করিতে থাকে। যদি মাদ্রাদেবীর অধিকারী একবার তাঁহাদের প্রতি কটাক্ষ করে, তাহা হইলে তাঁহারা চরিতাৰ্থ হয়েন। দেবতাও বড় জাগ্রত। এমন কাজই নাই যে, এই দেবীর অনগ্রহে সম্পন্ন হয় না। পথিবীতে এমন সামগ্রীই নাই যে, এই দেবীর বরে পাওয়া ষায় না। এমন দম্পকম্পমাই নাই যে, এই দেবীর উপাসনায় সম্পন্ন হয় না। এমন দোেষই নাই যে, ইহার অন্যকম্পায় ঢাকা পড়ে না। এমন গণই নাই যে, তাঁহার অনগ্রহ ব্যতীত গণ বলিয়া মনষ্যসমাজে প্রতিপন্ন হইতে পারে; যাহার ঘরে ইনি নাই—তাহার। আবার গণ কি ? যাহার ঘরে ইনি বিরাজ করেন, তাহার। আবার দোষ কি ? মনকেষ্যসমাজে মাদ্রামহাদেবীর অন্যগহীত ব্যক্তিকেই ধাৰ্ম্মিক বলে- মাদ্রাহীনতাকেই অধৰ্ম্ম বলে। মাদ্রা থাকিলেই বিদ্বান হইল। মাদ্রা যাহার নাই, তাহার বিদ্যা থাকিলেও, মনষ্যশাস্ত্রানসারে সে মািখ বলিয়া গণ্য হয়। আমরা যদি “বড় বাঘ” বলি, তবে আমিতোদর, মহাদংষ্ট্ৰা প্রভৃতি প্রকান্ডাকার মহাব্যাঘ্রগণকে বঝাইবে। কিন্তু মনষ্যালয়ে “বড় মানষ” বলিলে সেরাপ অৰ্থ হয় না-আট হাত বা দশ হাত মানষ বাঝায় না, যাহার ঘরে এই দেবী বাস করেন, তাহাকেই “বড় মানষ” বলে। যাহার ঘরে এই দেবী স্থাপিতা নহেন, সে পাঁচ হাত লক্ষবা হইলেও তাহাকে “ছোট লোক” বলে। মাদ্রাদেবীর এইরূপ নানাবিধ গণগান শ্রবণ করিয়া আমি প্রথমে সঙ্কলপ করিয়াছিলাম যে, মনষ্যালয় হইতে ইহাকে আনিয়া ব্যাঘালয়ে স্থাপন করিব। কিন্তু পশ্চাৎ যাহা শানিলাম, তাহাতে বিরত হইলাম। শানিলাম যে, মাদ্ৰাই মনষ্যজাতির যত অনিমেটর মািল। ব্যান্নাদি প্রধান পশরা। কখন প্ৰবজাতির হিংসা করে না, কিন্তু মনষ্যেরা সব্বদা আত্মজাতির হিংসা করিয়া থাকে। মাদ্রাপজাই ইহার কারণ। মাদ্রার লোভে, সকল মনষ্যেই পরস্পরের অনিস্ট চেন্টায় রত। প্রথম বক্তৃতায় বলিয়াছিলাম যে, মনষ্যেরা সহস্ৰে সহস্রে প্রান্তরমধ্যে সমবেত হইয়া পরস্পরকে হানন করে। মাদ্রাই তাহার কারণ। মাদ্রাদেবীর উত্তেজনায় সব্বদাই মনষ্যেরা পরস্পর হত, আহত, পীড়িত, অবরুদ্ধ, অপমানিত, তিরস্কৃত করে। মনষ্যলোকে বোধ হয়, এমত অনিস্টই নাই যে, এই দেবীর অনগ্রহপ্রেরিত নহে। ইহা আমি জানিতে পারিয়া, মাদ্রাদেবীর উদ্দেশে প্ৰণাম করিয়া তাঁহার পাজার অভিলাষ ত্যাগ করিলাম। কিন্তু মনয্যেরা ইহা বঝে না। প্রথম বক্তৃতাতেই বলিয়াছি যে, মনষ্যেরা অত্যন্ত অপরিণাম