পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী সভ্যতার উন্নতি হইবে না। জ্ঞান আপনি জন্মে না; অতিশয় শ্রমলভ্য। কেহ যদি বিদ্যালোচনায় রত না হয়, তবে সমাজমধ্যে জ্ঞানের প্রকাশ হইবে না। কিন্তু বিদ্যালোচনার পক্ষে অবকাশ আবশ্যক। বিদ্যালোচনার পকেব। উদারপোষণ চাই ; অনাহারে কেহ জ্ঞানালোচনা করিবে না। যদি সকলকেই আহারান্বেষণে ব্যতিব্যস্ত থাকিতে হয়, তবে কাহারও জ্ঞানালোচনার অবকাশ হয় না। অতএব সভ্যতার সন্টির পক্ষে প্রথম আবশ্যক যে, সমাজমধ্যে একটি সম্প্রদায় শারীরিক শ্রম ব্যতীত আত্মভরণপোষণে সক্ষম হইবে। অন্যে পরিশ্রম করবে, তাঁহারা বসিয়া বিদ্যালোচনা করবেন। যদি শ্রমজীবীরা সকলেই কেবল আত্মভরণপোষণের যোগ্য খাদ্য উৎপন্ন করে, তা হইলে এরাপ ঘটিবে না; কেন না, যাহা জন্মিবে, তাহা শ্রমোপজীবীদের সেবায় যাইবে, আর কাহারও জন্য থাকিবে না। কিন্তু যদি তাহারা আত্মভরণপোষণের প্রয়োজনীয় পরিমাণের অপেক্ষা অধিক উৎপাদন করে, তবে তাহাদিগের ভরণপোষণ বাদে কিছ. সঞ্চিত হইবে। তদ্দ্বারা শ্রমবিরত ব্যক্তিরা প্রতিপালিত হইয়া বিদ্যানশীলন করিতে পারেন। তখন জ্ঞানের উদয় সম্ভব। উৎপাদকের খাইয়া পরিয়া যাহা রহিল, তাহাকে সঞ্চয় বলা যাইতে পারে। অতএব সভ্যতার উদয়ের পকেব। প্রথমে আবশ্যক-সামাজিক ধনসম্প্রচয়। কোন দেশে সামাজিক ধনসম্প্রচয় হয়, কোন দেশে হয় না। যেখানে হয়, সে দেশ সভ্য হয় । যে দেশে হয় না, সে দেশ অসভা থাকে। কি কি কারণে দেশবিশেষে আদিম ধনসঞ্চয় হইয়া থাকে? দাইটি কারণ সংক্ষেপে নিদিষ্ট করা যাইতে পারে। প্রথম কারণ, ভূমির উর্বরতা। যে দেশের ভূমি উকবােরা, সে দেশে সহজে অধিক শস্য উৎপন্ন হইতে পারে। সতরাং শ্রমোপজীবীদিগের ভরণপোষণের পর আরও কিছ অবশিষ্ট থাকিয়া সঞ্চিত হইবে। দ্বিতীয় কারণ, দেশের উষ্ণতা বা শীতলতা। শীতোষ্ণতার ফল দ্বিবিধ। প্রথমতঃ, যে দেশ উষ্ণ, সে দেশের লোকের অলপাহার আবশ্যক, শীতল দেশে অধিক আহার আবশ্যক। এই কথা কতকগলি স্বাভাবিক নিয়মের উপর নিভাির করে, তাহা এই ক্ষদ্র প্রবন্ধে লিখিবার স্থান নাই; আমরা এতদংশ বকলের গ্রন্থের অন্যবিত্তী হইয়া লিখিতেছি; কোঁত হলবিশিষ্ট পাঠক সেই গ্রন্থ দেখিবেন। যে দেশের লোকের সাধারণতঃ অলপ খাদ্যের প্রয়োজন, সে দেশে শীঘ্ৰ যে সামাজিক ধনসঞ্চয় হইবে, তদ্বিষয়ে সন্দেহ নাই। উষ্ণতার দ্বিতীয় ফল, বিকল এই বলেন যে, তাপাধিক্য হেতু লোকের শারীরিক তাপজনক খাদ্যের তত আবশ্যক হয় না। যে দেশ শীতল, সে দেশে শারীরিক তাপজনক খাদ্যের অধিক আবশ্যক। শারীরিক তাপ শ্বাসগত বােয়র অম্লজানের সঙ্গে শরীরস্থ দ্রব্যের কাব্বানের রাসায়নিক সংযোগের ফল। অতএব যে খাদ্যে কাব্বান অধিক আছে, তাহাই তাপজনক ভোজ্য। মাংসাদিতেই অধিক কাব্বান। অতএব শীতপ্রধান দেশের লোকের মাংসাদির বিশেষ প্রয়োজন। উষ্ণদেশে মাংসাদি অপেক্ষাকৃত অনাবশ্যক-বনিজের অধিক আবশ্যক। বনজ সহজে প্রাপ্য-কিন্তু পশহনন কাল্টসাধ্য, এবং ভোজ্য পশতু, দলভ। অতএব উষ্ণদেশের খাদ্য অপেক্ষাকৃত সালভ। খাদ্য সলভ বলিয়া শীঘ্র ধনসঞ্চয় হয়। ভারতবর্ষ উষ্ণদেশ, এবং তথায় ভূমিও উব্বারা। সতরাং ভারতবর্ষে অতি শীঘ্র ধনসঞ্চয় হওয়াই সম্ভব। এই জন্য ভারতবর্ষে অতি পৰিবকালেই সভ্যতার অভু্যদয় হইয়াছিল। ধনাধিক্য হেতু, একটি সম্প্রদায় কায়িক পরিশ্রম হইতে অবসর লইয়া, জ্ঞানালোচনায় তৎপর হইতে পারিয়াছিলেন। তাঁহাদিগের অভিজাত ও প্রচারিত জ্ঞানের কারণেই ভারতবষের সভ্যতা। পাঠক বঝিয়াছেন যে, আমরা ব্ৰাহ্মণদিগের কথা বলিতেছি। কিন্তু এইরুপ প্রথমকালিক সভ্যতাই ভারতীয় প্রজার দািরদন্টের মােল। যে যে নিয়মের বশে অকালে সভ্যতা জলিময়াছিল, সেই সেই নিয়মের বশেই তাহার অধিক উন্নতি কোন কালেই হইতে পারিল না। -সেই সেই নিয়মের বশেই সাধারণ প্রজার দন্দশা ঘটিল। প্ৰভাতেই মেঘাচ্ছন্ন। বালতর ফলবান হওয়া ভাল নহে। যখন জনসমাজে ধনসম্পgয় হইল, তখন কাজে কাজেই সমাজ দ্বিভাগে বিভক্ত হইল। এক ভাগ শ্রম করে; এক ভাগ শ্রম করে না। এই দ্বিতীয় ভাগের শ্রম করিবার আবশ্যকতা নাই বলিয়া তাহারা করে না; প্রথম ভাগের উৎপাদিত অতিরিক্ত খাদ্যে তাহদের ভরণপোষণ হয়। যাহারা শ্রম করে না, তাহদেরই কেবল সাবকাশ: সতরাং চিন্তা, শিক্ষা ইত্যাদিতে তাহাদিগেরই একাধিকার। যে চিন্তা করে, শিক্ষা পায়, অর্থাৎ যাহার বদ্ধি মাতিজত হয়, সে অন্যাপেক্ষা যোগ্য, এবং ক্ষমতাশালী হয়। সতরাং সমাজমধ্যে ইহাদিগেরই প্রধানত্ব হয়। যাহারা WSS