পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

play ব্ৰাহ্মণ রামায়ণ মহাভারত, পাণিনি ব্যাকরণ, সাংখ্যদর্শন প্রভৃতির অবতারণা করিয়াছিলেন তাঁহারা বাসবদত্তা, কাদম্বরী প্রভৃতির প্রণয়নে গৌরব বোধ করিতে লাগিলেন। শেষে সে ক্ষমতাও গেল। ব্ৰাহ্মণদিগের মানসক্ষেত্রে মরভূমি হইল। অতএব বৈষম্যবিষ ভারতীয় প্রজার দন্দশার একটি মািল কারণ। পঞ্চম পরিচ্ছেদ মনষ্যে মনষ্যে সমানাধিকারবিশিস্ট-ইহাই সাম্যনীতি। কৃষক ও ভূম্যধিকারীতে যে বৈষম্য, সাম্যনীতিভ্রংশের প্রথম উদাহরণ সম্বরপ তাহার উল্লেখ করিয়াছি। দ্বিতীয় উদাহরণ সাবরােপ সন্ত্রীপরিষে যে বৈষম্য, তাহার উল্লেখ করিব। মনষ্যে মনষ্যে সমানাধিকারবিশিস্ট। সত্ৰীগণও মনষ্যেজাতি, অতএব সত্ৰীগণও পরিষের তুল্য অধিকারশালিনী। যে যে কায্যে পরিষের অধিকার আছে, সত্ৰীগণেরও সেই সেই কায্যে অধিকার থাকা ন্যায়সঙ্গত। কেন থাকিবে না ? কেহ কেহ উত্তর করিতে পারেন যে, সন্ত্রী পর্যুষে প্রকৃতিগত বৈষম্য আছে; পরিষ বলবান, সত্ৰী অবলা ; পরবষ সাহসী, সত্ৰী ভীর; পরিষ ক্লেশসহিষ্ণ, সত্ৰী কোমলা; ইত্যাদি ইত্যাদি ; অতএব যেখানে সর্বভাবগত বৈষম্য আছে, সেখানে অধিকারগত বৈষম্য থাকাও বিধেয়। কেন না, যাহাতে অশক্ত, সে তাহাতে অধিকারী হইতে পারে না। ইহার দাইটি উত্তর সংক্ষেপে নিন্দেশ করিলেই আপাততঃ যথেস্ট হইবে। প্রথমতঃ সবভাবগত বৈষম্য থাকিলেই যে অধিকারগত বৈষম্য থাকা ন্যায়সঙ্গত, ইহা আমরা সবীকার করি না। এ কথাটি সাম্যতত্ত্বের মালোচ্ছেদক। দেখ, স্ত্রীপরিষে যেরপে স্বভাবগত বৈষম্য, ইংরেজ বাঙ্গালিতেও সেইরােপ। ইংরেজ বলবান, বাঙ্গালি দািব্বল; ইংরেজ সাহসী, বাঙ্গালি ভীর; ইংরেজ ক্লেশসহিষ্ণ বাঙ্গালি কোমল ; ইত্যাদি ইত্যাদি। যদি এই সকল প্রকৃতিগত বৈষম্য হেতু অধিকারবৈষম্য ন্যায্য হইত, তবে আমরা ইংরেজ বাঙ্গালি মধ্যে সামান্য অধিকারবৈষম্য দেখিয়া এত চীৎকার করি কেন ? যদি সত্ৰী দাসী, পরষ প্ৰভু, ইহাই বিচারসঙ্গত হয়, তবে বাঙ্গালি দাস, ইংরেজ প্ৰভু, এটিও বিচারসঙ্গত হইবে। দ্বিতীয় উত্তর এই যে সকল বিষয়ে স্ত্রীপরিষে অধিকারবৈষম্য দেখা যায়, সে সকল বিষয়ে সন্ত্রীপরিষে যথার্থ প্রকৃতিগত বৈষম্য দেখা যায় না। যতটকু দেখা যায়, ততটকু কেবল সামাজিক নিয়মের দোষে। সেই সকল সামাজিক নিয়মের সংশোধনই সাম্যনীতির উদ্দেশ্য। বিখ্যাতনামা জন আটয়ার্ট মিলকৃত এতদ্বিষয়ক বিচারে, এই বিষয়টি সন্দেরারপে প্ৰমাণীকৃত হইয়াছে। সে সকল কথা এখানে পনরক্ত করা নিম্প্রয়োজন।* সত্ৰীগণ সকল দেশেই পরিষের দাসী। যে দেশে সস্ত্রীগণকে পিঞ্জরাবদ্ধ করিয়া না রাখে, সে দেশেও সত্ৰীগণকে পরিষের উপর নিভাির করিতে হয়, এবং সৰ্ব্বপ্রকারে আজ্ঞানবেত্তী হইয়া মন যোগাইয়া থাকিতে হয়। এই প্রথা সব্বদেশে এবং সব্বকালে চিরপ্রচলিত থাকিলেও, এক্ষণে আমেরিকা ও ইংলিশেড এক সম্প্রদায় সমাজতত্ত্ববিদ ইহার বিরোধী। তাঁহারা সাম্যবাদী। তাঁহাদের মত এই যে, সত্ৰী ও পরিষে সব্বপ্রকারে সাম্য থাকাই উচিত। পরিষগণের যাহাতে যাহাতে অধিকার, সত্ৰীগণের তাহাতে তাহাতেই অধিকার থাকাই উচিত। পরিষে চাকরি করিবে, ব্যবসায় করিবে, সত্ৰীগণে কেন করিবে না ? পরিষে রাজসভায়, ব্যবস্থাপক সভায় সভ্য হইবে, সত্ৰীলোকে কেন হইবে না ? নারী পরিষের পত্নী মাত্র, দাসী কেন হইবে ? আমাদের দেশে যে পরিমাণে সত্ৰীগণ পরিষাধীন, ইউরোপে বা আমেরিকায় তাহার শতাংশও নহে। আমাদিগের দেশ অধীনতার দেশ, সব্বপ্রকার অধীনতা ইহাতে বীজমাত্রে অঙ্কুরিত হইয়া, উষ্ণবরা ভূমি পাইয়া বিশেষ বন্ধিলাভ করিয়া থাকে। এখানে প্রজা যেমন রাজার নিতান্ত অধীন, অন্যত্র তেমন নহে; এখানে অশিক্ষিত যেমন শিক্ষিতের আজ্ঞাবহ অন্যত্র তেমন নহে; এখানে যেমন শদ্রোদি ব্রাহ্মণের পদানত, অন্যত্র কেহই ধৰ্ম্মমযাজকের তােদশ Subjection of women. OSS