পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s গণ্য হইবার জন্য, দেহ ধারণা করিয়াছিল ? তোমার মান অপমান সব, তাহদের সখি দিল্লখ কিছই নহে? আমি জানি, তোমরা বঙ্গাঙ্গনীগণকে এরােপ তৈয়ার করিয়াছ যে, তাহারা এখন আর এই শাস্তিকে দঃখ বলিয়া বোধ করে না। বিচিত্র কিছই নহে। যাহাকে অদ্ধাভোজনে অভ্যন্ত করিবে, পরিশেষে সে সেই অদ্ধ ভোজনেই সন্তুষ্ট থাকিবে, অন্নাভাবকে দঃখ মনে করিবে না। কিন্তু তাঁহাতে তোমার নিষ্ঠারতা মাজনীয় হইল না। তাহারা সম্মত হউক, অসমতই হউক, তুমি ভূমিগের সােথ ও শিক্ষার লাঘব করলে, এজন্য তুমি অনন্ত কাল মহাপাপী বলিয়া গণ্য আর কতকগলি মািখ আছেন, তাঁহাদিগের শােধ এইরূপ আপত্তি নহে। তাঁহারা বলেন যে, সত্ৰীগণ সমাজমথ্যে যথেচ্ছা বিচরণ করলে দন্টস্বভাব হইয়া উঠিবে, এবং কুচরিত্র পরিষগণ অবসর পাইয়া তাহাদিগকে ধৰ্ম্মমন্দ্ৰিন্ট করবে। যদি তাঁহাদিগকে বলা যায় যে, দেখ, ইউরোপাদি সভ্যসমাজে কুলকামিনীগণ যথেচ্ছা সমাজে বিচরণ করিতেছে, তন্নিবন্ধন কি ক্ষতি হইতেছে ? তাহাতে তাঁহারা উত্তর করেন যে, সে সকল সমাজের সন্ত্রীগণ, হিন্দমহিলাগণ অপেক্ষা ধৰ্ম্মমন্দ্ৰিন্ট এবং কলষিতস্বভাব বটে। ধৰ্ম্মম রক্ষাৰ্থ যে সত্ৰীগণকে পিঞ্জরাবদ্ধ রাখা আবশ্যক, হিন্দমহিলাগণের এরপ কুৎসা আমরা সহ্য করিতে পারি না। কেবল সংসারে লোকসহবাস করিলেই তাহাদিগের ধর্মম বিলপ্ত হইবে, পরিষ পাইলেই তাহারা কুলধৰ্ম্মে জলাঞ্জলি দিয়া তাহার পিছৰ পিছ জটিবে, হিন্দ সন্ত্রীর ধৰ্ম্মম এরােপ বস্ত্রাবত বারিবৎ নহে। যে ধৰ্ম্মম এরােপ বস্ত্রাবত বারিবৎ, সে ধৰ্ম্ম থাকা না থাকা সমান—তাহা রাখিবার জন্য এত যত্নের প্রয়োজন_কি ? তাহার বন্ধনভিত্তি উন্মলিত করিয়া নািতন ভিত্তির পত্তন কর। ৪ৰ্থ। আমরা চতুৰ্থ বৈষম্যের উল্লেখ করিয়াছি, অর্থাৎ পরিষগণের বহবিবাহে অধিকার, তৎসম্বন্ধে অধিক লিখিবার প্রয়োজন নাই। এক্ষণে বঙ্গবাসী হিন্দগণ বিশেষরূপে বঝিয়াছেন যে, এই অধিকার নীতিবিরদ্ধে। সহজেই বাবা যাইবে যে, এ স্থলে সত্ৰীগণের অধিকার বদ্ধি করিয়া সাম্য সংস্থাপন করা সমাজসংস্কারকদিগের উদ্দেশ্য হইতে পারে না; পরষগণের অধিকার কত্তন করাই উদ্দেশ্য; কারণ, মনষ্যেজাতিমধ্যে কাহারই বহবিবাহে অধিকার নীতিসঙ্গত হইতে পারে না।*।। কেহই বলিবে না যে, সত্ৰীগণও পরিষের ন্যায়৷ বহবিবাহে অধিকারিণী হউন; সকলেই বলিবে, পরিষেরও সস্ত্রীর ন্যায় একমাত্র বিবাহে অধিকার। অতএব, যেখানে অধিকারটি নীতিসঙ্গত, সেইখানেই সাম্য অধিকারকে সম্প্রসারিত করে, যেখানে কাৰ্য্যাধিকারটি অনৈতিক, সেখানে উহাকে কত্তিত এবং সঙ্কীর্ণ করে। সাম্যের ফলে কদাচ অনৈতিক হইতে পারে না। সাম্য এবং সবানবত্তিতা, এই দই তত্ত্বমধ্যে সমদায় নীতিশাস্ত্র নিহিত আছে। এই চারিটি বৈষম্যের উপর আপাততঃ বঙ্গীয় সমাজের দন্টি পড়িয়াছে। যাহা অতি গহিত, তাহারই যখন কোন প্ৰতিবিধান হইতেছে না, তখন যে অন্যান্য বৈষম্যের প্রতি কটাক্ষ করিলে কোন উপকার হইবে, এমত ভরসা করা যায় না। আমরা আর দই একটি কথার উত্থাপন করিয়া ক্ষান্ত হইব। সন্ত্রীপরিষে যে সকল বৈষম্য প্রায় সব্ব সমাজে প্রচলিত আছে, তন্মধ্যে পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার সম্প্ৰবন্ধীয় বিধিগলি অতি ভয়ানক ও শোচনীয়। পত্র পৈতৃক সম্পত্তিতে সম্পণে অধিকারী, কন্যা কেহই নহে। পত্র কন্যা, উভয়েরই এক ঔরসে, এক গভে জন্ম; উভয়েরই প্রতি পিতা মাতার এক প্রকার যত্ন, এক প্রকার কৰ্ত্তব্য কম; কিন্তু পত্র পিতৃমাতৃত্যুর পর পিতার কোটি মাদ্রা সারাপােনাদিতে ভস্মসাৎ করােক, কন্যা বিশেষ প্রয়োজনের জন্যও তন্মধ্যে এক কপদক পাইতে পারে না। এই নীতির কারণ হিন্দীশাস্ত্রে নিৰ্দিষ্ট হইয়া থাকে যে, যেই শ্ৰাদ্ধাধিকারী, সেই উত্তরাধিকারী; সেটি এরপ অসঙ্গত এবং অযথাৰ্থ যে, তাহার অযৌক্তিকতা

  • কদাচিৎ হইতে পারে বোধ হয়। যথা, আপত্রিক রাজা, অথবা যাহার ভাষা কুষ্ঠাদি রোগগ্ৰস্ত। বোধ হয় বলিতেছি, কেন না, ইহা স্বীকার করিলে পরিষের বিপক্ষেও সেইরােপ ব্যবস্থা করিতে হয়। বস্তুতঃ বহবিবাহ পক্ষে বলিবাের দই একটা কথা আছে, কিন্তু আমার বিবেচনায় বহবিবাহ এমন কদৰ্য্য

প্রথা যে, সে সকল কথার উল্লেখ মাত্রেও অনিশট আছে। 8O Ο