পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণচরিত্র পাঠক সেরাপ বিশ্বাসযক্ত নহেন। যাঁহারা সেরাপ বিশ্বাসযক্ত নহেন, তাহারা বলবেন, কৃষ্ণচরিত্রের মৌলিকতা কি ? কৃষ্ণ নামে কোন ব্যক্তি পথিবীতে কখনও বিদ্যমান ছিলেন, তাহার প্রশ্ন কি? যদি ছিলেন, তবে তাঁহার চরিত্র যথার্থ কি প্রকার ছিল, তাহা জানিবার কােন উপায় আছে কি ? আমরা প্রথমে এই দই সন্দেহের মীমাংসায় প্রবত্ত হইব। কৃষ্ণের বক্তান্ত নিম্পনলিখিত প্রাচীন গ্রন্থগলিতে পাওয়া যায় :- (১) মহাভারত । (২) হরিবংশ । (৩) পরাণ । ইহার মধ্যে পরাণ আঠারখানি। সকলগলিতে কৃষ্ণবত্তান্ত নাই। নিম্নলিখিতগলিতে VC2 - (১) ব্ৰহ্মপরাণ । (২) পদ্মপরিাণ। (৩) বিষ্ণপরিাণ। (৪) বায়পরাণ। (৫) শ্ৰীমদ্ভাগবত । (১o) ব্ৰহ্মবৈবত্ত পরাণ। (১৩) স্কন্দপারাণ। (১৪) বামনপরাণ । (১৫) কমপিরাণ। মহাভারত, আর উপরি লিখিত অন্য গ্রন্থগলির মধ্যে কৃষ্ণজীবনী সম্পবন্ধে একটি বিশেষ প্ৰভেদ আছে। যাহা মহাভারতে আছে, তাহা হরিবংশে ও পরাণগলিতে নাই। যাহা হরিবংশ ও পরাণে আছে, তাহা মহাভারতে নাই। ইহার একটি কারণ এই যে, মহাভারত পাণডবদিগের ইতিহাস; কৃষ্ণ পান্ডবদিগের সখা ও সহায়; তিনি পান্ডবদিগের সহায় হইয়া বা তাঁহাদের সঙ্গে থাকিয়া যে সকল কায্য করিয়াছেন, তাহাই মহাভারতে আছে, ও থাকিবার কথা। প্রসঙ্গক্রমে অন্য দাই একটা কথা আছে মাত্র। তাঁহার জীবনের অবশিস্টাংশ মহাভারতে নাই বলিয়াই হরিবংশ রচিত হইয়াছিল, ইহা হরিবংশে আছে। ভাগবতেও ঐরােপ কথা আছে। ব্যাস নারদকে মহাভারতের অসক্ষপণােতা জানাইলেন। নারদ ব্যাসকে কৃষ্ণচরিত্র রচনার উপদেশ দিলেন। অতএব মহাভারতে যাহা আছে, এই ভাগবতে বা হরিবংশে বা অন্য পরাণে তাহা নাই; মহাভারতে, যাহা নাই-পরিত্যক্ত হইয়াছে, তাহাই আছে। অতএব মহাভারত সৰ্ব্বব্যাপকবািবত্তীর্ণ। হরিবংশাদি ইহার অভাব পরিণার্থ মাত্র। যাহা সব্বাগ্রে রচিত হইয়াছিল, তাহাই সববাপেক্ষা মৌলিক, ইহাই সম্ভব। কথিত আছে যে, মহাভারত, হরিবংশ, এবং অন্টাদশ পরাণ একই ব্যক্তি রচিত। সকলই মহর্ষি বেদব্যাসপ্রণীত । এ কথা সত্য কি না, তাহার বিচারে এক্ষণে প্রয়োজন নাই। আগে দেখা যাউক, মহাভারতের কোন ঐতিহাসিকতা আছে কি না। যদি তাহা না থাকে, তবে হরিবংশে ও পরাণে কোন ঐতিহাসিক তত্ত্বের অন্যসন্ধান বথা। এক্ষণে যে বিচারে প্রবত্ত হইব, তাহাতে দই দিকে দই ঘোর বিপদ। এক দিকে, এ দেশীয় প্রাচীন সংস্কার যে, সংস্কৃতভাষায় যে কিছ রচনা আছে, যে কিছতে অনস্বার আছে, সকলই অভ্রান্ত ঋষি-প্রণীত; সকলই প্রতিবাদ বা সন্দেহের অতীত যে সত্য, তাহাই আমাদিগের কাছে আনিয়া উপস্থিত করে। বেদবিভাগ, লক্ষশ্লোকাত্মক মহাভারত, হরিবংশ, অল্টাদশ পরাণ, সকল একজনে করিয়াছেন; সকলই কলিযাগের আরম্ভে হইয়াছে; সেও পাঁচ হাজার বৎসর হইল; আর এই সকল বেদব্যাস যেমন করিয়াছিলেন, ঠিক তেমনই আছে। অনেক লোকে, এ সংস্কারের প্রতিবাদ শােনা দরে যাউক, যে প্রতিবাদ করিবে, তাহাকে মহাপাতকী নারকী এবং দেশের সব্বনাশে প্রস্তুত মনে করেন। এই এক দিকের বিপদ। আর দিকে গরতের বিপদ, বিলাতী পাড়িত। ইউরোপ ও আমেরিকার কতকগালি পশ্চিডত সংস্কৃত শিক্ষা করিয়াছেন। তাঁহারা প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থ 8OS