পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণচরিত্র আমি এমন বলি না যে, আমরা যাহাকে অনৈসৰ্গিক বলি, তাহা কাজে কাজেই মিথ্যা। আমি জানি যে, এমন অনেক নৈসৰ্গিক নিয়ম আছে, যাহা আমরা অবগত নাহি। যেমন একজন বন্যজাতীয় মনষ্য, একটা ঘড়ি, কি বৈদ্যুতিক সংবাদতন্ত্রীকে অনৈসগিক ব্যাপার মনে করিতে পারে, আমরাও অনেক ঘটনাকে সেইরাপ ভাবি। আপনাদিগের এরপ অজ্ঞতা স্বীকার করিয়াও বিশেষ প্রমাণ ব্যতীত, কোন অনৈসগিক ঘটনায় বিশ্বাস করিতে পারি না। কেন না, আপনার জ্ঞানের অতিরিক্ত কোন ঐশিক নিয়ম প্রমাণ ব্যতীত কাহারও স্বীকার করা কত্তব্য নহে। যদি তোমাকে কেহ বলে, আমগাছে তাল ফলিতেছে দেখিয়াছি, তোমার তাহা বিশ্বাস করা কীৰ্ত্তব্য নহে। তোমাকে বলিতে হইবে, হয় আমগাছে তাল দেখাও, নয়। বাবাইয়া দাও কি প্রকারে ইহা হইতে পারে। আর যে ব্যক্তি বলিতেছে যে, আমগাছে তাল ফলিয়াছে, সে ব্যক্তি যদি বলে, ‘আমি দেখি নাই-শনিয়াছি, তবে অবিশ্বাসের কারণ আরও গারতের হয়। কেন না, এখানে প্রত্যক্ষ প্রমাণও পাওয়া গেল না। মহাভারতও তাই। অতিপ্ৰকৃতের প্রত্যক্ষ প্রমাণও পাইতেছি না। বলিয়াছি যে, প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাইলেও অতিপ্রকৃত হঠাৎ বিশ্বাস করা যায় না। নিজে চক্ষে দেখিলে হঠাৎ বিশ্বাস করা যায় না। কেন না, বরং আমাদিগের জ্ঞানেন্দ্ৰিয়ের ভ্রান্তি সম্ভব; তথাপি প্রাকৃতিক নিয়মলঙ্ঘন সম্ভব নহে। বাবাইয়া যাও যে, যাহাকে অতিপ্রকৃত বলিতেছি, তাহা প্রাকৃতিক নিয়মসঙ্গত, তবে বঝিব। বন্যজাতীয়কে ঘড়ি বা বৈদ্যুতিক সংবাদতন্ত্রী বাঝাইয়া দিলে, সে ইহা অনৈসগিক ব্যাপার বলিয়া বিশ্বাস করিবে না। আর ইহাও বক্তব্য যে, যদি শ্ৰীকৃষ্ণকে ঈশ্বরাবতার বলিয়া সম্বীকার করা যায় (আমি তাহা করিয়া থাকি), তাহা হইলে, তাঁহার ইচ্ছায় যে কোন অনৈসগিক ব্যাপার সম্পাদিত হইতে পারে না, ইহা বলা যাইতে পারে না। তবে যতক্ষণ না শ্ৰীকৃষ্ণকে ঈশ্বরাবতার বলিয়া প্ৰতিপন্ন করিতে পারা যায়, এবং যতক্ষণ না এমন বিশ্বাস করা যায় যে, তিনি মনষ্যে-দেহ ধারণ করিয়া ঐশী শক্তি দ্বারা সিদ্ধ বলিয়া পরিচিত করিতে পারি না বা বিশ্বাস করিতে পারি না। কেবল তাহাই নহে। যদি সবীকার করা যায় যে, কৃষ্ণ ঈশ্বরাবতার, তিনি স্বেচ্ছাক্রমে অতিপ্রকৃত ঘটনাও ঘটাইতে পারেন, তাহা হইলেও গোল মিটে না। যাহা তাঁহার দ্বারা সিদ্ধ, তাহাতে যেন বিশ্বাস করিলাম, কিন্তু যাহা তাঁহার দ্বারা সিদ্ধ নহে, এমন সকল অনৈসগিক ব্যাপারে বিশ্বাস করিব কেন ? সালব অসাের অন্তরীক্ষে সৌভনগর স্থাপিত করিয়া যাদ্ধ করিল; বাণের সহস্ৰ বাহ ; অশ্বথামা ব্রহ্মশিরা অস্ত্র ত্যাগ করিলে তাহাতে ব্ৰহ্মাণড দগ্ধ হইতে লাগিল; এবং পরিশেষে অশ্বখামার আদেশানসারে, উত্তরার গভর্ঘস্থ বালককে গভর্মধ্যে নিহত করিল, ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্বাস করিব কেন ? তার পর কৃষ্ণের নিজ-কৃত অনৈসগিক কমেও অবিশ্বাস করিবার কারণ আছে। তাঁহাকে ঈশ্বরাবতার বলিয়া সম্ববীকার করিলেও অবিশ্বাস করিবার কারণ আছে। তিনি মানবশরীর ধারণ করিয়া যদি কোন অনৈসগিক কম করেন, তবে তাহা তাঁহার দৈবী বা ঐশী শক্তির দ্বারা। কিন্ত দৈবী বা ঐশী শক্তি দ্বারা যদি কম সম্পাদন করবেন, তবে তাঁহার মানব-শরীরধারণের প্রয়োজন কি ? যিনি সব্বকত্তা, সব্বশক্তিমান, ইচ্ছাময়-যাঁহার ইচ্ছায় এই সমস্ত জীবের সন্টি ও ধবংস হইয়া থাকে, তিনি মনষ্যেশরীর ধারণ না করিয়াও কেবল তাঁহার ঐশী শক্তির প্রয়োগের দ্বারা, যে কোন অসরের বা মানষের সংহার বা অন্য যে কোন অভিপ্ৰেত কাৰ্য্য সম্পাদনা করিতে পারেন। যদি দৈবী শক্তি দ্বারা বা ঐশী শক্তি দ্বারা কায্য নির্বাহ করিবেন, তবে তাঁহার মনষ্যেশরীরধারণের প্রয়োজন নাই। যদি ইচ্ছাময় ইচ্ছাপবেক মনষ্যের শরীর ধারণ করেন, তবে দৈবী বা ঐশী শক্তির প্রয়োগ তাঁহার উদ্দেশ্য বা অভিপ্রেত হইতে পারে না । তবে শরীরধারণের প্রয়োজন কি ? এমন কোন কম আছে কি যে, জগদীশ্বর শরীরাধারণ ना कद्धिcव्न निश्क श्श ना ? ইহার উত্তরের প্রথমে এই আপত্তি উত্থাপিত হইতে পারে যে, জগদীশ্বরের মানবশরীরাধারণ কি সম্ভব ? প্রথমে ইহার মীমাংসা করা যাইতেছে। 8's