পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী ব্ৰয়োদশ পরিচ্ছেদ-ঈশ্বর পথিবীতে অবতীর্ণ হওয়া কি সম্ভব ? বস্তুতঃ কৃষ্ণচরিত্রের আলোচনার প্রথমেই কাহারও কাহারও কাছে এই প্রশেনর উত্তর দিতে হয় যে, ঈশ্বর পথিবীতে অবতীর্ণ হওয়া কি সম্ভব? এ দেশের লোকের বিশ্বাস, কৃষ্ণ ঈশ্বরের অবতার। শিক্ষিতের বিশ্বাস যে, কথাটা অতিশয় অবৈজ্ঞানিক, এবং আমাদিগের খ্রীস্টান উপদেশকদিগের মতে অতিশয় উপহাসের যোগ্য বিষয়। এখানে একটা নহে, দাইটি প্রশন হইতে পারে--(১) ঈশ্বর পথিবীতে অবতীর্ণ হওয়া সম্ভব কি না, (২) তাহা হইলে কৃষ্ণ ঈশ্বরাবতার কি না। আমি এই দ্বিতীয় প্রশেনর কোন উত্তর দিব না। প্রথম প্রশেনর কিছ উত্তর দিতে ইচ্ছা করি। সৌভাগ্যক্রমে আমাদিগের খ্রীস্টীয়ান গািরদিগের সঙ্গে আমাদিগের এই স্থল কথা লইয়া যিশ টিকেন না। আমাদিগের প্রধান বিবাদ দাশনিক ও বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে। , ইহাদিগের মধ্যে অনেকে এই আপত্তি করিবেন, যেখানে আদৌ ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণাভাব, সেখানে আবার ঈশ্বরের অবতার কি ? যাঁহারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন, আমরা তাঁহাদিগের সঙ্গে কোন বিচার করি না। তাঁহাদের ঘণা করিয়া বিচার করি না, এমত নহে। তবে জানা আছে যে, এ বিচারে কোন পক্ষের উপকার হয় না। তাঁহারা আমাদের ঘণা করেন, তাহাতে আপত্তি নাই। তাহার পর আর কতকগলি লোক আছেন যে, তাঁহারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেন, কিন্তু তাঁহারা বলিবেন, ঈশ্বর নিগণ। সগরণেরই অবতার সম্ভব। ঈশ্বর নিগণ, সতরাং তাঁহার অবতার অসম্ভব। এ আপত্তিরও আমাকে বড় সোজা উত্তর দিতে হয়। নিগণ ঈশ্বর কি, তাহা আমি বঝিতে পারি না, সতরাং এ আপত্তির মীমাংসা করিতে সক্ষম নাহি। আমি জানি যে, বিস্তর পন্ডিত ও ভাবক ঈশ্বরকে নিগণে বলিয়াই মানেন। আমি পন্ডিতও নহি, ভাবকেও নাহি, কিন্তু আমার মনে মনে বিশ্বাস যে, এই ভাবিক পশ্চিডতগণও আমার মত, নিগণ ঈশ্বর বঝিতে পারেন না। কেন না, মনষ্যের এমন কোন চিত্তব্বত্তি নাই, যদ্দ্বারা আমরা নিগণ ঈশ্বর বঝিতে পারি। ঈশ্বর নিগণি হইলে হইতে পারেন, কিন্তু আমরা নিগণ বঝিতে পারি না, কেন না, আমাদের সে শক্তি নাই।* মাখে বলিতে পারি বটে যে, ঈশ্বর নিগণ, এবং এই কথার উপর একটা দশনশাস্ত্র গড়িতে পারি, কিন্তু যাহা কথায় বলিতে পারি, তাহা যে মনে ববি, ইহা অনিশ্চিত। “চতুষ্পেকাণ গোলক” বলিলে আমাদের রসনা বিদীণ হয় না বটে, কিন্তু “চতুষ্মেকাণ গোলক” মানে ত কিছই বঝিলাম না। তাই হবার্ট স্পেনসর। এত কাল পরে নিগণ ঈশ্বর givšп и жене чCoop GS Ho Šrs (“Something higher than personality”) তাহাতে আসিয়া পড়িয়াছেন। অতএব আইস, আমরাও নিগণ ঈশ্বরের কথা ছাড়িয়া দিই। ঈশ্বরকে নিগণে বলিলে স্রস্টা, বিধাতা, পাতা, ত্রাণকৰ্ত্তা কাহাকেও পাই না। এমন ঝাক:মারিতে কাজ কি ? যাঁহারা সগণ ঈশ্বর স্বীকার করেন, তাঁহাদেরও ঈশ্বর পথিবীতে অবতীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা স্বীকার পক্ষে অনেকগলি আপত্তি আছে। এক আপত্তি এই যে, ঈশ্বর সগণ হউন, কিন্তু নিরাকার। যিনি নিরাকার, তিনি আকার ধারণ করবেন কি প্রকারে ? উত্তরে, জিজ্ঞাসা করি, যিনি ইচ্ছাময় এবং সব্বশক্তিমান, তিনি ইচ্ছা করিলে নিরাকার হইলেও আকার ধারণা করিতে পারেন না কেন ? তাঁহার সব্বশক্তিমত্তার এ সীমানিন্দেশ করা কেন ? তবে কি তাঁহাকে সব্বশক্তিমান বলিতে চাও না ? যিনি এই জড় জগৎকে আকার প্রদান করিয়াছেন, তিনি ইচ্ছা করিলে নিজে আকার গ্রহণ করিতে পারেন না কেন ? "Our conception of the Deity is then bounded by the conditions which bound all human knowledge and therefore we cannot represent the Deity as he is, but as he appears to us.'-Mansel, Metaphysics, p. 384. 89SR