পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণচরিত্র করিয়া আছি। “অশ্বখ্যামা হত ইতি গজঃ”* কথার ব্যাপারটা যে মিথ্যা, তাহা দ্রোণবধ-পািকবাধ্যায় সমালোচনাকালে আমরা প্রমাণীকৃত করিব। বৈবাহিক পন্ধেব কৃষ্ণ সম্পবন্ধে একটা তামাসার কথা ব্যাসোত্ত বলিয়া কথিত হইয়াছে। তাহা আমাদিগের সমালোচ্য বিষয়ের অন্তগত না হইলেও, তাহার কিঞ্চিৎ উল্লেখ করা আবশ্যক বিবেচনা করিলাম। দ্রুপদরাজি, কন্যার পঞ্চ স্বামী হইবে শনিয়া তাহাতে আপত্তি করিতেছেন। ব্যাস তাঁহার আপত্তি খন্ডন করিতেছেন। খন্ডনোপলক্ষে তিনি দ্রুপদকে একটি উপাখ্যান শ্রবণ করান। উপন্যাসটি বড় অদ্ভুত ব্যাপার। উহার স্থলে তাৎপৰ্য্য এই যে, ইন্দ্র একদা গঙ্গাজলে একটি রোরােদ্যমােনা সন্দরী দশন করেন। তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, “তুমি কেন কাঁদিতেছ?” তাহাতে সন্দরী উত্তর করে যে, “আইস, দেখাইতেছি।" এই বলিয়া সে ইন্দ্রকে সঙ্গে লইয়া দেখাইয়া দিল যে, এক যাবা এক যাবতীর সঙ্গে পাশক্রীড়া করিতেছে। তাহারা ইন্দ্রের যথোচিত সম্মান না করায় ইন্দ্ৰ কুদ্ধ হইলেন। কিন্তু যে যােবা পাশক্রীড়া করিতেছিলেন, তিনি স্বয়ং মহাদেব। ইন্দ্ৰকে ক্রুদ্ধ দেখিয়া তিনিও ক্রুদ্ধ হইলেন এবং ইন্দ্রকে এক গৰ্ত্তের ভিতর প্রবেশ করিতে বলিলেন। ইন্দ্ৰ গাত্তের ভিতর প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, সেখানে তাঁহার মত আর চারিটি ইন্দ্ৰ আছেন!! শেষ মহাদেব পাঁচ জন ইন্দ্রকে ডাকিয়া বলিলেন যে, “তোমরা গিয়া পথিবীতে মনকেষ্য হও ।” সেই ইন্দ্রেরাই আবার মহাদেবের কাছে প্রার্থনা করিলেন যে, “ইন্দ্রাদি পশুদেব গিয়া আমাদিগকে কোন মানষীর গভে উৎপন্ন করান” !!! সেই পাঁচ জন ইন্দ্ৰ ইন্দ্রাদির ঔরসে পশ্চঃ পান্ডব হইলেন। বিনাপরাধে মেয়েটাকে মহাদেব হকুম দিলেন যে, “তুমি গিয়া ইহাদিগের পত্নী হও ।” সে দ্ৰৌপদী হইল। সে যে কেন কাঁদিয়াছিল, তাহার। আর কোন খবরই নাই। অধিকতর রহস্যের বিষয় এই যে, নারায়ণ এই কথা শনিবামাত্রেই আপনার মাথা হইতে দইগাছি চুল উপড়াইয়া ফেলিয়া দিলেন। একগাছি কাঁচা, একগাছি পাকা। পাকা-গাছটি বলরাম হইলেন, কাঁচা-গাছটি কৃষ্ণ হইলেন!!! বদ্ধিমান পাঠককে বোধ হয়। বাবাইতে হইবে না যে, এই উপাখ্যানটি, আমরা যাহাকে মহাভারতের তৃতীয় স্তর বলিয়াছি, তদন্তগত। অর্থাৎ ইহা মল মহাভারতের কোন অংশ নহে। প্রথমতঃ, উপাখ্যানটির রচনা এবং গঠন এখনকার বাঙ্গালার সব্বনিম্নশ্রেণীর উপন্যাসলেখকদিগের প্রণীত উপন্যাসের রচনা ও গঠন অপেক্ষাও নিকৃত্স্ট। মহাভারতের প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের প্রতিভাশালী কবিগণ এরােপ উপাখ্যানসন্টির মহাপাপে পাপী হইতে পারেন না। দ্বিতীয়তঃ, মহাভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে ইহার কোন প্রয়োজনীয় সম্পবিন্ধ নাই। এই উপাখ্যানটির সমদায় অংশ উঠাইয়া দিলে, মহাভারতের কোন কথাই অস্পলট, অথবা কোন প্রয়োজনই অসিদ্ধ থাকিবে না। দুপদরাজের আপত্তিখন্ডনজন্য ইহার কোন প্রয়োজন নাই; কেন না, ঐ আপত্তি ব্যাসোত্ত দ্বিতীয় একটি উপাখ্যানের দ্বারা খন্ডিত হইয়াছে। দ্বিতীয় উপাখ্যান ঐ অধ্যায়েই আছে। তাহা সংক্ষিপ্ত এবং সরল এবং আদিম মহাভারতের অন্তগত হইলে হইতে পারে। প্রথমোক্ত উপাখ্যানটি ইহার বিরোধী। দাইটিতে দ্ৰৌপদীর পািৰবািজন্মের ভিন্ন ভিন্ন প্রকার পরিচয় আছে। সতরাং একটি যে প্রক্ষিপ্ত, তদ্বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। এবং যাহা উপরে বলিয়াছি, তাহাতে প্রথমোক্ত উপাখ্যানটিই প্রক্ষিপ্ত বলিয়া সিদ্ধান্ত করিতে হয়। তৃতীয়তঃ, এই প্রথমোক্ত উপাখ্যান মহাভারতের অন্যান্য অংশের বিরোধী। মহাভারতের সকবলই কথিত আছে, ইন্দ্ৰ এক। এখানে ইন্দ্ৰ পাঁচ। মহাভারতের সব্বত্রই কথিত আছে যে, পান্ডবেরা ধৰ্ম্ম, বায়, ইন্দ্র, অশ্বিনীকুমারদিগের ঔরসপত্র মাত্র। এখানে সকলেই এক একজন ইন্দ্ৰ। এই বিরোধের সামঞ্জস্যের জন্য উপাখ্যানরচনাকারী গান্দভি লিখিয়াছেন যে, ইন্দ্রেরা মহাদেবের নিকট প্রার্থনা করিলেন, “ইন্দ্রাদিই আসিয়া আমাদিগকে মানষীর গভেদ উৎপন্ন করন।” জগদ্বিজয়ী গ্রন্থ মহাভারত এরােপ গন্দভের লেখনীপ্রসন্ত নহে, উহা निऊि । এই আশ্রদ্ধেয় উপাখ্যানটির এ স্থলে উল্লেখ করার আমাদিগের প্রধান উদ্দেশ্য এই যে, কি প্ৰণালী অবলম্বন করিয়া আমরা মহাভারতের তিনটি স্তর ভাগ করিতেছি ও করিব, তাহা

  • পরে দেখিব, “অশ্বথামা হত ইতি গজঃ” বালিটাই মহাভারতে নাই। ইহা কথকঠাকুরের नरन्कृछ।

884. マ ミー●ミ