পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৈববাণীটা বড় সংবিধা-কে বলিল, তার ঠিকানা নাই—কিন্তু বলিবার কথাটা প্রকাশ হইয়া পড়ে। দৈববাণী শনিয়া দেবতারা প্রস্থান করিলেন। কৃষ্ণাৰ্জন স্বচ্ছন্দে বন পোড়াইতে লাগিলেন। আগমনের ভয়ে পশপক্ষী পলাইতেছিল, সকলকে তাঁহারা মারিয়া ফেলিলেন। তাহদের মেদ মাংস খাইয়া অগ্নির মন্দাগ্নি ভাল হইল-বিষে বিষক্ষয় হইল—তিনি কৃষ্ণাক্তজনকে বর দিলেন। পরাভূত দেবতারা আসিয়াও বর দিলেন। সকল পক্ষ খাসী হইয়া ঘরে গেলেন। এইরূপ আষাঢ়ে গলেপির উপর বানিয়াদ খাড়া করিয়া ঐতিহাসিক সমালোচনায় প্রবত্ত হইলে, কেবল হাস্যাস্পদ হইতে হয়-অন্য লাভ নাই। আর আমাদের যাহা সমালোচ্য-অর্থাৎ কৃষ্ণচরিত্র-তাহার ভালমন্দ কোন কথাই ইহাতে নাই। যদি ইহার কোন ঐতিহাসিক তাৎপৰ্য্য থাকে, তবে সেটকু এই যে, পান্ডবদিগের রাজধানীর নিকটে একটা বড় বন ছিল, সেখানে অনেক হিংস্র পশি বাস করিত, কৃষ্ণাঙ্গজনি তাহাতে আগন লােগাইয়া, হিংস্র পশদিগকে বিনম্ৰাট করিয়া জঙ্গল আবাদ করিবার যোগ্য করিয়াছিলেন। কৃষ্ণাডজািন যদি তাই করিয়াছিলেন, তাহাতে শুভূমিক কীৰ্ত্তি বা অকীৰ্ত্তি কিছুই দেখি না। সন্দেরবনের আবারকারীরা নিত্য তাহা রয়া থাকে । আমরা স্বীকার করি যে, এ ব্যাখ্যাটা নিতান্ত টাল বয়স হইলাঁর ধরনের হইল। কিন্তু আমরা যে এরপে একটা তাৎপৰ্য্য সচিত করিতে বাধ্য হইলাম, তাহার কারণ আছে। খাগডবদহটা অধিকাংশ তৃতীয় স্তরান্তগত হইতে পারে, কিন্তু স্থলে ঘটনার কোন সচনা যে আদিম মহাভারতে নাই, এ কথা আমরা বলিতে প্ৰস্তৃত নাহি। পৰ্ব্বব্যসংগ্রহাধ্যায়ে এবং অনগ্রুমণিকাধ্যায়ে ইহার প্রসঙ্গ আছে। এই খাগডবদাহ হইতে সভাপকেবাের উৎপত্তি। এই বনমধ্যে ময় দানব বাস করিত। সেও পড়িয়া মরিবার উপক্রম হইয়াছিল। সে অজ্ঞজনের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাহিয়াছিল; অৰ্ন্তজািনও শরণাগতকে রক্ষা করিয়াছিলেন। এই উপকারের প্রত্যুপকার জন্য ময় দানব পান্ডবদিগের অত্যুৎকৃষ্ঠািট সভা নিম্পমাণ করিয়া দিয়াছিলেন। সেই সভা লইয়া সভাপকেবর কথা । এখন সভাপব্ব অন্টাদশ পর্বের এক পৰব। মহাভারতের যাদ্ধের বীজ এইখানে। ইহা একেবারে বাদ দেওয়া যায় না। যদি তা না হয়, তবে ইহার মধ্যে কতটক ঐতিহাসিক তত্ত্ব নিহিত থাকিতে পারে, তাহা বিচার করিয়া দেখা উচিত। সভা এবং তদপেলক্ষে রাজসয়ে যজ্ঞকে মৌলিক এবং ঐতিহাসিক বলিয়া গ্রহণ করার প্রতি কোনই আপত্তি দেখা যায় না। যদি সভা ঐতিহাসিক হইল, তবে তাহার নিম্পমাতা এক জন অবশ্য থাকিবে । মনে কর, সেই কারিগর বা এঞ্জিনিয়রের নাম ময়। হয়ত সে অনাৰ্য্যবংশীয়-এজন্য তাহাকে ময় দানব বলিত। এমন হইতে পারে যে, সে বিপন্ন হইয়া অজ্ঞজনের সাহায্যে জীবন লাভ করিয়াছিল, এবং কৃতজ্ঞতাবশতঃ এই এঞ্জিনিয়রী কাজটকু করিয়া দিয়াছিল। যদি ইহা প্রকৃত হয়, তবে সে যে কিরাপে বিপন্ন হইয়া অজ্ঞজনকৃত উপকার প্রাপ্ত হইয়াছিল, সে কথা কেবল খাপডবদাহেই পাওয়া যায়। অবশ্য স্বীকার করিতে হইবে যে, এ সকলই কেবল অন্ধকারে ঢিল মারা। তবে অনেক প্রাচীন ঐতিহাসিক তত্ত্বই এইরপ অন্ধকারেও ঢিল। হয়ত, ময় দানবের কথাটা সমদায়ই কবির সন্টি। তা যাই হোক, এই উপলক্ষে কবি যে ভাবে কৃষ্ণাজজনের চরিত্র সংস্থাপিত করিয়াছেন, তাহা বড় মনোহর। তাহা না লিখিয়া থাকা যায় না। ময় দানব প্ৰাণ পাইয়া অঙ্গজনিকে বলিলেন, “আপনি আমাকে পরিত্রাণ করিয়াছেন, অতএব আজ্ঞা করন, আপনার কি প্রত্যুপকার করিব ?” অজ্ঞজনে কিছ প্ৰত্যুপকার চাহিলেন না, কেবল প্রীতি ভিক্ষা করিলেন। কিন্তু ময় দানব ছাড়ে না; কিছ, কাজ না করিয়া যাইবে না। శా్యూ হইতে লিয়া “হে কৃতজ্ঞ! আসন্নমস্তৃত্যু রক্ষা পাইয়াছ বলিয়া আমার প্রত্যুপকার করিতে ইচ্ছা করিতেছি, এই নিমিত্ত তোমার দ্বারা কোন কম সম্পন্ন করিয়া লইতে ইচ্ছা! श् का।” ইহাই নিম্পাকাম ধৰ্ম্মম; খীস্টান ইউরোপে ইহা নাই। বাইবেলে যে ধৰ্ম্ম অনভিজ্ঞাত হইয়াছে, সবগ বা ঈশ্বর-প্রীতি তাহার কাম্য। আমরা এ সকল পরিত্যাগ করিয়া পাশ্চাত্ত্য গ্রন্থ হইতে যে ধৰ্ম্মম ও নীতি শিক্ষা করিতে যাই, আমাদের বিবেচনায় সেটা আমাদের দভাগ্য। অজনবাক্যের অপরান্ধে এই নিস্কাম ধম আরও পন্ট হইতেছে। ময় যদি কিছু কাজ করিতে GO