পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিশাপািলবধের ইহাই যথাৰ্থ কারণ। শিশাপািলকে বধ না করিলে তিনি রাজগণের সহিত মিলিত হইয়া যজ্ঞ নন্ট করিতেন। শিশপাল আবার ভীষ্মমকে ও কৃষ্ণকে কতকগলা গালিগালাজ করিলেন । , ভীষ্মমকে ও কৃষ্ণকে এবারেও শিশপাল বড় বেশি গালি দিলেন। “দরাত্মা”, “যাহাকে করিয়া নীরব হইয়া রহিলেন। কৃষ্ণ যেমন বলের আদশ, ক্ষমার তেমনি আদশ ৷ ভীস্ম প্রথমে কিছ: বলিলেন না, কিন্তু ভীম অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া শিশপালকে আক্রমণ করিবার জন্য উখিত হইলেন। ভীস্ম তাঁহাকে নির্যন্ত করিয়া শিশপালের পকেবািবত্তান্ত তাঁহাকে শনাইতে লাগিলেন। এই বিত্তান্ত অত্যন্ত অসম্ভব, অনৈসর্গিক ও অবিশ্বাসযোগ্য। সে কথা এই— শিংশপালের জন্মকালে তাঁহার তিনটি চক্ষ ও চারিটি হাত হইয়াছিল, এবং তিনি গদ্দভের মত চীৎকার করিয়াছিলেন। এরপ দলক্ষিণযক্ত পত্রিকে তাঁহার মাতাপিতা পরিত্যাগ করাই শ্ৰেয় বিবেচনা করিল। এমন সময়ে, দৈববাণী হইল। সে কালে যাঁহারা আষাঢ়ে গলপ প্রস্তুত করিতেন, দৈববাণীর সাহায্য ভিন্ন তাঁহারা গল্প জমাইতে পারিতেন না। দৈববাণী বলিল, “বেশ ছেলে, ফেলিয়া দিও না, ভাল করিয়া প্রতিপালন কর; যমেও ইহার কিছ করিতে পরিবে: না। তবে যিনি ইহাকে মারিবেন, তিনি জন্মিয়াছেন।” কাজেই বাপ মা জিজ্ঞাসা করিল, “বাছা দৈববাণী, কে মারিবে নামটা বলিয়া দাও না ?” এখন দৈববাণী যদি এত কথাই বলিলেন, তবে কৃষ্ণের নামটা বলিয়া দিলেই গোল মিটিত। কিন্তু তা হইলে গলেপার Plot-interest হয়। না। অতএব তিনি কেবল বলিলেন, “যার কোলে দিলে ছেলের বেশী হাত দইটা খসিয়া যাইবে, আর বেশী চোখটা মিলাইয়া যাইবে, সেই ইহাকে মারবে ।” কাজে কাজেই শিশপালের বাপ দেশের লোক ধরিয়া কোলে ছেলে দিতে লাগিলেন। কাহারও কোলে গেলে ছেলের বেশী হাত বা চোখ ঘাঁচিল না। কৃষ্ণকে শিশপালের সমবয়স্ক বলিয়াই বোধ হয় ; কেন না, উভয়েই এক সময়ে রক্মিণীকে বিবাহ করিবার উমেদার ছিলেন, এবং দৈববাণীর জন্মগ্রহণ করিয়াছেন” কথাতেও ঐরােপ বকায়। কিন্তু তথাপি কৃষ্ণ দ্বারক! হইতে চেদিদেশে গিয়া শিশপালকে কোলে করিলেন। তখনই শিশপালের দইটা হাত খসিয়া গেল, আর একটা চোখ মিলাইয়া গেল। শিশাপালের মা কৃষ্ণের পিসীমা। পিসীমা কৃষ্ণকে জবরদস্তী করিয়া ধরিলেন, “বাছা! আমার ছেলে মারিতে পরিবে না।” কৃষ্ণ স্বীকার করিলেন, শিশপালের বধোচিত শত অপরাধ ऊन्ाि क्रा कतिहदन् । যাহা অনৈসগিক, তাহা আমরা বিশ্বাস করি না। বোধ করি পাঠকেরাও করেন না। কোন ইতিহাসে অনৈসগিক ব্যাপার। পাইলে তাহা লেখকের বা তাঁহার পর্বগামীদিগের কল্পনাপ্রসন্ত বলিয়া সকলেই স্বীকার করিবেন। ক্ষমাগণের মাহাত্ম্য বঝে না, এবং কৃষ্ণচরিত্রের মাহাত্ম্য বঝে না। এমন কোন কবি, কৃষ্ণের অদ্ভুত ক্ষমাশীলতা বঝিতে না পারিয়া, লোককে শিশপালের প্রতি ক্ষমার কারণ বঝাইবার জন্য এই অদ্ভুত উপন্যাস প্রস্তুত করিয়াছেন। কাণা কাণাকে বঝায়, হাতী কুলোর মত। অসমরবন্ধের জন্য যে কৃষ্ণ অবতীর্ণ তিনি যে অসরের অপরাধ পাইয়া ক্ষমা করিবেন, ইহা অসঙ্গত বটে। কৃষ্ণকে অসরোবধাৰ্থ অবতীর্ণ মনে করিলে, এই ক্ষমাগণও বাঝা যায় না, তাঁহার কোন গণই বাবা যায় না। কিন্তু তাঁহাকে আদশ পরিষ বলিয়া ভাবিলে, মনষ্যত্বের আদশের বিকাশ জন্যই অবতীর্ণ, ইহা ভাবিলে, তাঁহার সকল কাৰ্য্যই বিশদরপে বাঝা যায়। কৃষ্ণচরিত্রসম্বরপ রত্নভান্ডার খলিবার চাবি এই আদশ পরিষতত্ত্ব। শিশাপালের গোটাকতক কটক্তি কৃষ্ণ সহ্য করিয়াছিলেন বলিয়াই যে কৃষ্ণের ক্ষমাগণের প্রশংসা করিতেছি, এমত নহে। শিশপাল ইতিপক্ৰেব কৃষ্ণের উপর অনেক অত্যাচার করিয়াছিল। কৃষ্ণ প্ৰাগজ্যোতিষপরে গমন করিলে সে, সময় পাইয়া, দ্বারকা দগ্ধ করিয়া পলাইয়াছিল। কদাচিৎ ভোজরাজ রৈবতক বিহারে গেলে সেই সময়ে আসিয়া শিশপাল অনেক যােদরকে কিনস্ট ও বদ্ধ করিয়াছিল। বসদেবের অশ্বমেধের ঘোড়া চুরি করিয়াছিল। এটা তাৎকালিক, ক্ষত্ৰিয়দিগের নিকট বড় গরতর অপরাধ বলিয়া গণ্য। এ সকলও কৃষ্ণ ক্ষমা করিয়াছিলেন। আর কেবল শিশপালেরই যে তিনি বৈরাচরণ ক্ষমা করিয়াছিলেন এমত নহে। জরাসন্ধও তাঁহাকে বিশেষরূপে পীড়িত করিয়াছিল। সম্ভবতঃ হৌক, পর্যতঃ হোক, কৃষ্ণ ষে জরাসন্ধের নিপাত, সাধনে 68