পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সক্ষম, তুহি দেখাইয়াছি। কিন্তু যত দিনু নুন্ন জরাসন্ধ রাজমন্ডলীকে আবদ্ধ করিয়া পাশপািতর নিকট বলি দিতে প্ৰস্তুত হইল, তত দিন তিনি তাহার প্রতি কোন প্রকার বৈরাচরণ করলেন না। এবং পাছে যাদ্ধ হইয়া লোকক্ষয় হয় বলিয়া, নিজে সিরিয়া গিয়া রৈবতকে গড় বধিয়া ৱিহিলেন। সেইরূপ যত দিন শিশপাল কেবল তাঁহারই শত্রতা করিয়াছিল, তত দিন কৃষ্ণ তাহার কোন প্রকার অনিষ্ট করেন নাই। তারপর যখন সে পাণ্ডবের যজ্ঞের বিঘা ও ধৰ্ম্মরাজ্য সংস্থাপনের বিঘা করিতে উদ্যক্ত হইল, কৃষ্ণ তখন তাহাকে বধ করিলেন। আদশ পরাধের ক্ষমা, ক্ষমাপরায়ণতার আদশ, এজন্য কেহ তাঁহার অনিস্ট করিলে তিনি তাহার কোন প্রকায় বৈরসাধন করিতেন না, কিন্তু আদশ পরিষ দশান্ডপ্রণেতারও আদশ, এজন্য কেহ সমাজের অনিস্ট সাধনে উদ্যত হইলে, তিনি তাহাকে দণ্ডিত করিতেন। কৃষ্ণের ক্ষমাগণের প্রসঙ্গ উঠিলে কণা দায্যোধন প্রতি তিনি যে ক্ষমা প্রকাশ করিয়াছিলেন, তাহার উল্লেখ না করিয়া থাকা যায় না। সে উদ্যোগপকেবর কথা, এখন বলিবার নয়। কণা দায্যোধন যে অবস্থায় তাঁহাকে বন্ধন করিবার উদ্যোগ করিয়াছিল, সে অবস্থায় আর কাহাকে কেহ বন্ধনের উদ্যোগ করিলে বোধ হয় যিশ ভিন্ন অন্য কোন মনীষাই শত্রকে মাক্তজনা করিতেন না। কৃষ্ণ তাহদের ক্ষমা করিলেন, পরে বন্ধভাবে কণের সঙ্গে কথোপকথন করিলেন, এবং মহাভারতের যাদ্ধে তাহদের বিরদ্ধে কখন অস্ত্র ধারণ করিলেন না। ভীষ্মেম ও শিশপালে আরও কিছ বিকাবাক হইল। ভীস্ম বলিলেন, “শিশপাল কৃষ্ণের তেজেই তেজস্বী, তিনি এখনই শিশপালের তেজোহরণ করবেন।” শিশপাল জবলিয়া উঠিয়া ভীস্মকে অনেক গালাগালি দিয়া শেষে বলিল, “তোমার জীবন এই ভূপালগণের অনগ্ৰহাধীন, ইহারা মনে করিলেই তোমার প্রাণসংহার করিতে পারেন।” ভীস্ম তখনকার ক্ষত্ৰিয়াদিগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা—তিনি বলিলেন, “আমি ইহাদিগকে তৃণ,তুল্য বোধ করি না।” শনিয়া সমবেত রাজমন্ডলী গজিয়া উঠিয়া বলিল, “এই ভীস্মকে পশ্যাবৎ বধ করা অথবা প্রদীপ্ত হতাশনে দগ্ধ করা।” ভীস্ম উত্তর করিলেন, “যা হয় কর, আমি এই তোমাদের মস্তকে পদাপণ করিলাম।” বড়াকে জোরেও আটিবার যো নাই, বিচারেও আটিবার যো নাই। ভীস্ম তখন রাজগণকে মীমাংসার সহজ উপায়টা দেখাইয়া দিলেন। তিনি যাহা বলিলেন, তাহার স্থল। মক্ষম এই:- “ভাল, কৃষ্ণের পজা করিয়াছি বলিয়া তোমরা গোল করিতেছে; তাঁহার শ্রেষ্ঠত্ব মানিতেছ না। গোলে কাজ কি, তিনি তা সম্পম খেই আছেন—একবার পরীক্ষা করিয়া দেখা না ? যাঁহার মরণকােডতি থাকে, তিনি একবার কৃষ্ণকে যন্ধে আহবান করিয়া দেখােন না ?” শনিয়া কি শিশপাল চুপ করিয়া থাকিতে পারে? শিশপাল কৃষ্ণকে ডাকিয়া বলিল, “আইস, সংগ্রাম করা, তোমাকে যাদ্ধে আহবান করিতেছি।” এখন, কৃষ্ণ প্রথম কথা কহিলেন। কিন্তু শিশপালের সঙ্গে নহে। ক্ষত্ৰিয় হইয়া কৃষ্ণ যদুদ্ধে আহত হইয়াছেন, আর ষদ্ধে বিমখ হইবার পথ রহিল না; এবং যদ্ধেরও ধৰ্ম্মতঃ প্রয়োজন ছিল। তখন সভাস্থ সকলকে সম্বোধন করিয়া শিশপালকৃত পৰ্ব্বাপরাধ সকল একুটি একটি করিয়া বিবত করিলেন। তার পর বলিলেন, “এত দিন ক্ষমা করিয়াছি। আজ ক্ষমা করিব না।” এই কৃষ্ণোক্তি মধ্যে এমন কথা আছে যে, তিনি পিতৃক্ষবসার অন্যুরোধেই তাহার এত অপরাধ ক্ষমা করিয়াছেন। ইতিপকেবই যাহা বলিয়াছি, তাহা স্মরণ করিয়া হয়ত পাঠক জিজ্ঞাসা করিবেন, এ কথাটাও প্রক্ষিপ্ত ? আমাদের উত্তর এই যে, ইহা প্রক্ষিপ্ত হইলেও হইতে পারে, কিন্তু প্রক্ষিপ্ত বিবেচনা করিবার কোন প্রয়োজন দেখি না। ইহাতে অনৈসৰ্গিকতা কিছই নাই; বরং ইহা বিশেষরূপে স্বাভাবিক ও সম্ভব। ছেলে দর্যন্ত, কৃষ্ণদ্বেষী; কৃষ্ণও বলবান, মনে করিলে শিশপালকে মাছির মত টিপিয়া মারিতে পারেন, এমন অবস্থায় পিসী যে ভ্রাতুষ্পপত্রকে অনরোধ করিবেন, ইহা খাব সম্ভব। ক্ষমাপরায়ণ কৃষ্ণ শিশপালকে নিজ গণেই ক্ষমা করিলেও পিসীর অন্যুরোধ স্মরণ রাখিবেন, ইহা খাব সম্ভব। আর পিতৃক্ষবসার পত্রিকে বধ করা আপাততঃ নিন্দনীয় কাৰ্য্য, কৃষ্ণ পিসীর খাতির কিছই করিলেন না, এ কথাটা উঠিতেও পারিত। সে কথার একটা কৈফিয়ৎ দেওয়া চাই। এ জন্য কৃষ্ণের এই উক্তি খাব সঙ্গত । তার পরেই আবার একটা অনৈসগিক কাপড় উপস্থিত। শ্ৰীকৃষ্ণ, শিশপালের বধ জন্য আপনার চক্রাস্ত্র সমরণ করিলেন। স্মরণ করবা মাত্র চক্র তাঁহার হাতে আসিয়া উপস্থিত হইল। তখন কৃষ্ণ চক্রের দ্বারা শিশপালের মাথা কাটিয়া ফেলিলেন । R: