পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিল রচনাবলী বীর সকল এবং মহাবলপরাক্রান্ত মনস্বী সত্যপরায়ণ যাদবগণ কৃষ্ণ কত্ত্বক সততই উপদিষ্ট হইয়া থাকেন। কৃষ্ণ ব্রাতা ও কৰ্ত্তা বলিয়াই কাশীশ্বর বন্দ্ৰ উত্তম শ্ৰী প্রাপ্ত হইয়াছেন; গ্রীষ্মমাবসানে জলদজাল যেমন প্রজাদিগকে বারিদান করে, তদুপ বাসদেব কাশীশ্বরকে সমদায় অভিলষিত দ্রব্য প্রদান করিয়া থাকেন। কলম নিশ্চয়জ্ঞ কেশব ঈদশ গণসম্পন্ন, ইনি আমাদের নিতান্ত প্রিয় ও সাধ্যতম, আমি কদাচ ইহার কথার অন্যথাচরণ করিব না।” বাসদেব কহিলেন, “হে সঞ্জয়! আমি নিরন্তর পান্ডবগণের অবিনাশ, সমদ্ধি ও হিত এবং সপত্র রাজা ধতিরাষ্ট্রের অভু্যদয় বাসনা করিয়া থাকি। কৌরব ও পান্ডবগণের পরস্পর সন্ধি সংস্থাপন হয়, ইহা আমার অভিপ্রেত, আমি উহাদিগকে ইহা ব্যতীত আর কোন পরামর্শ প্রদান করি না। অন্যান্য পান্ডবগণের সমক্ষে রাজা যধিস্ঠিরের মাখেও অনেক বার সন্ধি সংস্থাপনের কথা শনিয়াছি; কিন্তু মহারাজ ধাতরাষ্ট্র ও তাঁহার পত্ৰগণ সাতিশয় অর্থ লোভী, পাশডবগণের সহিত তাঁহার সন্ধি সংস্থাপন হওয়া নিতান্ত দম্প্রকর, সতরাং বিবাদ যে ক্রমশঃ পরিবদ্ধিত হইবে, তাহার আশ্চৰ্য্য কি ? হে সঞ্জয়! ধৰ্ম্মরাজ যধিস্ঠির ও আমি কদাচ ধৰ্ম্মম হইতে বিচলিত হই নাই, ইহা জানিয়া শনিয়াও তুমি কি নিমিত্ত সাবকৰ্ম্মম সাধনোদ্যত উৎসাহসম্পন্ন সর্বজন-পরিপালক রাজা যধিস্ঠিরকে অধাৰ্ম্মিমক বলিয়া নিৰ্দেশ করিলে?” এই পৰ্যন্ত বলিয়া শ্ৰীকৃষ্ণ ধৰ্ম্মেমরি ব্যাখ্যায় প্রবত্ত হইলেন। এই কথাটা কৃষ্ণচরিত্রে বড় প্রয়োজনীয়। আমরা বলিয়াছি, তাঁহার জীবনের কাজ দাইটি-ধমািরাজ্য-সংস্থাপন এবং ধৰ্ম্মপ্রচার। মহাভারতে তাঁহার কৃত ধৰ্ম্মরাজ্য সংস্থাপন সবিস্তারে বর্ণিত হইয়াছে। কিন্তু তাঁহার প্রচারিত ধৰ্ম্মেমরি কথা প্রধানতঃ ভীষ্মমপকেবর অন্তগত গীতা-পৰ্ব্বব্যাধ্যায়েই আছে। এমন বিচার উঠিতে পারে যে, গীতায় যে ধৰ্ম্ম কথিত হইয়াছে, তাহা গীতাকার কৃষ্ণের মখে বসাইয়াছেন বটে, কিন্তু সে ধৰ্ম্মম যে কৃষ্ণ-প্রচারিত কি গীতাকার-প্রণীত, তাহার স্থিরতা কি ? সৌভাগ্যক্রমে আমরা গীতা-পৰিবাধ্যায় ভিন্ন মহাভারতের অন্যান্য অংশেও কৃষ্ণদত্ত ধর্মোপদেশ দেখিতে পাই। যদি আমরা দেখি যে, গীতায় যে অভিনব ধৰ্ম্মম ব্যাখ্যাত হইয়াছে আর মহাভারতের অন্যান্য অংশে কৃষ্ণ যে ধৰ্ম্ম ব্যাখ্যাত করিতেছেন, ইহার মধ্যে একতা আছে, তাহা হইলে আমরা বলিতে পারি যে, এই ধৰ্ম্ম কৃষ্ণপ্রণীত এবং কৃষ্ণপ্রচারিতই বটে। মহাভারতের ঐতিহাসিকতা যদি সবীকার করি আর যদি দেখি যে, মহাভারতকার যে ধৰ্ম্মম ব্যাখ্যা স্থানে স্থানে কৃষ্ণে আরোপ করিয়াছেন, তাহা সব্বত্র এক প্রকৃতির ধৰ্ম্মম , যদি পােনশচ দেখি যে, সেই ধৰ্ম্মম প্রচলিত ধৰ্ম্মম হইতে ভিন্নপ্রকৃতির ধৰ্ম্মম; তবে বলিব, এই ধৰ্ম্মম কৃষ্ণেরই প্রচারিত। আবার যদি দেখি যে গীতায় যে ধৰ্ম্মম সবিস্তারে এবং পণ্যতার সহিত ব্যাখ্যাত হইয়াছে, তাহার সহিত ঐ কৃষ্ণপ্রচারিত ধৰ্ম্মের সঙ্গে ঐক্য আছে, উহা তাহারই আংশিক ব্যাখ্যা মাত্র, তবে বলিব যে, গীতোক্ত ধৰ্ম্ম যথার্থই কৃষ্ণপ্রণীত বটে। এখন দেখা যাউক, কৃষ্ণ এখানে সঞ্জয়কে কি বলিতেছেন। “শাঁচি ও কুট-বিপরিপালক হইয়া বেদাধ্যয়ন করতঃ জীবনযাপন করিবে, এইরপে শাস্ত্রনিন্দিৰ্লট বিধি বিদ্যমান থাকিলেও ব্রাহ্মণগণের নানা প্রকার বদ্ধি জন্মিয়া থাকে। কেহ কমবশতঃ কেহ বা কম্পম পরিত্যাগ করিয়া একমাত্র বেদজ্ঞান দ্বারা মোক্ষ লাভ হয়, এইরুপ স্বীকার করিয়া থাকেন; কিন্তু যেমন ভোজন না করিলে তৃপ্তিলাভ হয় না, তদুপ কমান ঠান না করিয়া কেবল বেদজ্ঞা হইলে ব্রাহ্মণগণের কদাচ মোক্ষলাভ হয় না। যে সমস্ত বিদ্যা দ্বারা কম সংসাধন হইয়া থাকে, তাহাই ফলবতী; যাহাতে কোন কম্পমানন্ঠানের বিধি নাই, সে বিদ্যা নিতান্ত নিৰ্ম্মফল।। অতএব যেমন পিপাসাত্ত ব্যক্তির জল পান করিবামাত্র পিপাসা শান্তি হয়, তদুপ। ইহকালে যে সকল কম্পেমর ফল প্রত্যক্ষ হইয়া থাকে, তাহারই অনষ্ঠান করা কত্তব্য। হে সঞ্জয়! কামবশতঃই এইরুপ বিধি বিহিত হইয়াছে; সতরাং কৰ্ম্মই সব প্ৰধান। যে ব্যক্তি কৰ্ম্ম অপেক্ষা অন্য কোন বিষয়কে উৎকৃষ্ট বিবেচনা করিয়া থাকে, তাহার সমস্ত কৰ্ম্মই নিৰ্ম্মফল হয়। “দেখ, দেবগণ কম্পমাবলে প্রভাবসম্পন্ন হইয়াছেন; সমীরণা কৰ্ম্মবলে সতত সঞ্চরণ করিতেছেন; দিবাকর কম বলে আলস্যাশন্য হইয়া অহোরাত্র পরিভ্রমণ করিতেছেন; চন্দ্ৰমা কমাবলে নক্ষত্রমন্ডলী-পরিবত হইয়া মাসাদ্ধ উদিত হইতেছেন; হতাশন কমাবলে প্ৰজাগণের কৰ্ম্ম সংসাধন করিয়া নিরবচ্ছিন্ন উত্তাপ প্রদান করিতেছেন; পথিবী কৰ্ম্মবলে নিতান্ত দন্ডের ভার অনায়াসেই বহন করিতেছেন; স্রোতস্বিতী সকল কাম বলে প্রাণিগণের তৃপ্তিসাধন করিয়া সলিলরাশি ধারণা করিতেছেন; অমিতবলশালী দেবরাজ ইন্দু দেবগণের মধ্যে প্রাধান্য লাভ করিবার

G9.