পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইল না। অতএব উপায়ান্তর না দেখিয়া ভরসাশন্য হইয়াও সন্ধি স্থাপনের জন্য ধাতরাণী সভায় গেলেন। তাহাতেও কিছর হইল না, প্রাণিহত্যা নিবারণ হয় না। তখন রাজনীতিজ্ঞ কৃষ্ণ জনসমহের রক্ষার্থ উপায়ান্তর উদ্ভাবনে প্রবত্ত হইলেন। কৰ্ণ মহাবীরপরিষ। তিনি অর্জনের সমকক্ষ রথী। তাঁহার বাহবিলেই দৰ্য্যোধন আপনাকে বলবান মনে করেন। তাঁহার বলের উপর নিভাির করিয়াই প্রধানতঃ তিনি পান্ডবদিগের সঙ্গে ষদ্ধ করিতে প্রবত্ত। কণের সাহায্য না পাইলে তিনি কদাচ। যমুদ্ধে প্রবত্ত হইবেন। না। কণাকে তাহার শত্রপক্ষের সাহায্যে প্রবত্ত দেখিলেই অবশ্যই তিনি যাদ্ধ হইতে নিবত্ত হইবেন। যাহাতে তাহা ঘটে, তাহা করিবার জন্য কণাকে আপনার রথে তুলিয়া লইলেন। বিরলে কণের সঙ্গে কথোপকথন আবশ্যক। কৃষ্ণের এই অভিপ্রায় সিদ্ধির উপযোগী অন্যের অজ্ঞাত সহজ উপায়ও ছিল। কৰ্ণ অধিরাথনামা সতের পত্র বলিয়া পরিচিত। বস্তুতঃ তিনি অধিরন্থের পত্র নহেনপালিতপত্র মাত্র। তাহা তিনি জানিতেন না। তাঁহার নিজ জন্মবত্তান্ত তিনি অবগত ছিলেন না। তিনি সতপত্নী রাধার গভজাত না হইয়া, কুন্তীর গর্ভজাত, সয্যের ঔরসে তাঁহার জন্ম। তবে কুন্তীর কন্যাকালে তাঁহার জন্ম হইয়াছিল বলিয়া কুন্তী, পত্র ভুমিল্ঠ হইবার পরেই তাঁহাকে পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। বস্তুতঃ তিনি যধিঠিরাদি পান্ডবগণের সহোদর ও জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। এ কথা কুন্তী ভিন্ন আর কেহই জানিত না। আর কৃষ্ণ জানিতেন; তাঁহার অলৌকিক বদ্ধির নিকটে সকল কথাই সহজে প্রতিভাত হইত। কুন্তী তাঁহার পিতৃভবসা; ভোজরাজগহে এ ঘটনা হয়, অতএব কৃষ্ণ মনষ্যবিদ্ধিতেই ইহা জানিতে পারা অসম্ভব নহে। কৃষ্ণ এই কথা এক্ষণে রথার দৃঢ় কণাকে শনাইলেন। বলিলেন, “শাস্ত্রজ্ঞেরা কাহেন, যিনি যে কন্যার পাণিগ্রহণ করেন, তিনিই সেই কন্যার সহোঢ় ও কানীনপত্রের পিতা। হে কণী ! তুমিও তোমার জননীর কন্যাকােলাবস্থায় সমাৎপন্ন হইয়াছ, তন্নিমিত্ত তুমি ধৰ্মমতঃ পত্র; অতএব চল, ধৰ্ম্মমশাস্ত্রের বিরুদ্ধেও* তুমি রাজ্যেশ্বর হইবে।” তিনি কণাকে বঝাইয়া দিলেন যে, তিনি জ্যোিঠ, এ জন্য তিনিই রাজা হইবেন, অপর পাঞ্চ পান্ডব তাঁহার আজ্ঞানবেত্তী হইয়া তাঁহার পরিচয্যায় নিযক্ত থাকিবে। কৃষ্ণের এই পরামর্শ সব্বজনের ধৰ্ম্মম বিদ্ধিকর ও হিতকর। প্রথমতঃ কণের পক্ষে হিতকর, কেন না, তিনি রাজ্যেশ্বর হইবেন, এবং তাঁহার পক্ষে ধৰ্ম্মান মত, কেন না, ভ্ৰাতৃগণের প্রতি শত্রভাব পরিত্যাগ করিয়া মিত্রভাব অবলম্বন করিবেন। ইহা দায্যোধনাদির পক্ষেও পরম হিতকর, কেন না, যদ্ধ হইলে তাঁহারা কেবল রাজ্যভ্রন্ট নহে, সবংশে নিপাতপ্রাপ্ত হইবারই সম্ভাবনা। যাদ্ধ না হইলে তাঁহাদের প্রাণও বজায় থাকিবে, রাজ্যও বজায় থাকিবে, কেবল পাগড়বের ভাগ ফিরাইয়া দিতে হইবে। ইহাতে পান্ডবদিগেরও হিত ও ধৰ্ম্ম, কেন না যাদ্ধারােপ নশংস ব্যাপারে প্রবত্ত না হইয়া, আত্মীয় সবজন জ্ঞাতি বধ না করিয়াও, সবরাজ্য কর্ণের সহিত ভোগ করবেন। আর এ পরামশের পরম ধৰ্ম্মম্যতা ও হিতকারিতা এই যে, ইহা দ্বারা অসংখ্য মনকেষ্যগণের প্রাণ রক্ষা হইতে পরিবে। কণও কৃষ্ণের কথার উপযোগিতা স্বীকার করিলেন। তিনিও বঝিয়াছিলেন যে, এ যন্ধে দষ্যোধনাদির রক্ষা নাই। কিন্তু কৃষ্ণের কথায় সম্মত হইলে তাঁহাকে কোন কোন গারতের অপরাধে অপরাধী হইতে হয়। অধিরথ ও রাধা তাঁহাকে প্রতিপালন করিয়াছে। তাহদের আশ্রয়ে থাকিয়া সত্যবংশে বিবাহ করিয়াছেন, এবং সেই ভাৰ্য্যা হইতে তাঁহার পত্ৰ পৌত্ৰাদি জলিময়াছে। তাহাদিগকে কোন মতেই কণী পরিত্যাগ করিতে পারেন না। আর তিনি

  • “বিরদ্ধে”ও এই পদটি কালীপ্রসন্ন সিংহের অন্যবাদে আছে, কিন্তু ইহা এখানে অসঙ্গত বলিয়া বোধ হয়। অামার কাছে মল মহাভারত যাহা আছে, তাহাতে দেখিলাম, নিগ্ৰহাদ্ধমশাস্ত্রণাম আছে। বোধ হয়। নিগ্ৰহাথমিশাস্ত্রণাম হইবে। তাহা হইলে অর্থ সঙ্গত হয়।

এই অংশ ছাপা হওয়ার পর জানিতে পারিলাম যে, ইহার অন্যতম পাঠও আছে, যথা-“নিগ্রেহান্ধান্ম' শাস্ত্রাণাম।” এ স্থলে নিগ্ৰহ অৰ্থে মৰ্যাদা। যথা “নিগ্রেহে ভৎসনেহাপি স্যাৎ মৰ্য্যাদায়াণ্ড বন্ধনে।”-ইতি মেদিনী। “নিগ্রেহে ভৎসনে প্রোক্তো মৰ্য্যাদায়াণ্ড বন্ধনে।”-ইতি বিশ্ব । , - “নিয়মেন বিধিনা গ্ৰহণং নিগ্ৰহঃ ”-ইতি চিন্তামণিঃ। 'ኣ ዃ ሶ حم۔“