পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী রামায়ণে কিছ কিছ. নীতিগভর্ণ কথা আছে। বদ্ধিহীনতার যে , কত দোষ, তাহা কবি বাঝাইবার চেন্টা করিয়াছেন। এক নিষেবাধ প্রাচীন রাজার চারিটি ভাৰ্য্যা ছিল। বহ-বিবাহের বিষময় ফল সহজেই উৎপন্ন হইল। বদ্ধিমতী কৈকেয়ী সর্বীয় পত্রের উন্নতির জন্য, অসভ্য বদ্ধকে ভুলাইয়া ছল ক্ৰমে সপত্নীগভজাত রাজার জ্যেষ্ঠ পত্রিকে বনবাসে প্রেরণা করিল। জ্যেষ্ঠ পত্রও ভারতবষীয়দিগের সর্বভাব সিদ্ধ। আলস্যবশতঃ আপনি সর্বত্বাধিকার বজায় রাখিবার কোন যত্ন না করিয়া বাড়া বাপের কথায় বনে গেল। ইহার সহিত মহাতেজস্বী তুক বংশীয় ঔরঙ্গজেবের তুলনা কর; মাসলমান কেন এতকাল হিন্দীর উপর প্রভুত্ব করিয়াছে বঝিতে পরিবে। রাম গমনকালে আপনার যাবতী ভাৰ্য্যাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া গেল। তাহাতে যাহা ঘটিবার ঘটিল। ভারতবষীয় সন্ত্রীলোক যে সর্বভাবতই অসতী, এই সীতার ব্যবহারই তাহার উত্তম প্রমাণ। সীতা যেমন গাহের বাহির হইল, অমনই অন্য পরষ ভজনা করিল। রামকে ত্যাগ করিয়া রাবণের সঙ্গে লঙ্কায় রাজ্যভোগ করিতে গেল। নিবেবন্ধ রাম পথে পথে কাঁদিয়া বেড়াইতে লাগিল। হিন্দরা এই জন্যই সত্ৰীলোকদিগকে গহের বাহির করে না। 门 হিন্দস্বভাবের জঘন্যতার লক্ষণ আর একটি উদাহরণ। তাহার চরিত্র এরপে চিত্রিত হইয়াছে যে তক্ষদ্বারা লক্ষণকে কম্পমােক্ষম বোধ হয়। অন্যজাতীয় হইলে সে একজন বড় লোক হইতে পারিত, কিন্তু তাহার এক দিনের জন্যও সে দিকে মন যায় নাই। সে কেবল রামের পিছ পিছ বেড়াইল, আপনার উন্নতির কোন চেন্টা করিল না। ইহা কেবল ভারতবষীয়দিগের সর্বভাব সিদ্ধ নিশেচম্পটতার ফল । আর একটি অসভ্য মখ ভরত। আপন হাতে রাজ্য পাইয়া ভাইকে ফিরাইয়া দিল। ফলতঃ রামায়ণ অকম্পমা লোকের ইতিহাসেই পণ্য। ইহা গ্রন্থকারের একটি উদ্দেশ্য। রাম পত্নীকে হারাইলে অনায্য (বানর) জাতি তাহার কাতরতা দেখিয়া দয়া করিয়া রাবণকে সবংশে মারিয়া সীতা কাড়িয়া আনিয়া দিল, কিন্তু বান্ধবর জাতির নশংসতা কোথায় যাইবে ? রাম স্ত্রীর উপর রাগ করিয়া তাহাকে একদিন পড়াইয়া মারিতে গেল। দৈব সে দিন সেটার রক্ষা হইল। পরে তাহাকে দেশে আনিয়া দই চারি দিন মাত্র সখে ছিল। পরে বন্বিরজাতির সর্বভাবসলভ ক্রোধবশতঃ পরের কথা শনিয়া সত্ৰীটাকে তাড়াইয়া দিল। কয়েক বৎসর পরে সীতা খাইতে না পাইয়া রামের দ্বারে আসিয়া দাঁড়াইল। রাম তাহাকে দেখিয়া রাগ করিয়া মাটিতে পতিয়া ফেলিল। অসভ্য জাতির মধ্যে এইরনুপই ঘটে। রামায়ণের স্থলে তাৎপৰ্য্য এই। ইহার প্রণেতা কে, তাহা সহজে স্থির করা যায় না। কিবদন্তী আছে যে, ইহা বালিমীকি প্রণীত। বালিমীকি নামে কোন গ্রন্থকার ছিল কি না, তদ্বিষয়ে সংশয় । বলমীক হইতে বালিমীকি শব্দের উৎপত্তি দেখা যাইতেছে, অতএব আমার বিবেচনায় কোন বিলমীকমধ্যে এই গ্ৰন্থখানি পাওয়া গিয়াছিল। ইহাতে কি সিদ্ধান্ত স্থির করা যায় দেখা যাউক । রামায়ণ নামে একখানি বাঙ্গালা গ্রন্থ আমি দেখিয়াছি। ইহা কৃত্তিবাস প্রণীত। উভয় গ্রন্থে অনেক সাদশ্যে আছে। অতএব ইহাও অসম্ভব নহে যে, বাল্মীকি রামায়ণ কৃত্তিবাসের গ্রন্থ হইতে সঙ্কলিত। বাল্মীকি রামায়ণ কৃত্তিবাস হইতে সঙ্কলিত, কি কৃত্তিবাস বাল্মীকি রামায়ণ হইতে সঙ্কলন করিয়াছেন, তাহা মীমাংসা করা সহজ নহে; ইহা সত্বীকার করি। কিন্তু রামায়ণ নামটিই এ বিষয়ের এক প্রমাণ। “রামায়ণ” শব্দের সংস্কৃতে কোন অর্থ হয় না, কিন্তু বাঙ্গালায় সদর্থ হয়। বোধ হয়, “রামায়ণ” শব্দটি “রামা যবন” শব্দের অপভ্রংশ মাত্র। কেবল “ব’কার লিপ্ত হইয়াছে। রামা যবন বা রামা মসলমান নামক কোন ব্যক্তির চরিত্র অবলম্বন করিয়া কৃত্তিবাস প্রথম ইহার রচনা করিয়া থাকিবেন। পরে কেহ সংস্কৃতে অন্যবাদ করিয়া বািলমীকমধ্যে ল্যুকাইয়া রাখিয়াছিল। পরে গ্রন্থ বিলমীকমধ্যে প্রাপ্ত হওয়ায় বালিমীকি নামে খ্যাত হইয়াছে। রামায়ণ গ্ৰন্থখানির আমরা কিছ প্রশংসা করিয়াছি, কিন্তু বিশেষ প্রশংসা করিতে পারি না। উহাতে অনেক গারতের দোষ আছে। আদ্যোপান্ত অশ্লীলতাঘটিত। সীতার বিবাহ, রাবণকত্ত্বক সীতাহরণ, এ সকল অশ্লীলতাঘটিত না ত কি ? রামায়ণে কারণেরসের অতি বিরল প্রচার। বানরকত্ত্বক সমদ্রবন্ধন, কেবল এইটিই রামায়ণের মধ্যে করুণরসাশিত বিষয়। লক্ষণভোজনে কিঞ্চিৎ বীররস আছে। বশিষ্ঠাদি ঋষিদিগের কিছু হাস্যরস আছে। ঋষিগণ বড় রসিক পরিষ ছিলেন। ধর্মের কথা লইয়া অনেক হাস্য পরিহাস করিতেন। রামায়ণের ভাষা যদিও প্রাঞ্জল এবং বিশদ বটে তথাপি অত্যন্ত অশ্বন্ধ বলিতে হইবে। ՀԵ ::,