পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী আসিয়াছিলেন, তিনি অনগ্ৰহ করিয়া ধাতরাষ্ট্ৰকে দিব্য চক্ষ প্রদান করিতে ইচ্ছা করিলেন। কিন্তু ধাতরাষ্ট্র তাহাতে অস্বীকৃত হইলেন, বলিলেন যে, “আমি জ্ঞাতিবধ সন্দর্শন করিতে অভিলাষ করি না, আপনার তেজঃপ্রভাবে আদ্যোপােন্ত এই যাদ্ধ-বত্তান্ত শ্রবণ করিব।” তখন ব্যাসদেব ধতিরাষ্ট্রের মন্ত্রী সঞ্জয়কে বর দান কবিলেন। বর-প্রভাবে সঞ্জয় হস্তিনাপারে থাকিয়াও কুরক্ষেত্রের যাদ্ধবক্তাম্ভ সকল দিব্য চক্ষে দেখিতে পাইলেন, দেখিয়া ধাতরাষ্ট্ৰকে শনাইতে লাগিলেন । ধাতরাস্ট্র মধ্যে মধ্যে প্রশন করিতেছেন, সঞ্জয় উত্তর দিতেছেন। মহাভারতের যাদ্ধপদ্ধবিগলি এই প্রণালীতে লিখিত। সকলই সঞ্জয়োক্তি। এক্ষণে উভয়পক্ষীয় সেনা যাদ্ধার্থ গীতার এইরুপ আরম্ভ। এই দিব্য চক্ষর কথাটা অনৈসগিক, পাঠককে বিশ্বাস করিতে বলি না। গীতোক্ত ধৰ্ম্মেমরি সঙ্গে ইহার কোন সম্পবিন্ধ নাই। যে ধৰ্ম্মম ব্যাখ্যা গীতার উদ্দেশ্য, প্রথমাধ্যায়ে তাহার কিছই নাই। কি প্রসঙ্গোপলক্ষ্যে এই তত্ত্ব উত্থাপিত হইয়াছিল, প্রথমাধ্যায়ে এবং দ্বিতীযাধ্যায়ের প্রথম একাদশ শ্লোকে কেবল তাহারই পরিচযা আছে। গীতার মৰ্ম্মম হৃদয়ঙ্গম করিবার জন্য এতদংশের কোন প্রয়োজন নাই। পাঠক ইচ্ছা করিলে এতদংশ পরিত্যাগ করিতে পারেন। আমার যে উদ্দেশা, তাহাতে এতদংশের কোন টীকা লিখিবারও প্রয়োজন নাই; ভগবান শঙ্করাচাৰ্যও এতদংশ পরিত্যাগ করিয়াছেন। তবে শ্রেণীবিশেষের পাঠক কোন কোন বিষয়ে কিছ জানিতে ইচ্ছা করিতে পারেন। এজন্য দাই একটা কথা লেখা গেল। কুরক্ষেত্র একটি চক্ৰ বা জনপদ। ঐ চক্ৰ এখনকার স্থানেশ্বর বা থানেশ্বর নগরের দক্ষিণবত্তীর্ণ। আম্পবালা নগর হইতে উহা ১৫ ক্রোশ দক্ষিণ। পানিপাট হইতে উহা ২০o ক্রোশ উত্তর। কুর ক্ষেত্র ও পানিপাট ভারতবর্ষের যাদ্ধক্ষেত্র, ভারতের ভাগ্য অনেক বার ঐ ক্ষেত্রে নিম্পত্তি পাইযাছে। “ক্ষেত্ৰ” নাম শানিয়া ভরসা করি, কেহ একখানি মাঠ বঝিবেন না। কুরক্ষেত্র প্রাচীন কালেই পঞ্চ যোজন দৈঘ্যে এবং পাণ্ড যোজন প্রস্থে। এই জন্য উহাকে সমস্তপণ8ক বলা যাইত। চক্ৰেব সীমা এখন আরও বাড়িয়া গিয়াছে। কুর নামে এক জন চন্দ্রবংশীয় রাজা ছিলেন। তাঁহা হইতেই এই চক্রের নাম কুর ক্ষেত্র হইয়াছে। তিনি দায্যোধনাদির ও পান্ডবদিগের পঞ্চবর্ণপরিষ; এজন্য দর্য্যোধনাদিকে কৌরব বলা হয়, এবং কখন কখন পাশডবদিগকেও বলা হয়। তিনি এই স্থানে তপস্যা করিয়া বর লাভ করিয়াছিলেন, এই জন্য ইহার নাম কুর ক্ষেত্র। মহাভারতে কথিত হইয়াছে যে, তাঁহার তপস্যার কারণেই উহা পণ্যতীর্থ। ফলে চিরকালই কুরক্ষেত্র পণ্যক্ষেত্রে বা ধন্মক্ষেত্র বলিয়া প্ৰসিদ্ধ। শতপথ ব্ৰাহ্মণে আছে, “দেবাঃ হা বৈ সত্ৰং নিষেদরগিরিন্দ্ৰঃ সোমো মখো বিষ্ণবিশ্বেদেবা অন্যন্ত্রেবাশ্বিভ্যাম । তেষাং কুরক্ষেত্ৰং দেবযজনমাস। তন্মাদাহঃ কুরক্ষেত্ৰং দেবযজনম “ অর্থাৎ দেবতারা এইখানে যজ্ঞ করিয়াছিলেন, এজন্য ইহাকে “দেবতাদিগের যজ্ঞস্থান” বলে। মহাভারতেব বনপকেবীর তীর্থযাত্রা পােবাধ্যায়ে কথিত হইয়াছে যে, কুরক্ষেত্রে ত্ৰিলোকীর মধ্যে প্রধান তীর্থ। বনপর্ক্সেব কুরক্ষেত্রের সীমা এইরােপ লেখা আছে-“উত্তরে সরস্বতী দক্ষিণে দষদ্বতী: কুরক্ষেত্র এই উভয় নদীর মধ্যবত্তী।” (৮৩ অধ্যায়।) মনসিংহিতায় বিখ্যাত ব্ৰহ্মাবত্তেরও ঠিক সেই সীমা নিদিদ অট হইয়াছে।-- সরস্বতীদষদ্বত্যোন্দোবনদ্যোন্য দন্তরিং। তং দেবনিৰ্ম্মিতং দেশং ব্ৰহ্মাবৰ্ত্তং প্রচক্ষতে৷ ২ ৷৷ ১৭৷৷ অতএব কুরক্ষেত্র এবং ব্ৰহ্মাবত্ত একই। কালিদাসের নিম্নলিখিত কবিতাতে তাহাই বােকা যাইতেছে। ব্ৰহ্মাবত্তং জনপদমথচ্ছায়যা গাহমানঃ ক্ষেত্ৰং ক্ষত্ৰিপ্ৰঘনপিশনং কৌরবং তদ্ভজেথাঃ । রাজন্যানাং শিতশরশতৈষত্র গান্ডীবধবা ধারাপাতৈঙ্গত্বামিব কমলান্যভাবষন মখানি৷ --মেঘদত ৪৯ ৷৷ 总b总