পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমন্তগৰক্ষগীতা নাই অর্থাৎ যে বস্তু একবার “আছে” বলিয়া বোধ হইলে আর “নাই” বলিয়া বোধ হয় না, তাহার নাম সং। আর যে বস্তু একবার আছে বলিয়া বোধ হইলে পরে আবার নাই বলিয়া বোধ হয়, তাহার নাম অসং । এই রাপে বদ্ধিতন্ত্র সৎ ও অসৎ দই ভাগে বিভক্ত, এবং সকলেই সব্বত্র এই দই প্রকার জ্ঞান হইতেছে বলিয়া উপলব্ধি করেন। বিশেষণ ও বিশেষ্য পদ এক বিভক্তিতে বৰ্ত্তমান থাকিলে তাহদের অভেদ হয়, যেমন "নীলং উৎপলং” ইহার অর্থ উৎপল নীল হইতে অভিন্ন, অথাৎ ঐ উৎপলের জ্ঞান হইলে তাহার সঙ্গে সঙ্গে অভিন্নভাবে নীলত্বেব জ্ঞান হইবে। এইরপে যখন “ঘটঃ সন “ পট সন” “হস্তী সন” ইত্যাদি জ্ঞান হয, তখন ঘটজ্ঞানের সহিত সৎ” এই জ্ঞান অভিন্নভাবে উৎপন্ন হয। সতরাং সৎ ও অসৎ ভেদবদ্ধির যে কল্পনা কবা হইতেছিল, তাহা নিরর্থক হয। কিন্তু লোকে এরপে অভিন্নভাবে উপলব্ধি করে না। এই বদ্ধিদ্বয্যের (সং ও অসৎ) মধ্যে ঘটাদি বদ্ধির ব্যভিচাব হন, তাহা প্ৰদশিত হইযাছে; সৎ বদ্ধির ব্যভিচার হয় না। অতএব ব্যভিচার হয় বলিয়া সে পদার্থ ঘটাদি বদ্ধির বিষয, তাহা অসং. এবং অব্যাভিচার হয় না বলিযা উহা বদ্ধির বিষম হইতে পারে না। যদি বল, ঘট বিনন্ট হইলে যখন ঘটিবদ্ধির ব্যভিচার হয, তখন সেই সঙ্গে সঙ্গে সংবদ্ধিরও ব্যভিচার হউক (অর্থাৎ আপত্তিকারীব মতে ঘটবদ্ধি ও সংবদ্ধি অভিন্ন সাতবাং ঘটবদ্ধিব ব্যভিচার হইলে সংবদ্ধিরও ব্যভিচার হউক।)। এই আপত্তি খাটিতে পারে না; কাবণ, তৎকালে সেই সংবদ্ধি ঘটাদিতে বত্তমান থাকে (সাতবাং উহার ব্যভিচাল হয় না।) সে সংবদ্ধি বিশেষণভাবে অবস্থিত, সতরাং (বিশেষ্যনাশে) বিনম্ৰাট হয না। যদি বল, সংবদ্ধিব স্থলে যেবাপ মাক্তি অন্যাসারে একটি ঘাট বিনষ্ট হইলেও অন্য ঘটে ত ঘটবদ্ধি থাকে “সতরাং ঘাটবাদ্ধি সং হউক ” এ আপত্তি ইহাতে খাটিতে পাবে না, যেহেতু সে ঘটপদ্ধি পটাদিতে থাকে না। যদি বল সংবদ্ধিও ঘট নন্ট হইলে দষ্ট হল না। এ কথা গরতের নহে। সংবদ্ধি বিশেষণভাবে অবস্থিত, বিশেষ্যেৰ অভাব হইলে বিশেষণ থাকিতে পারে না। থাকিলে তাহার বিষয় কি হইবে ? বিষযের অভাব হইলে সৎবদ্ধি থাকে না। যদি বল ঘটাদি বিশেষের অভাব হইলেও বিশেষণ বিশেষ্য ভাবে এক বিভক্তিতে উল্লেখ করা যায বলিযা ঘট সং হইবে তাহার উত্তর এই যে, মরীচিকা প্রভৃতি স্থলেও সংবদ্ধি এবং উদক, উভযোেব অভাব হইলেও এক বিভক্তিতে “সং ইন্দং উদকং এবােপ ব্যবহার হয (ইহাব দ্বাবা এক বিভক্তিতে উল্লেখ হওয়া সং অথবা অসৎ, এ উভয়েব কোন পক্ষেই প্রমাণ নহে)। অতএব দেহাদি দ্বন্দ্ব কারণ হইতে উৎপন্ন ও অসৎ উহার অস্তিত্ব নাই ; এবং সৎ যে আত্মা তাঁহারও কোথাও অভাব নাই, যেহেতু তাঁহার কোথাও ব্যভিচােব হত্য না। ইহাই সং এবং অসংরপ আত্মা এবং অনাত্মার সম্বর পনির্ণয। যে সং, সে সংই; যে অসৎ সে অসংই।* শঙ্করাচায্য যেমন দিগ্বিজযী পন্ডিত, এই দার্শনিক বিচারও তাহার উপযক্তি। তবে উনবিংশ শতাব্দীর পাশ্চাত্তা শিক্ষার সঙ্গে ইহা বড় মিশিবে না। সখি দঃখকে সৎই বল আর অসংই বল সখি দঃখ আছে। থাকিবে না। সত্য, কিন্তু নাই, এ কথা বলিবার বিষযা নাই। কিন্তু থাকিবে না, এইটাই বড় কাজেব কথা। তবে সহ্য কবিতে পাবিলেই দঃখ নকেট হইবে। '--The darkest day, Wait till to-morrow, Will have passed away.' এখন ১৪ । ১৫ । ১৬. এই তিন শ্লোকে যাহা উক্ত হইল, তাহা ভাল করিয়া না বঝিলে, কয়েকটি আপত্তি উপস্থাপিত হইতে পারে। প্রথম আপত্তি, দঃখ সহ্য করিতে হইবে-নিবারণ করিতে হইবে না ? অজ্ঞজনের দঃখ, জ্ঞাতি-বন্ধ-বধ; যাদ্ধ না করিলেই সে দঃখ নিবারণ হইল; দঃখনিবারণের সহজ উপায় আছে। এ স্থলে তাঁহাকে দঃখনিবারণ করিতে উপদেশ না দিয়া, ভগবান দঃখ সহ্য করিতে উপদেশ দিতেছেন, ইহা কিরােপ উপদেশ ? রোগীর রোগের উপশমের জন্য ঔষধ ব্যবহার করিতে পরামর্শ না দিয়া, তাহাকে রোগের দঃখ সহ্য করিতে উপদেশ দেওয়ার সঙ্গে কি এ উপদেশ তুল্য নহে?

  • শাস্কর ভাষ্যের এই অনাবাদ আমরা কোন বন্ধব নিকট উপহার প্রাপ্ত হইয়াছি।

GRS )