পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাৰলী না তাহা নহে। দঃখ নিবারণের কোন নিষেধ নাই। তবে যেখানে দঃখ নিবারণ করিতে গেলে অধৰ্ম্মম হয়, সেখানে দঃখ নিবারণ না করিয়া সহ্য করবে। যে যন্ধে অজ্ঞজনে প্রবত্ত, তাহা ধৰ্ম্মমষিদ্ধ। ধৰ্ম্মমর্যদ্ধের অপেক্ষা ক্ষত্ৰিয়ের আর ধৰ্ম্মম নাই। ধৰ্ম্মম পরিত্যাগে অধৰ্ম্ম । অতএব এ স্থলে দঃখ সহ্য না করিয়া নিবারণ করিলে অধৰ্ম্ম আছে। এজন্য এখানে সহ্য করিতে হইবে, নিবারণ করা হইবে না। দ্বিতীয় আপত্তি এই, দঃখই সহ্য করিবে—সখি সহ্য করা কিরুপ ? সখি দঃখ সমান জ্ঞান করিব ? তবে ভগবানের কি এই আজ্ঞা যে, পথিবীর কোন সখে সখি হইবে না ? তবে আর asceticism কাহাকে বলে ? সখশান্য ধৰ্ম্মম লইয়া কি কইবে ? ইহার উত্তর পকেবই লিখিয়াছি। ইন্দ্রিয়ের অধীন যে সখি, তাহা দঃখের কারণ-তােহা দঃখমধ্যে গণ্য। ইন্দ্রিয়াদির অনধীন যে সখি, যথা—জ্ঞান, ভক্তি, প্রীতি, দয়াদিজনিত যে সখি, তাহা গীতোক্ত ধৰ্ম্মানসারে পরিত্যাজ্য নহে, বরং গীতোক্ত ধর্মের সেই সখই উদ্দেশ্য। আর ইন্দ্ৰিয়ের অধীন যে সখি, তাহাও প্রকৃতপক্ষে পরিত্যাজ্য নহে। তৎপরিত্যাগও গীতোক্ত ধৰ্ম্মেমরি উদ্দেশ্য নহে। তাহাতে অনাসক্তই গীতোক্ত ধর্মের উদ্দেশ্য, পরিত্যাগ উদ্দেশ্য নাহে । রাগদ্বেষবিমক্তৈস্তু বিষয়ানিন্দ্ৰিয়ৈশ্চরন। আত্মবশ্যৈবিধেয়াত্মা প্ৰসাদমধিগচ্ছতি ৷ ২ ৷৷ ৬৪ ৷৷ উক্ত চতুঃষষ্টিতম শ্লোকের ব্যাখ্যাকালে আমরা এ বিষয়ে আরও কিছর বািলব । আমরা দেখিতেছি যে দ্ব দশ শ্লোকে হিন্দধমের প্রথম তত্ত্ব সাঁচিত হইয়।” ই- আত্মার অবিনাশিত। ব্ৰয়োদশ শ্লোকে উদ্ধ তীয় তত্ত্ব-জন্মান্তরবাদ । চতুদশ, পঞ্চদশ, এবং ষোড়শ শ্লোকে তৃতীয় তত্ত্ব সচিত হইতেছে-সখদঃখের অনাত্মধাৰ্ম্মিমতা ও অনিত্যত্ব। সাংখ্যদর্শনের ব্যাখ্যার উপলক্ষে আত্মার সঙ্গে সখদঃখে সম্পবিন্ধ প'ৰ্ব্বে যেরূপ বসবাইয়াছিলাম, তাহা বিকাইতেছি। “শরীরাদি ব্যাতিরিক্ত পরিষ। কিন্তু দঃখ, ত শারীরাদিক; শারীরাদিতে সে দঃখের কারণ নাই,-এমন দঃখ নাই। যাহাকে মানসিক দঃখ বলি-বাহ্য পদার্থই তাহার মল। আমার বাক্যে তুমি অপমানিত হইলে, আমার বাক্য প্রাকৃতিক পদার্থ, তাহা শ্রবণেন্দ্রিমের দ্বীণা তুমি গ্রহণ করিলে, তাহাতে তোমার দঃখ। অতএব প্রকৃতি ভিন্ন দঃখ নাই, কিন্তু প্রকৃতিঘটিত দঃখ পরিষে বত্তে কেন ? “আঙ্গোহযাম্প, রােষঃ । পরীষ একf, কাহারও সংসগবিশিষ্ট নহে। (১ম অধ্যায়ে ১৫শ সত্ৰ।) অবস্থাদি সকল শরীরের, আত্মার নহে। (ঐ, ১৪ সত্ৰ) । “ন বাহ্যান্তরয়োর পরাজ্যোপিরঞ্জকভাবোহপি দেশব্যবধানাৎ স্ত্ৰ ঘােস্থপাটলিপত্রস্থয়োরিব।” বাহ্য এবং আন্তরিকের মধ্যে উপরাজ্য এবং উপরঞ্জক ভাব নাই; কেন না, তাহ পরস্পর সংলগ্ন নহে, দেশব্যবধানবিশিস্ট, যেমন এক জন পাটলিপত্র নগরে থাকে, আর একজন স্রািঘর নগরে থাকে, ইহাদিগের পরস্পরের বাবধান তদুপ। তবে পরিষের দঃখ কেন ? প্রকৃতির সংযোগই দঃখের কাবণ। বাহো আন্তরিকে দেশব্যবধান আছে বটে, কিন্তু কোন প্রকার সংযোগই নাই, এমতি নহে। যেমন স্ফটিক পাত্রের নিকট জবাকুসম রাখিলে পাত্র পম্পের বণ বিশিষ্ট হয় বলিয়া, পলিপ এবং পাত্রে এক প্রকার সংযোগ আছে বলা যায়, এ সেইরাপ সংযোগ। পাম্প এবং পাত্র মধ্যে দেশব্যবধান থাকিলেও পাত্রের বণ বিকৃত হইতে পারে; ইহাও সেইরাপ। এ সংযোগ নিত্য নহে, দেখা যা ইতেছে ; সতরাং ত্যাহার উচ্ছেদ হইতে পারে। সেই সংযোগ উচ্ছেদ হইলেই দঃখের কারণ অপনীত হইল। অতএব এই সংযোগের উচ্ছত্তিই দঃখনিবারণের উপায়, সতরাং তাহাই পবর্ষার্থ। “যদ্বা তদ্ধা তদচ্ছিত্তিঃ পরিষার্থস্তদচ্ছিত্তিঃ পরিষার্থঃ (৬, ৭ )।* অবিনাশি তু তদ্বিদ্ধি যেন সব্বমিদং ততম। বিনাশমব্যয়স্যাস্য ন কশিচৎ কত্তমহৰ্ণতি ॥ ১৭ ৷৷ যাহার দ্বারা এই সকলই ব্যাপ্ত, তাহাকে অবিনাশী জানিবে। এই অব্যয়ের কেহই বিনাশ করিতে পারে না। ১৭ ৷৷ “যাহার দ্বারা” অৰ্থাৎ পরমাত্মার দ্বারা। এই “সকলই” অর্থাৎ জগৎ । এই সমস্ত জগৎ পরমাত্মার দ্বারা ব্যাপ্ত-শঙ্কর বলেন, যেমন ঘটাদি আকাশের দ্বারা ব্যাপ্ত, সেইরােপ ব্যাপ্ত।

  • প্ৰবন্ধ-পািন্তক হইতে উদ্ধত।

(AS8