পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী এমন কিছতে আবির্ভূত হও। আমি তোমার যে রােপ কলপনা করিয়া গড়িয়াছি, তাহাতে আবির্ভূত হও, আমি তোমার উপাসনা করি। নাহিলে কোথায় পাম্পচন্দন দিব, তদ্বিষয়ে মনঃস্থির করিতে পারি না। এই প্রতিমাপজোর উপরে আমাদের শিক্ষাগার, ইংরেজদিগের বড় রাগ এবং তাঁহাদিগের শিষ্য নব্য ভারতবষীয়েরও বড় রাগ। ইংরেজের রাগ, তাহার কারণ-বাইবেলে ইহার নিষেধ আছে। শিক্ষিত ভারতবষীয়ের রাগ; কেন না, ইংরেজের ইহার উপর রাগ। যাহা ইংরেজে নিন্দা করে, তাহা “আমাদের” অবশ্য নিন্দনীয়। প্রতিমাপজো। ইংরেজের নিকট নিন্দনীয়, অতএব প্রতিমাপজো। অবশ্য “আমাদের” নিন্দনীয়, তাহার আর বিচার আচারের প্রয়োজন নাই। ইংরেজ বলে যে, এই প্রতিমাপজোর জন্য ভারতবর্ষ উৎসন্ন গিয়াছে, এবং ইহার ধবংস না হইলে একেবারে উৎসন্ন যাইবে; সতরাং আমরাও তােহাঁই বিশ্বাস করিতে বাধ্য; তাহার আর বিচার আচারের প্রয়োজন নাই। সত্য বটে, রোম গ্রীস প্রভৃতি প্রাচীন রাজ্য প্রতিমাপজো করিয়াও উন্নত হইয়াছিল, কিন্তু ইংরেজ বলে যে, ভারতবর্ষ প্রতিমাপজায় উৎসন্ন যাইবে, অতএব ভারতবর্ষ নিশ্চয় প্রতিমাপজায় উৎসন্ন যাইবে; তদ্বিষয়ে বিচারের প্রয়োজন নাই। এই রােপ শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকে ভাবিয়া থাকেন। অন্যমত বিবেচনা করা কুশিক্ষা, কুবদ্ধি, এবং নীচাশয়তার কারণ মনে করেন। আমরা এরপ উক্তির অন্যামোদন করিতে পারি না। ঈশ্বর সব্বজ্ঞ, সকলের অন্তযামী। সকলের অন্তরের ভিতর তিনি প্রবেশ করিতে পারেন, সকল প্রকারের উপাসনা গ্রহণ করিতে পারেন; কি নিরাকারের উপাসক, কি সাকারোপাসক, কেহই তাঁহার প্রকৃত স্বরপ অনভূত করিতে পারেন না। তিনি অচিন্তনীয়। অতএব তাঁহার চক্ষে সাকার উপাসকের উপাসনা ও নিরাকার উপাসকের উপাসনা তুল্য; কেহই তাঁহাকে জানে না। যদি ইহা সত্য হয়, যদি ভক্তিই উপাসনার সাের হয়, এবং ভক্তিশান্য উপাসনা যদি তাঁহার অগ্রাহ্যই হয়, তবে ভক্তিযক্তি হইলে সকারোপাসকের উপাসনা তাঁহার নিকট গ্রাহ্য; ভক্তিশান্য হইলে নিরাকারোপাসকের উপাসনা তাঁহার নিকট পৌছিবে না। অতএব আমাদের বিশ্বাস যে, ভারতবষীয়ের যদি ঈশ্বরে ভক্তি থাকে, তবে সাকার উপাসনার ভাবে আচ্ছন্ন হইলেও কেহ উৎসন্ন যাইবে না, আর ভক্তিশান্য হইলে নিরাকারোপাসনায়ও উৎসন্ন হইবে তদ্বিষয়ের কোন সংশয় নাই। সাকার ও নিরাকার উপাসনার মধ্যে আমাদের মতে কোনটাই নিৰ্ম্মফল নহে; এবং এতদভয়ের মধ্যে উৎকষাপকষৰ্ণ নাই। সতরাং উৎকৰ্ষাপকর্ষের বিচার নিম্প্রয়োজনীয়। সাকারোপাসকেরা বলিয়া থাকেন, নিরাকারের উপাসনা হয় না। অনন্তকে আমরা মনে ধরিতে পারি না, সতরাং তাঁহার ধ্যান বা চিন্তা আমাদের দ্বারা সম্ভব নহে, এ কথারও বিচার নিম্প্রয়োজন বোধ হয়। কেন না, এমন যদি কেহ থাকেন যে, তিনি আপনার সান্ত চিন্তা শক্তির দ্বারা অনন্তের ধ্যান বা চিন্তায় সক্ষম, এবং তাঁহাতে ভক্তিযক্তি হইতে পারেন, তবে তিনি নিরাকারেরই উপাসনা করেন। যিনি তাহা না পারেন, তাঁহাকে কাজেই সাকারের উপাসনা করিতে হইবে। অতএব সাকারোপাসক ও নিরাকারোপাসকের মধ্যে বিচার, বিবাদ ও পরস্পরের বিদ্বেষের কোন কারণ দেখা যায় না। পাঠক সমরণ রাখিবেন যে, আমি ”সাকারের উপাসনা," এবং “সাকারোপাসক” ভিন্ন “সাকারবাদ" বা “সাকারবাদী” শব্দ ব্যবহার করিতেছি না। কেন না, “সাকারবাদ” অবশ্য পরিহায্য। ঈশ্বর সাকার নহেন, ইহা পর্ক্সেবাই বলা গিয়াছে। কথাটা উঠিতে পারে যে, ঈশ্বর যদি সাকার নহেন, তবে হিন্দধমের অবতারবাদের কি হইবে ? এই গীতার বক্তা কৃষ্ণকে উদাহরণস্বরপ গ্রহণ করা যাউক। ঈশ্বর নিরাকার, কিন্তু কৃষ্ণ সাকার। ইহাকে তবে কি প্রকারে ঈশ্বরাবতার বলা বাইবে ? এই প্রশেনর যথাসাধ্য উত্তর আমি কৃষ্ণচরিত্র নামক মৎপ্রণীত গ্রন্থে দিয়াছি, সতরাং এখানে সে সকল কথা পনেকবার বলিবার প্রয়োজন নাই। ঈশ্বর সব্বশক্তিমান, সতরাং ইচ্ছানসারে তিনি যে আকার ধারণ করিতে পারেন না, একথা বলিলে তাঁহার শক্তির সীমা নিন্দেশ করা হয়। “যেন সব্বমিদং ততম” ইত্যাদি বাক্যে অনেকের এইরপ ভ্ৰম জন্মিতে পারে যে, বিলাতী ಸ್ಲೀan এবং হিন্দধম্মের ঈশ্বরবাদ বঝি একই। স্থানান্তরে এই ভ্ৰমের নিরাস করা CS