পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমন্তগৰগীত নেতা শাক্যসিংহ-তিনি বলিলেন, কৰ্ম্মফল মানি বটে, কিন্তু কৰ্ম্ম হইতেই দঃখ। কৰ্ম্ম হইতে পানজন্ম। অতএব কম্মের ধবংস করু, তৃষ্ণা নিবারণ করিয়া চিত্তসংযমপক্ষেবাক অষ্টাঙ্গ ধৰ্ম্মপথে গিয়া নিৰ্ব্বাণ লাভ কর। তৃতীয় বিপ্লব দার্শনিকদিগের দ্বারা উপস্থিত হইয়াছিল। তাহারা প্রায় ব্ৰহ্মবাদী। তাঁহারা দেখিলেন যে, জগতের যে অনন্ত কারণভূত চৈতনের অন্যাসন্ধানে তাঁহারা প্রবত্ত, তাহা অতিশয় দাভেদ্ৰয়। সেই ব্ৰহ্ম জানিতে পারিলে—সেই জগতের অন্তরাত্মা বা পরমাত্মার সঙ্গে আমাদের কি সম্পবিন্ধ এবং জগতের সঙ্গে বা তাঁহার বা আমাদের কি সম্পবিন্ধ, তাহা জানিতে পারিলে বঝা যাইতে পারে যে, এ জীবন লইয়া কি করিতে হইবে। সেটা কঠিন —তাহা জানাই ধৰ্ম্ম-অতএব জ্ঞানই ধৰ্ম্ম-জ্ঞানই নিঃশ্ৰেয়স। বেদের যে অংশকে উপনিষদ বলা যায়, তাহা এই প্রথম জ্ঞানবাদীদিগের কীৰ্ত্তি। ব্রহ্মনিরাপণ ও আত্মজ্ঞানই উপনিষদ সকলের উদ্দেশ্য। তার পর ছয় দশনে এই জ্ঞানবাদ আরও বিবদ্ধিত ও প্রচারিত হইয়াছে। কপিলের সাংখ্যে ব্ৰহ্ম পরিত্যক্ত হইলেও সে দশনশাস্ত্র জ্ঞানবাদাত্মক।” শ্ৰীকৃষ্ণ এই জ্ঞানবাদীদিগের মধ্যে। কিন্তু অন্য জ্ঞানবাদী যাহা দেখিতে পায় না, অনন্তজ্ঞানী তাহা দেখিয়াছিলেন। তিনি দেখিয়াছিলেন যে, জ্ঞান সকলের আয়ত্ত নহে ; অন্ততঃ অনেকের পক্ষে অতি দঃসাধ্য। তিনি আরও দেখিয়াছিলেন, ধন্মের অন্য পথও আছে; অধিকারভেদে তাহা জ্ঞানাপেক্ষা দঃসাধ্য। পরিশেষে ইহাও দেখিয়াছিলেন, অথবা দেখাইয়াছেন-জ্ঞানমাগ এবং অন্য মাগ, পরিণামে সকলই এক। এই কয়টি কথা লইয়া গীতা। ত্ৰৈগণ্যবিষয়া বেদা নিস্ত্ৰৈগণ্যো ভবাজােন। নিদ্বন্দ্বে নিত্যসত্ত্বস্থো নিযোগক্ষেম আত্মবান ৷৷ ৪৫ ৷৷ হে অজােন! বেদ সকল ত্ৰৈগণ্যবিষয়; তুমি নিস্ত্রৈগণ্য হও। নিদ্বন্দ্ব, নিত্যসত্ত্বস্থ, যোগক্ষেম-রহিত এবং আত্মবান হও । ৪৫ ৷৷ এই শ্লোকে ব্যবহৃত শব্দগলির বিস্তৃত ব্যাখ্যা করা প্রয়োজনীয় বলিয়া অনলাদে তাহার কিছই পরিস্কার করা গেল না। প্রথম “ত্ৰৈগণ্যবিষয়" কি ? সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ, এই ত্ৰিগণা; ইহার সমষ্টি ত্ৰৈগণ্য। এই তিন গণের সমষ্টি কোথায় দেখি ? সংসারে। সেই সংসার যাহার বিষয়, অর্থাৎ প্রকাশয়িতব্য (Subject), তাহাই “ত্ৰৈগণ্যবিষয়”। শঙ্করাচাৰ্য্য এই রােপ অৰ্থ করিয়াছেন। তিনি বলেন—“ত্ৰৈগণ্যবিষয়াঃ ত্ৰৈগণ্যং সংসারো বিষয়ঃ প্রকাশয়িতব্যো যেষাং তে বেদাস্ত্রৈগণ্যবিষয়া।” ইহাও একটা বেদনিন্দার মত শোনায়। অতএব শঙ্করের টীকাকাব আনন্দগিরি প্রমাদ গণিয়া সকল দিক বজায় রাখিবার জন্য লিখিলেন, “বেদশবেদনাত্ৰ কৰ্ম্মকান্ডমেব গহ্যতে। তদভ্যাসবােতাং তদনন্ঠানদ্বারা সংসারপ্নৌব্যান্ন বিবেকাবসরোহস্তীত্যথাঃ" অর্থাৎ “এখানে বেদ শব্দের অর্থে কম্পমকান্ড বঝিতে হইবে। যাহারা তাহা অভ্যাস করে, তাহদের তদনীন্দ্ঠান দ্বারা সংসারপ্নৌব্য হেতু বিবেকের অবসর থাকে না।” বেদের কতটকু কৰ্ম্মকান্ড, আর কতটকু জ্ঞানকান্ড, সে বিষয়ে কোন ভ্ৰম না ঘটিলে, আনন্দগিরির এ কথায় আমাদের কোন আপত্তি নাই। শ্ৰীধর স্বামী বলেন, “ত্ৰিগণাত্মকাঃ সকাম যে অধিকারিণ্যস্ত।দ্বিষয়াঃ কৰ্ম্মফলসশবন্ধপ্রতিপাদকা বেদাঃ।” এই ব্যাখ্যা অবলম্বনে প্রাচীন বাঙ্গালা অনবোদক হিতলাল মিশ্র বাবাইয়াছেন যে, “ত্ৰিগণাত্মক অর্থাৎ সকাম অধিকারীদিগের নিমিত্তই (!) বেদ সকল কৰ্ম্মফল সম্বন্ধে প্রতিপাদক হয়েনি।” এবং শ্ৰীধরের বাক্যেবই অনসরণ করিয়া কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারতকার এই শ্লোকাদ্ধের অন্যবাদ করিয়াছেন যে, “বেদসকল সকাম ব্যক্তিদিগের কদমফলপ্রতিপাদক।” অন্যান্যও সেই পথ অবলম্বন করিয়াছেন। উভয় ব্যাখ্যা মৰ্ম্মতঃ এক। সেই ব্যাখ্যা গ্রহণ করিয়া এই শ্লোকের প্রথমাদ্ধ বঝিতে চেষ্টা করা যাউক । তাহা হইলেই ইহার অর্থ এই হইতেছে যে, “হে অজ্ঞজন!! বেদ সকল সংসারপ্রতিপাদক বা কৰ্ম্মফলপ্রতিপাদক। তুমি বেদকে অতিক্ৰম করিয়া সাংসারিক বিষয়ে বা কম্পমফল বিষয়ে নিস্কাম হও।” কথাটা কি হইতেছিল, সমরণ করিয়া দেখা যাউক। প্রথমে ভগবান অজ্ঞজনকে সাংখ্যযোগ বক্সাইয়া, তৎপরে কলমযোগ বঝাইবেন অভিপ্রায় প্রকাশ করিয়াছেন। কিন্তু কম্পমাযোগ কি, তাহা এখনও বলেন নাই। কেন না, কৰ্ম্ম সম্পবন্ধে যে একটা গারতের সাধারণ ভ্ৰম প্রচলিত ছিল (এবং এখনও আছে) প্রথমে তাহার নিরাস করা কত্তব্য। নাহিলে প্রকৃত কৰ্ম্ম কি, অর্জন তাহা বঝিবেন না। সে সাধারণ ভ্ৰম এই যে, বেদে যে সকল যজ্ঞাদির ASS