পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাৰলী এইরুপ যেখানে একটি যাবান আর একটি তাবান আছে, সেখানেও বকিতে হইবে যে, দাইটি বিষয় পরস্পর তুলিত হইতেছে। যদি তার পর আবার যাবান তাবান দেখি, তবে অবশ্য বঝিতে হইবে যে, আবার আরও দাইটি পরস্পর তুলিত হইতেছে। ইহার অন্যথা কদাচি হইতে পারে না। এখন এই শ্লোকের মলে মোটে একটি যাবান আর একটি তাবান আছে; অতএব বঝিতে হইবে, দাইটি বিযয় মাত্র পরস্পর তুলিত হইতেছে, অর্থাৎ (১) উদপানে বা সঙ্কীণ জলাশয়ে অবস্থাবিশেষে যাবৎ পরিমিত প্রয়োজন, (২) সমস্ত বেদে অবস্থাবিশেষে তাবৎ প্রয়োজন। কিন্তু প্রাচীন টীকাকারদিগের কৃত যে ব্যাখ্যা, যাহার উদাহরণ উপরে উদ্ধত করিয়াছি, তাহাতে দেখি যে দইটা যাবান এবং দইটা তাবান * অতএব বঝিতে হইবে যে, প্রথমে দইটা বস্তু পরস্পর তুলিত হইলে পর, আবার দইটা বস্তু পরস্পর তুলিত হইয়াছে। প্রথম, সঙ্কীণ জলাশয়ের সঙ্গে সমস্ত বেদ তুলিত না হইয়া মহাহিদের সঙ্গে তুলিত হইতেছে। তার পরে আবার সমস্ত বেদ, সঙ্কীর্ণ জলাশয়ের সঙ্গে সম্প্ৰবন্ধ ছাড়িয়া ব্রহ্মনিষ্ঠার সঙ্গে তুলনা প্রাপ্ত হইল। ইহাতে কোন অর্থ বিপৰ্য্যয় ঘটিতেছে কি না ? সচরাচর এ প্রশেনর এই উত্তর যে, কোন অর্থ বিপৰ্যয় ঘটিতেছে না। কেন না, যাবান তাবান, যেখানে নাও থাকে, সেখানে ব্যাখ্যার প্রয়োজনানসারে ব্যাখ্যাকারকে বসাইয়া লইতে হয়; তাহার উদাহরণ পৰূের্ব দেওয়া গিয়াছে। এ কথার এখানে দাইটি আপত্তি উপস্থিত হইতেছে। প্রথম আপত্তি এই। মানিলাম যে, ব্যাখ্যার প্রয়োজনানসারে ব্যাখ্যাকার যাবান তাবান পারেন। কি ? আমি যদি বলি, আমি যাবৎ না আসি তুমি এখানে থাকিও, তাহা হইলে ব্যাখ্যাকার তাবৎ শব্দ বসাইয়া লইয়া তাবৎ তুমি এখানে থাকিও’ বলিতে পারেন। কিন্তু তিনি যদি যাবৎ কাটিয়া তাবৎ করেন, তাবৎ কাটিয়া যাবৎ করেন, যদি বলেন যে, এই বাক্যের অথ ‘আমি তাবৎ না। আসি, যাবৎ তুমি এখানে থাকিও’ তাহা হইলে তাঁহার ব্যাখ্যা অগ্রাহ্য ও মহলের বিপরীত বলিতে হইবে। আরও একটা উদাহরণের দ্বারা কথাটা আরও সািপম্পটি করা যাউক । “যাবৎ তোমার জীবন, তাবৎ আমার সখি।” (ক) এই বাক্যটি উদাহরণ-স্বরপ গ্রহণ কর, এবং তাহাতে (ক।) চিহ্ন দাও। তার পর উহার যাবৎ কাটিয়া তাবৎ কর, তাবৎ কাটিয়া যাবৎ করা। তাহা হইলে বাক্য এইরূপ দাঁড়াইতেছে। “তাবৎ তোমার জীবন, যাবৎ আমার সখি।” (খ) এখন দেখ, বাক্যার্থের কিরােপ বিপৰ্যয় ঘটিল। (ক)-চিহ্নিত বাক্যের প্রকৃত অর্গ যে, “তুমি যত দিন বাঁচিবে, তত দিনই আমি সখী, তার পর আর সখী হইব না।” (খ)-চিহ্নিত বাক্যের প্রকৃত অর্থ “যত দিন আমি সখী থাকিব, তত দিন তুমি বাঁচিবে, তার পর আর তুমি বাঁচিবে না।” অর্থের সম্পপণ্য বিপৰ্য্যয় ঘটিল। অতএব টীকাকার কখনও যাবান কাটিয়া তাবান, তাবান কাটিয়া যাবান করিবার অধিকারী নহেন। কিন্তু এখানে টীকাকার ঠিক তাহাই করিয়াছেন। বঝিবার জন্য শ্লোকের চারিটি চরণে ক্রমান্বয়ে ক, খ, গ, ঘ, চিহ্ন দেওয়া যাক। তাহা হইলে শ্লোকস্থ ‘যাবানের” গায়ে (ক) এবং “তাবানের” গায়ে (গ) চিহ্ন পড়িতেছে। (ক) যাবানাথ উদপানে (গ) তাবান সব্বেষ বেদেষ। (খ) সৰ্ব্ববতঃ সংপ্লতোদকে (ঘ) ব্রাহ্মণস্য বিজানতঃ তদ্ব্যাখ্যায় টীকাকার করিয়াছেন (ক) যাবানর্থ উদপানে (গ) যাবান সব্বেষ বেদেষ (খ) তাবান সৰ্ব্ববতঃ সংপ্লতোিদকে (ঘ) তাবান ব্রাহ্মণস্য বিজানতঃ

  • পর অক্ষরে এই চারিটা শব্দ ছাপিয়াছি, পাঠক মিলাইয়া দেখিবেন।

QSR