পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমদ্ভগবদগীতা তাহা হইলে এই ৪৭ শ্লোকের অর্থ এই হইতেছে যে, কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্মম সকল করিতে হইবে। কিন্তু তাহার ফল কামনা করিবে না, নিস্কাম হইয়া করিবে। এক্ষণে এই মহাকাব্যের প্রকৃত তাৎপৰ্য্য বঝিবার চেষ্টা করা যাউক । ইহার ভিতর দাইটি আজ্ঞা আছে-প্রথম, কৰ্ম্মম করিতে হইবে। দ্বিতীয়, সকল কৰ্ম্মম নিশ্বকাম হইযা করিতে হইবে। এক একটি করিয়া বঝা যাউক। প্রথম, কৰ্ম্মম করিতে হইবে। কৰ্ম্ম করিতে হইবে কেন ? তৃতীয়াধ্যায়ের যে দই শ্লোক উপরে উদ্ধত করিয়াছি, তাহতেই উহা বঝান হইয়াছে। কম আমাদের জীবনের নিযম-law of Life”-কৰ্ম্মম না করিয়া কেহ। ক্ষণকাল তিক্ৰিঠতে পারে না। সকলেই প্রকৃতিজা গণে কম্পমা করিতে বাধ্য হয়। কৰ্ম্মম না করিলে শবীরযাত্ৰাও নিৰ্ব্ববাহ হয় না। কাজেই সকলকে কাম করিতে হইবে। কিন্তু সকল কৰ্ম্মই কি করিতে হইবে ? কতকগলি কৰ্ম্মকে আমরা সংকলম বলি, কতকগলিকে অসৎকৰ্ম্ম বলি। অসৎকৰ্ম্মম ও করিতে হইবে ? অসৎকম আমাদের জীবন নিৰ্ব্ববাহের নিয়ম নহে--ইহা আমাদের l-aw of Life নহে। অসংকলাম না। করিয়া কেহ ক্ষণকাল থাকিতে পারে না, এমন নহে,--অসৎকৰ্ম্মম না করিলে কাহারও শরীর যাত্রা নিৰ্ব্ববাহের বিঘা হয় না। চুরি বা পরদার না করিয়া কেহ যে বাঁচিতে পারে না, এমন নহে। সতরাং অসৎকৰ্ম্মম করিতে হইবে না। তৃতীয় অধ্যায হইতে উদ্ধত ঐ দই শ্লোক হইতে বাবা যাইতেছে, পশ্চাৎ আরও বঝা যাইবে। পক্ষান্তরে ইহাও জিজ্ঞাসিত হইতে পারে যে, যাহাকে সৎকম্পমা বলি তাঁহাই কি আমাদের জীবনযাত্রার নিয়ম ? আমরা কতকগলিকে সংকৰ্ম্ম বলি, যথা-পরোপকারাদি; আর কতকগলিকে অসংকৰ্ম্ম বলি, যথা-পারদারগমনাদি; আর কতকগলিকে সদসং কিছই বলি না, যথা, শয়ন ভোজনাদি। ভাল বঝা গিয়ছে যে, দ্বিতীয শ্রেণীর কৰ্ম্মগলি করিবার প্রয়োজন নাই ; এবং তৃতীয় শ্রেণীর কৰ্ম্মগলি না করিলে নয়, সতরাং করিতে হইবে। কিন্তু প্রথম শ্রেণীর কৰ্ম্মম গলি করিব কেন ? সৎকৰ্ম্মম মনষ্যেজীবনের নিয়ম কিসে? এ কথার উত্তর আমার প্রণীত ধৰ্ম্মমতত্ত্ব নামক গ্রন্থে সবিস্তারে দিয়েছি, সতরাং পািনর ওক্লাব প্রযোজন নাই। আমি সেই গ্রন্থে বঝাই যাছি যে, যাহাকে আমরা সংকলেম বলি তােহাঁই মন:ষ্যত্বের প্রধান উপাদান। অতএব ইহা মনীষাজীবন নিৰ্ব্ববাহের নিযম । বস্তুতঃ কম্পেমর এই ত্ৰিবিধ প্রভেদ করা যায় না। যাহাকে সংকম বলি, আব্ব যাহাকে সদসৎ কিছই বলি না, অথচ করিতে বাধ্য হই, এতদভয়ই মনষ্যেত্ব পক্ষে প্রয়োজনীয়। এই জন্য এই দইকে আমি ধৰ্ম্মতত্ত্বে অনন্ঠেয় কৰ্ম্ম বলিয়াছি। এই টীকাতেও বলিতে থাকিব। এক্ষণে জিজ্ঞাসা হইতে পারে, কোন কৰ্ম্মম অনন্ঠেয় এবং কোন কৰ্ম্মম অনন্ঠেয় নহে, তাহার মীমাংসা কে করিবে ? মীমাংসার স্থল নিয়ম এই গীতাতেই কথিত হইয়াছে, পশ্চাৎ দেখিব; এবং সেই নিযম অবলম্বন করিয়া আমি উক্ত ধৰ্ম্মমতত্ত্ব গ্রন্থে এ তত্ত্ব কিছর দীর মীমাংসা করিযাছি। এই শ্লোকোক্ত প্রথম বিধি, “কৰ্ম্মম করিবে." তৎসম্বন্ধে এক্ষণে এই পয্যন্ত বলিয়। দ্বিতীম বিধি সামান্যতঃ বাবাইব। দ্বিতীয বিধি এই যে, যে কৰ্ম্মম করিবে, তাহা নিম্প্রকাম হইয়া করিবে । একটা উদাহরণ দেওয়া যাউক । পরোপকার অনন্ঠেয় কম্পম। অনেকে পরোপকার এইরহপ অভিপ্ৰায়ে করিয়া থাকে যে, আমি যাহার উপকার করিলাম, সে আমার প্রত্যুপকার করিবে। ইহা সকাম কৰ্ম্ম । ইহা এই विर्ताक्षुब्ब बर्ताश्ड्रऊि । r অনেকে এই অভিপ্ৰায়ে দানাদির দ্বারা পরোপকার করে যে, ইহাতে আমার পণ্যসঞ্চয় হইয়া তংফলে সবগাদি লাভ হইবে। ইহাও সকাম কৰ্ম্ম, এবং এই বিধির বহির্ভূত। অনেকে এইরূপ অভিপ্ৰায়ে পরোপকার করিয়া থাকেন যে, ঈশ্বর ইহাতে আমার উপর প্রসন্ন হইবেন, এবং প্রসািষ হইয়া আমার মঙ্গল করিবেন। তাহা হইতে পারে; ঈশ্বর প্রসন্ন হইবেন। সন্দেহ নাই এবং পরোপকারীর মঙ্গলও করিতে পারেন; কিন্তু ইহা নিস্কাম কৰ্ম্ম নহে। ইহা সকাম, এবং এই বিধির বহির্ভূত। নিকামকামী তাহাও চাহে না, কিছই চাহে না, কেবল আপনার অনন্ঠেয় কম্পমা করিতে চাহে। পরোপকার। আমার অনদ্ঠেয় কৰ্ম্ম-এই জন্য আমি করিব, কোন ফলই চাই না। ইহা নিজ কাম চিত্তভােব।

  • ミー8a «ጳ © q