পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমদ্ভগবদগীতা ফলসিদ্ধিতে হর্ষ নাই বা অসিদ্ধিতে দঃখ নাই। তাহার পক্ষে অসিদ্ধি ও সিদ্ধি সমান। এই সমত্বজ্ঞানই যোগ। তােদশ যোগস্থ হইয়া কম্পমা কর, ইহাই প্রথম বিধি। দরেণ। হ্যবরং কম্পমা বদ্ধিযোগাদ্ধনঞ্জয়। ব্যুদ্ধৌ শরণমন্বিচ্ছ কৃপণাঃ ফলহেতবঃ৷৷ ৪৯ ৷৷ হে ধনঞ্জয়! বদ্ধিযোগ হইতে কৰ্ম্ম অনেক নিকৃষ্ট। বদ্ধিতে আশ্রয় প্রার্থনা কর। যাহারা সকাম, তাহা নিকৃষ্ট ৷৷ ৪৯ ৷৷ বদ্ধিযোগ কাহাকে বলে, তাহা পাবে। কথিত হয় নাই। শ্ৰীধর বলেন, ব্যবসায়াত্মিক-বদ্ধিযক্ত কম্পম যোগই বদ্ধিযোগ। শঙ্কর বলেন, সমত্বাবদ্ধি। সমত্বং যোগ উচ্যতে। তাহা হইতে কৰ্ম্মম অনেক নিকৃষ্ট যখন বলা হইতেছে, তখন বঝিতে হইবে, এখানে কম্পমা শব্দে কাম্য কৰ্ম্ম । ভাষ্যকারেরা এইরহপ বলেন। অতএব শ্লোকের প্রথমাদ্ধের অর্থ এই যে, যে কৰ্ম্মযোগের কথা বলিলাম, তাহা হইতে কাম্য কৰ্ম্মম অনেক নিকৃষ্ট। শ্লোকের দ্বিতীয়াদ্ধে বলা হইতেছে যে, বদ্ধির আশ্রয় গ্রহণ কর বা বদ্ধির অনন্ঠান কর। ইহাতে এখানে “বদ্ধি” শব্দে ঐ বদ্ধিযোগই বঝিতে হয়। ভাষ্যকারেরা বলেন, সংখ্যাবদ্ধি বা জ্ঞান। যদি তাই হয়, তবে প্রথমাদ্ধেও বদ্ধি শব্দে জ্ঞান বঝাই উচিত। তাহা হইলে তৃতীয় অধ্যায়ের আরম্ভে “জ্যায়সী চেৎ কম্পমণিস্তে মতা বদ্ধিজানান্দন” ইত্যাদি বাক্যে আর কোন গোলযোগ হইবে না। কিন্তু পরবত্তী ৫o শ্লোকে কিছর গোলযোগ বাধিবে। বদ্ধিধক্তো জহাতীহ উভে সকৃতদাম্প্রকৃতে । তস্মাৎ যোগায় যজ্যস্ব যোগঃ কম্পমােস কৌশলম ॥ ৫o ৷ যিনি বদ্ধিযক্তি, ইহজন্মে। তিনি সরকৃত দম্প্রকৃত উভয়ই পরিত্যাগ করেন। তডিজন্য তুমি যোগের অনঙ্গঠান কর। কক্ষেম কৌশলই যোগ। ৫o । “বদ্ধিযাও”-অৰ্থাৎ বদ্ধিযোগে যক্ত। যে সকল কম্পেমর ফল সবগাদি, তাহাই সরকৃত; আর যে সকল কম্পেমর ফল নরকাদি, তাহাই দম্প্রকৃত। যিনি বদ্ধিযক্তি, তিনি যাহাতে সবগাদি বা নরকাদি প্রাপ্ত হয়, তােদশ উভয়বিধ কম্পমাই পরিত্যাগ করেন। ইহার তাৎপৰ্য্য এমন নহে যে, তিনি কোন প্রকার সৎকৰ্ম্মম করেন না, অথবা ভাল মন্দ কোন কম্পমাই করেন না। ইহার অর্থ এই যে, তিনি সবগাদি কামনা বা নরকাদির ভয়ে কোন কৰ্ম্ম করেন না। যাহা করেন, তাহা অনন্ঠেয় বলিয়া করেন। অতএব তুমি যোগের অনন্ঠান কর। কন্মে কৌশলই যোগ। প্রাচীন ভাষ্যকারেরা এ কথায় অর্থ করিয়াছেন যে, কৰ্ম্মম বন্ধনজনক; কেন না, কৰ্ম্মম করিলেই পানশাচ জন্মগ্রহণ করিয়া তাহার ফলভোগ করিতে হয়। কিন্তু তােদশ বন্ধনকেও যদি ঈশ্বর।ারাধনার সাহায্যে মাক্তির উপায়ে পরিণত করিতে পারা যায়, তবে তাহাকেই কম্পেমর কৌশল বা চাতুৰ্য বলা যায়। উনবিংশ শতাব্দীতে আমরা এরপ বিঝিতে প্ৰস্তুত নাহি। আমরা বঝি, যিনি কৰ্ম্মে কুশলী, অর্থাৎ আপনার অনন্ঠেয় কৰ্ম্মসকল যথাবিহিত নিৰ্ব্ববাহ করেন, তিনিই যোগী। কমে তােদশ কৌশল বা বিহিত অনষ্ঠানই যোগ। “যোগঃ কম্পমােস কৌশলম।” এ কথার এই অর্থই সহজ এবং সঙ্গত বলিয়া বোধ হয়। যেখানে সহজ অৰ্থ আছে, সেখানে ভাষ্যকার মহামহোপাধ্যায়দিগকে দরি হইতে প্ৰণাম করিয়া, আমরা সেই সহজ অর্থেরই অনবত্তীর্ণ হইব। কৰ্ম্মজং বদ্ধিযক্তা হি ফলং ত্যক্ত বা মনীষিণঃ। জন্মবন্ধবিনিম্পমােক্তাঃ পদং গচ্ছন্ত্যনাময়ম ৷৷ ৫১ ৷৷ বদ্ধিযক্ত জ্ঞানিগণ কৰ্ম্মজনিত ফল ত্যাগ করিয়া, জন্মবন্ধ হইতে মক্ত হইয়া অনাময় পদ 2Teg QCr i GS “বদ্ধিযক্তি”-বদ্ধিযোগাবলম্বী। অনাময় পদ-সৰোবাপন্দ্রবিশন্যে বিষ্ণুপদ। (শ্ৰীধর) যদা তে মোহকলিলং বদ্ধিব্যতিতরিষ্যাতি। তদা গন্তাসি নিবেদং শ্রোতব্যস্য শ্রাতস্য চ ৷৷ ৫২ ৷৷ যবে তোমার বদ্ধি মোহকানন অতিক্রম করিবে, তবে তুমি শ্রোতব্য এবং শ্রত বিষয় সকলে বৈরাগ্য প্রাপ্ত হইবে। ৫২ ৷৷ CWS