পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমন্তগৰক্ষগীতা আর এই বৈজ্ঞানিকতা সম্পবন্ধে আর একটা কথা আছে। মনে কর, এখন ঈশ্বর অনগ্ৰহ করিয়া নািতন ধৰ্ম্মমতত্ত্ব প্রচার করিলেন। এখনকার লোকের বোধগম্য বিজ্ঞান অতিক্ৰম করিয়া, নিজের সব্বজ্ঞতাপ্রভাবে আর তিন চারি হাজার বৎসর পরে বিজ্ঞান যে অবস্থায় দাঁড়াইবে, তাহার সাহিত সংসঙ্গতি রাখিলেন। বিজ্ঞানের যেরপ দ্রুতগতি, তাহাতে তিন চারি হাজার বৎসর পরে বিজ্ঞানে যে কি না করিবে, তাহা বলা যায় না। তখন হয়ত মনষ্যে, জীবন্ত মনষ্য হাতে গড়িয়া সন্টি করিবে, ইথারের তরঙ্গে চড়িয়া সপ্তর্ষিমন্ডল* বা রোহিণী নক্ষত্র বেড়াইয়া আসিবে, হিমালয়ের উপর দাঁড়াইয়া মঙ্গলাদি গ্ৰহ-উপগ্রহবাসী কিম্ভূতকিমাকার জীবগণের সঙ্গে কথোপকথন বা যদ্ধ করিবে, এ বোলা ও বেলা সােয্যলোকে অগ্নিভোজনের নিমন্ত্রণ রাখিতে যাইবে। মনে কর, ভগবান, সব্বজ্ঞতাপ্রযক্ত এই ভাবী বিজ্ঞানের সঙ্গে সংসঙ্গতি রাখিয়া তদপেযোগী ভাষায় নাতন ধৰ্ম্মমতত্ত্ব প্রচার করিলেন। করিলে, শনিবে কে ? বঝিবে কে ? অন্যবিত্তী হইবে কে ? কেহ না। এই জন্য ঈশ্বরোক্তি সময়োপযোগী ভাষায় প্রচারিত হওয়া উচিত। তার পর ক্রমশঃ মানষের জ্ঞানবদ্ধির সঙ্গে সেই প্রাচীন কালোপযোগী ভাষার দেশ কাল পাত্রের উপযোগী ব্যাখ্যা হইতে পারে। সেই জন্যই শঙ্করাদি দিগিবজয়ী পন্ডিতকৃত গীতাভাষ্য থাকিতেও, আমার ন্যায় মাখ অভিনব ভাষ্যরচনায় সাহসী। এই সাতটি শ্লোক যে বৈজ্ঞানিক অসত্যে কলঙ্কিত, এই প্রথম আপত্তির আমি এই তিনটি উত্তর দিলাম। দ্বিতীয় আপত্তি এই উপস্থিত হইতে পারে যে, এই সাতটি শ্লোক গীতোক্ত নিভকাম ধমের বিরোধী। এ আপত্তি অতি যথার্থ। তবে এই কয়টি শ্লোক কেন এখানে আসিল, এ প্রশেনর উত্তর শঙ্কর ও শ্ৰীধর যেরপ দিয়াছেন, তাহা নবম শ্লোকের টীকায় বলিয়াছি। মধ্যসদন সরস্বতী যে উত্তর দিয়াছেন, তাহা অপেক্ষাকৃত সঙ্গত বোধ হইতে পারে। পরিব্রাজক শ্ৰীকৃষ্ণপ্ৰসন্ন সেন তাহার মৰ্ম্মমাের্থ অতি বিশদরপে বঝিয়াছেন, অতএব তাঁহার কৃত গীতাৰ্থসন্দীপনী নাম্পানী টীকা হইতে ঐ অংশ উদ্ধত করিতেছি। “সহযজ্ঞ' অর্থাৎ কম্পমাধিকারী ব্ৰাহ্মণ, ক্ষত্ৰিয়, বৈশ্যকে সম্বোধন করিয়া প্রজাপতি যাহা বলিয়াছেন, তাহাতে কাম্য কমেরই উদ্ঘোষণা হইল। কিন্তু “মা কৰ্ম্মফলহেতুভূঃ" এই বচনে কাম্য কন্মের নিষেধও করা হইয়াছে, এবং গীতাতেও কাম্য কম্পেমার প্রসঙ্গ নাই, এজন্য ব্ৰহ্মার উক্তি এ স্থলে নিতান্ত অসঙ্গত বলিয়া বোধ হইতেছে; কিন্তু বিচার করিয়া দেখিলে এ আশঙ্কা বিদ্যুরিত হইবে। “প্রজাগণ, তোমরা কামনা করিয়া ফলপ্রাপ্তির জন্য যজ্ঞের অনন্ঠান করিও”-- ব্ৰহ্মা এ কথা বলেন নাই। কৰ্ত্তব্যানরোধে কম্পেমাির অনঙ্গঠান করিবে, ইহাই ব্ৰহ্মার উদ্দেশ্য। কিন্তু এই কমমসাধন মধ্যে যে দিব্য শক্তি নিহিত আছে, তাহারই ঘোষণাৰ্থ ব্ৰহ্মা বলিলেন, “তোমরা নিয়মিত যজ্ঞের অনন্ঠান করিও। তাহারই অলৌকিক প্রভাবে তোমরা যখন যাহা বাসনা করিবে, তাহা সিদ্ধ হইতে থাকিবে। লোকে আমেরই জন্য যেমন আম্বাক্ষ রোপণ করে, কিন্তু ছায়া ও মকুলের সদ্গন্ধ তাহারা বিনা চেস্টাতেই পাইয়া থাকে, সেইরাপ কৰ্ত্তব্যের অনরোধেই কৰ্ম্ম সাধন করিবে, কিন্তু অনঙ্ঠানের ফল কামনা না করিলেও, উহা স্বতএব প্রাপ্ত হইবে। ফলে ইচ্ছা না থাকিলেও কম্পেমর সর্বভাবগণেই ফল উৎপন্ন হইয়া থাকে।” আমার বোধ হয়, আমার পাঠকের নিকট শঙ্কর ও শ্ৰীধরের উত্তরের ন্যায়, এ উত্তরও সন্তোষজনক হইবে না। কিন্তু বিচারে বা প্রতিবাদে আমার কোন প্রয়োজন নাই। এই সাতটি শ্লোকের ভিতর একটি রহস্য আছে, দেখাইয়া দিয়া ক্ষান্ত হইব। গীতাকার বলিতেছেন যে সহযজ্ঞঃ প্ৰজাঃ সন্টিবা। পরোবাচ প্রজাপতিঃ ॥ এই কথা গীতাকার নিজে হইতে বলেন নাই। এইরপ বিশ্বাস প্রাচীন ভারতে প্রচলিত ছিল। মনসিংহিতায় আছে, কম্পমাত্মনাচ দেবানাং সোহসজৎ প্ৰাণিনাং প্ৰভুঃ। সাধ্যানার্চ গণং সক্ষমং যজ্ঞশ্চৈব সনাতনম | s-२२ ॥ ३ऊानि । Great Bears. † Plerades. * ইহার অন্যবাদ পাবে দেওয়া হইয়াছে। Գ (, Ց ス ミー8b