পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী উদাহরণস্বরূপ এই মত গলি উদ্ধত করা গেল। এমন আরও অনেক আছে। সকল উদ্ধত করিতে গেলে পাঠকের বিরক্তিকর হইবে। স্থলে কথা, হিন্দীশাস্ত্ৰে চাতুব্বাণ্য উৎপত্তি সম্পবন্ধে নানা প্রকার মত আছে। শ্ৰীকৃষ্ণও যাহা বলিতেছেন, তাহাও সাধারণ মত হইতে ভিন্ন বলিয়া আপাততঃ বোধ হইতে পারে। তিনি বলেন না যে, আমি আমার অঙ্গবিশেষ হইতে বাণ বিশেষ সন্টি করিয়াছি। তিনি বলেন, গণকৰ্ম্মের বিভাগানসারে করিয়াছি। প্রথমে দেখা যাউক, গণ কাহাকে বলে । সত্ত্বরাজহত্তম। এই তিন গণ্য। ভাষ্যকারেরা বলেন, সত্ত্বপ্রধান ব্রাহ্মণ, তাহাদিগের কম্পম শমদমাদি; সত্ত্বরজঃপ্রধান ক্ষত্ৰিয়, তাহাদিগের কম্পম শৌয্য যাদ্ধাদি; রজস্তমঃপ্রধান বৈশ্য, তাহাদিগের কম্পম কৃষিবাণিজ্যাদি; তমঃপ্রধান শব্দ্র, তাহাদিগের কৰ্ম্মম অন্য তিন বণের সেবা। এইরােপ গণকন্মের বিভাগ অনসারে সন্টি করিয়াছি, ইহাই ভগবদভিপ্ৰায়। এক্ষণে যে জন্মিবে, সে গৰ্ভে জন্মিবার পকেবই সত্ত্বগণাধিক্য, রজোগণাধিক্য বা তমোগণাধিক্য ইত্যাদি প্রকৃতি সম্পট হয় ? যিনি বলিবেন যে, আগে জীবের জন্ম, তার পর তাহার সত্ত্বপ্রধানাদি স্বভাব, তাঁহাকে অবশ্য স্বীকার করিতে হইবে যে, মনষ্যের বংশানসারে নহে, গণিানসারে তাহার ব্রাহ্মণত্বাদি। ব্ৰাহ্মণের পত্র হইলেই তাহাকে ব্রাহ্মণ হইতে হইবে, এমন নহে; সত্ত্বগণপ্রধান সর্বভাব হইলে শদ্রের পত্ৰ হইলেও ব্রাহ্মণ হইবে এবং ব্রাহ্মণের পত্রের তমোগণপ্রধান সর্বভাব হইলে সে শদ্রে হইবে, ভগবদ্বাক্য হইতে ইহাই সহজ উপলব্ধি । আমি যে একটা নািতন মত নিজে গড়িয়া প্রচার করিতেছি, তাহা নহে। প্রাচীন কালে, শঙ্কর শ্ৰীধরের অনেক পর্ক্সেব প্রাচীন ঋষিগণও এই মত প্রচার করিয়াছিলেন । ধৰ্ম্মতত্ত্বে তাহার কিছ প্রমাণ উদ্ধত করিয়াছি, যথা— ক্ষান্তং দান্তং জিতক্ৰোধং জিতাত্মানং জিতেন্দ্ৰিয়ম। তমেব ব্ৰাহ্মণং মন্যে শেষাঃ শািন্দ্রা ইতি সন্মতাঃ ॥ পােনশচ— অগ্নিহোত্ৰৱতপরান সবাধ্যায়নিরতান শচীন। উপবাসরতান দান্তাংস্তান দেবা। ব্রাহ্মণান বিদ্যুঃ ॥ ন জাতিঃ পাজ্যতে রােজন গণাঃ কল্যাণকারকাঃ। চণডালমপি বক্তস্থং তং দেবা। ব্ৰাহ্মণং বিদ্যুঃ ॥ গৌতম সংহিতা । ক্ষমাবান, দমশীল, জিতক্ৰোধ, এবং জিতাত্মা জিতেন্দ্রিয়কেই ব্ৰাহ্মণ বলিতে হইবে, আর সকলে শািন্দ্র। যাহারা অগ্নিহোত্ৰৱতপর, সবাধ্যায়নিরত, শচি, উপবাসরত, দান্ত, দেবতারা তাঁহাদিগকেই ব্রাহ্মণ বলিয়া জানেন। হে রাজনী! জাতি পােজ্য নহে, গণই কল্যাণকারক। চণ্ডডালও বক্তস্থ হইলে দেবতারা তাহাকে ব্রাহ্মণ বলিয়া জানেন। পানশাচ, মহাভারতের বনপর্বে মাকন্ডেয়সমস্যাপকবাধ্যায়ে ২১৫ অধ্যায়ে ঋষিবাক্য আছে, “পাতিত্যজনক কুক্ৰিয়াসক্ত, দাম্ভিক ব্ৰাহ্মণ প্রাজ্ঞ হইলেও শািন্দ্রসদশে হয়, আর যে শব্দ্র সত্য, দম ও ধৰ্ম্মেম সতত অন্যরক্ত, তাহাকে আমি ব্রাহ্মণ বিবেচনা করি। কারণ, ব্যবহারেই ব্রাহ্মণ হয়।” পানশাচ বনপর্বে অজগরপকবাধ্যায়ে ১৮o অধ্যায়ে রাজষি নহষ বলিতেছেন, “বেদমলেক সত্য, দান, ক্ষমা, আনশংস্য, অহিংসা ও করণ। শদ্রেও লক্ষিত হইতেছে। যদ্যপি সত্যাদি ব্ৰাহ্মণধৰ্ম্মম: শদ্রেও লক্ষিত হইল, তবে শব্দ্রও ব্রাহ্মণ হইতে পারে।” তদত্তরে যাধিস্ঠির বলিতেছেন, “অনেক শদ্রে ব্ৰাহ্মণ লক্ষণ ও অনেক দ্বিজাতিতেও শব্দ্রলক্ষণ লক্ষিত হইয়া থাকে, অতএব শদ্রবংশ্য হইলেই যে শব্দ্র হয়, এবং ব্রাহ্মণবংশ্য হইলেই যে ব্ৰাহ্মণ হয়, এরপ নহে। কিন্তু যে সকল ব্যক্তিতে বৈদিক ব্যবহার লক্ষিত হয়, তাহারাই ব্ৰাহ্মণ, এবং যে সকল ব্যক্তিতে লক্ষিত না হয়, তাহারাই শব্দ্র।” কিন্তু হইতেছিল নিস্কাম ও সকাম কম্পেমর কথা, কন্মের ফলকামনার কথা,-চাতুব্বণ্যের কথা আসিল কেন ? কথাটা বলা হইয়াছে যে, কেহ ইহকালে আশীলভ্য৷ ফলের কামনায় দেবাদির যজনা করে, কেহ বা নিস্কাম কৰ্ম্ম করিয়া থাকে। লোকের মধ্যে এরপ বিসদশে আচরণ দেখা যায় কেন? তাহাদিগের প্রকৃতিভেদবশতঃ। এই প্রকৃতিভেদই চাতুব্বাণ্য বা বৰ্ণভেদ। কিন্তু ԳԳՀ