পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰঙ্কিম রচনাবলী বেদ যেরপেই প্রণীত হউক, এক জন উহা সঙ্কলিত ও বিভক্ত করিয়াছে, ইহা নিঃসন্দেহ। সেই বিভাগ মন্ত্রভেদে হইয়াছে এবং মন্ত্রভেদানসারে তিন বেদই দেখা যায়। ঋগোিবদের মন্ত্র ছন্দোনিবদ্ধ স্তোত্র; যথা, ইন্দ্রস্তোত্র, অগ্নিস্তোত্র, বরণস্তোত্র। যাজকেবাদের মন্ত্র প্রশ্লিন্টপাঠ গদ্যে বিবত, এবং যজ্ঞানপীঠানই তাহার উদ্দেশ্য। সামবেদের মন্ত্র গান। ঋগ্বেদের মন্ত্ৰও গীত হয় মুক্ত হইলে তাহাকেও সাম বলে। অথব্ববেদের মন্ত্রের উদ্দেশ্য মারণ, উচাটন, বশীকরণ ইত্যাদি। হিন্দমতানসারে অন্য বেদের অপেক্ষা সামবেদের উৎকৰ্ষ আছে। ভগবদগীতায় শ্ৰীকৃষ্ণ বলিয়াছেন, “বেদনাং সামবেদোসিম দেবানামিত্যাদি"* কিন্তু ইউরোপীয় পন্ডিতদিগের কাছে ঋগোিবদেরই প্রাধান্য। বাস্তবিক ঋগোিবদের মন্ত্ৰগলি সব্বাপেক্ষা প্রাচীন বলিয়া বোধ হয়। এই জন্য আমরা প্রথমে ঋগোিবদের পরিচয় দিতে প্রবত্ত হই। ঋগোিবদের ব্রাহ্মণ ও উপনিষদের পরিচয় পশ্চাৎ দিব, আগ্নে সংহিতার পরিচয় দেওয়া কৰ্ত্তব্য হইতেছে। ঋগ বেদে দশটি মন্ডল ও আটটি অস্টক। এক একটি মন্ত্রকে এক একটি ঋচ বলে। এক ঋষির প্রণীত এক দেবতার স্কৃতি সম্পবন্ধে মন্ত্রগলিকে একটি সক্তি বলে। বহসংখ্যক ঋষি কৰ্ত্তক প্রণীত সক্তিসকল এক জন ঋষি কর্তৃক সংগহীত হইলে একটি মন্ডল হইল। এই রােপ দশটি মন্ডল ঋগোিবদসংহিতায় আছে। কিন্তু এরপ পরিচয় দিয়া আমরা পাঠকের বিশেষ কিছ- উপকার বরিতে পাবিব না। এগলি কেবল ভূমিকা সাবরােপ বলিলাম। আমরা পাঠককে ঋগোিবন্দসংহিতার ভিতরে লইয়া যাইতে চাই। এবং সেই জন্য দাই একটা সক্তি বা ঋক উদ্ধত করিব। সব্বাগ্রে ঋবেদসংহিতার প্রথম মন্ডলের প্রথম আনবাকের প্রথম সক্তের প্রথম ঋক উদ্ধত করিতেছি। কিন্তু ইহার একটি “হেডিং" আছে। আগে “হেডিং"টি উদ্ধত করি। “ঋষিবিশ্বামিত্রপত্রো মধ্যচ্ছন্দা। অগ্নিদেবতা। গায়ত্ৰীচ্ছন্দঃ । ব্ৰহ্মযজ্ঞান্তে বিনিয়োগঃ অগ্নিলেটোমে চা।” আগে এই “হেডিং'টকু ভাল করিয়া বঝিতে হইবে। এইরূপ, “হেডিং” সকল সক্তেরই আছে। ব্ৰাহ্মণ পাঠকেরা দেখিবেন, তাঁহারা প্রত্যহ যে সন্ধ্যা করেন, তাহাতে যে সকল বেদমন্ত্র আছে, সে সকলেরও ঐরােপ একটা একটা ভূমিকা আছে। দেখা যাক, এই “হেডিং"টকুর তাৎপৰ্য্য কি ? ইহাতে চারিটি কথা আছে প্রথম, এই সক্তের ঋষি, বিশ্বামিত্রের পত্র মধ্যচ্ছন্দা। দ্বিতীয়, এই সক্তের দেবতা অগ্নি। তৃতীয়, এই সক্তের ছন্দ গাযাত্রী। চতুর্থ এই সক্তের বিনিয়োগ ব্ৰহ্মযজ্ঞান্তে এবং অগ্নিমেন্টামযজ্ঞে। এইরপ সকল সক্তের একটি ঋষি, একটি দেবতা, ছন্দ এবং বিনিয়োগ নিদিলেট আছে। ইহার তাৎপৰ্য্য কি ? প্রথম, ঋষিশব্দটকু বঝা যাক। ঋষি বলিলে এক্ষণে আমরা সচরাচর সাদা দাড়ীওয়ালা গেরিয়াকাপড়-পরা সন্ধ্যাহিক-পরায়ণ ব্ৰাহ্মণ-বড় জোর সেকালের ব্যাস বালিমীকির মত তপোবলবিশিস্ট একটা অলৌকিক কান্ড মনে করি। কিন্তু দেখা যাইতেছে, সেরাপ কোন অর্থে ঋষি শব্দ এ সকল স্থলে প্রযক্ত হয় নাই। বেদের অর্থ বঝাইবার জন্য একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্ৰ আছে, তাহার নাম “নিরক্ত”। নিরক্ত একটি “বেদাঙ্গ"। যাস্ক, স্থৌলন্টিবী, শাকপাণি প্রভৃতি প্রাচীন মহর্ষিগণ নিরক্তকৰ্ত্তা। বেদের কোন শব্দের যথার্থ অৰ্থ জানিতে হইলে, নিরক্তের আশ্রয় গ্রহণ করিতে হয়। এখন, নিরক্তকার ঋষি শব্দের অর্থ কি বলেন ? নিরক্তকার বলেন এই যে, “যস্য বাক্যং স ঋষি" অর্থাৎ যাহার কথা সেই ঋষি। অতএব যখন কোন সক্তের পকেবা দেখি যে, এই সক্তের অমক ঋষি, তখন বঝিতে হইবে যে, সত্তেটির বক্তা ঐ ঋষি। এই বক্তা অর্থে প্রণেতা বঝিতে হইবে কি ? যাঁহারা বলেন, বেদ নিত্য অর্থাৎ কাহারও প্রণীত নহে। তাঁহাদের উত্তর এই যে, বেদ-মন্ত্ৰসকল ঋষিদিগের সম্মখে আবিভূতি হইয়াছিল, তাঁহারা মন্ত্ররচনা করেন নাই, জ্ঞানবলে দশট করিয়াছিলেন। যে ঋষি যে সক্তি দেখিয়াছিলেন, তিনিই সেই সক্তের ঋষি। শব্দ শ্রত হইয়া থাকে। ইহা জানি, কিন্তু যোগ-বলেই হউক আর যে বলেই হউক, শখ, যে দলস্ট হইতে পারে, ইহা

  • বেদের মধ্যে আমি সামবেদ ইত্যাদি।
  • বািহদেবতা গ্রন্থের মতে সম্পর্ণিমষিবাক্যন্তু সত্তমিতাভিধীয়তে। অর্থাৎ সম্পণে ঋষি-বাক্যকে সক্ত বলে।

€a bሃ0