পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বারিকম রচনাবলী যদি ঈশ্বর-প্রণীত ধৰ্ম্মম না। সবীকার করিলেন, তবে তাহাদিগকে ধর্মের একটা নৈসগিক ভিত্তি আছে, ইহা প্রমাণ করিতে হইবে। নইলে ধর্মের কোন মািল থাকে না-কিসের উপর ধৰ্ম্ম সংস্থাপিত হইবে ? ধৰ্ম্মের এই নৈসগিক ভিত্তি কল্পিত অস্তিত্বশান্য বস্তু নহে; যাঁহারা ঈশ্বরপ্রণীত ধৰ্ম্মম সত্বীকার করিয়া থাকেন, তাঁহারাও ধন্মের নৈসৰ্গিক ভিত্তি স্বীকার করিতে পারেন। উপস্থিত লেখক হিন্দধমের অন্যান্য নািতন ব্যাখ্যাকারদিগের ন্যায় দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত। আমি কোন ধৰ্ম্মমকে ঈশ্বর-প্রণীত বা ঈশ্বর-প্রেরিত মনে করি না।* ধমের নৈসগিক ভিত্তি আছে, ইহাই স্বীকার করি। অথচ স্বীকার করি যে, সকল ধর্মের অপেক্ষা হিন্দধৰ্ম্ম শ্রেষ্ঠ। এই দাইটি কথা একত্ৰিত করিলে, পাঠক প্রথমে আপত্তি করবেন যে, এই দাইটি উক্তি পরস্পর অসঙ্গত। হিন্দধৰ্ম্ম যাহারা গ্রহণ করে, তাহারা হিন্দধম্ম ঈশ্বরোক্ত বলিয়াই গ্রহণ করে। কেন না, হিন্দধৰ্ম্মম বেদমলক । বেদ হয় ঈশ্বরোক্ত, নয় ঈশ্বরের ন্যায় নিত্য। যে ইহা মানিল না, সে আবার হিন্দধমের সত্যতা এবং শ্রেষ্ঠতা সম্ববীকার করে কি প্রকারে ? ইহার উত্তরে বলা যাইতে পারে যে, ধৰ্ম্মেমরি যে নৈসৰ্গিক ভিত্তি আছে, হিন্দধৰ্ম্ম তাহার উপর স্থাপিত, তাই ঈশ্বর-প্রণীত ধৰ্ম্ম না মানিয়াও হিন্দধমের যাথার্থ্য ও শ্রেষ্ঠতা স্বীকার করা যাইতে পারে। মহাত্মা রাজা রামমোহন রায্যের সময় হইতে এই কথা ক্ৰমে পরিাসফট হইতেছে। যাঁহারা এই কথা বলেন, তাঁহাদের উপর এই কথা প্রমাণের ভার আছে। তাঁহাদিগকে দেখাইতে হইবে যে, হিন্দধৰ্ম্ম ধমের নৈসগিক মলের উপর স্থাপিত। যদি তাহা না দেখাইতে পারেন, তবে এক শ্রেণীর লোক বলিবেন, “হিন্দধৰ্ম্মম। তবে ধৰ্ম্মমই নহে, মিথ্যা ধৰ্ম্মম।” আর এক শ্রেণীর লোক বলিবেন, “ধমের নৈসগিক ভিত্তির কথা ছাড়িয়া দাও-বেদ নিত্য বা বিধিবাক্য বলিয়া সম্বীকার কর।” অতএব হিন্দধমের ব্যাখ্যায় আমাদের দেখাইতে হইবে যে, হিন্দধৰ্ম্মম , ধৰ্ম্মেমর নৈসগিক ভিত্তির উপর স্থাপিত। ইহা দেখাইতে গেলে প্রথমে ব্যবইতে হইবে, ধৰ্ম্মেমরি সেই নৈসগিক মলে কি ? তাহার পর দেখাইতে হইবে যে, হিন্দধৰ্ম্ম সেই মহলের উপরেই স্থাপিত। প্রথমটি, অর্থাৎ ধৰ্ম্মেমরি নৈসগিক তত্ত্ব, আমি ‘নবজীবনে’ বাবাইতেছি। দ্বিতীয়টি “প্রচারে” বাঝাইতে প্রয়াস পাইতেছি। আমি ‘নবজীবনে’ দেখাইয়াছি যে, ধর্মের তিন ভাগ, (১) তত্ত্বজ্ঞান, (২) উপাসনা, * নৃত্যু। হিন্দুধর্মের ব্যাখ্যায় প্রবত্ত হইতে গেলে, ঐ তিন ভাগই একে একে ববিয়া छ छद्म । হিন্দধমের প্রথম ভাগ, অর্থাং তত্ত্বজ্ঞান, ইহাকেও আবার তিনটি পথক অবস্থায্য অধীত করিতে হয়। (১) বৈদিক, (২) দাশনিক, (৩) পৌরাণিক। এই বৈদিক তত্ত্ব আবার ত্ৰিবিধ। (১) দেবতাতত্ত্ব, (২) ঈশ্বরতত্ত্ব, (৩) আত্মতত্ত্ব। দেবতাতত্ত্ব প্রধানতঃ সংহিতায় : আত্মতত্ত্ব উপনিষদে ; ঈশ্বরতত্ত্ব উভয়ে। অতএব হিন্দধম্পেমার ব্যাখ্যার গোড়ায় ঋগ্ৰেবাদসংহিতার দেবতাতত্ত্ব। পাঠক এখন বঝিয়াছেন যে, কেন আমরা ঋগোিবদসংহিতার দেবতা দিগকে লইযা ‘প্রচারে’ ধৰ্ম্মম-ব্যাখ্যা আরম্ভ कशाछि । পািব্ব কয় সংখ্যায় কয়টি বৈদিক প্রবন্ধে আমরা যাহা বলিয়াছি, তাহার মধ্যে ভরসা করি, পাঠকদিগের সমরণ আছে। যথা, (১) বেদে বলে দেবতা মোটে তেত্রিশটি। অনেক আধনিক দেবতা। এই তেত্রিশটির মধ্যে নাই। অনেকে আবার এমন আছেন যে, তাঁহাদের উপাসনা এখন আর প্রচলিত নাই। (২) সে তেত্রিশটি দেবতা হয় আকাশ, নয় সবে, নয়। অগ্নি, নয়। অন্য কোন নৈসগিক পদাৰ্থ। তাঁহারা লোকাতীত চৈতন্য, অথবা এখানে যাঁহাকে দেবতা বলি-সেরাপ দেবতা নহেন ৷ (৩) এই নৈসৰ্গিক পদার্থের যে সকল গণ, তাহার বর্ণনাগলি ক্ৰমে বৈদিক এবং পৌরাণিক উপন্যাসে পরিণত হইয়াছে।

  • ষােহা কিছ জগতে আছে, তাহাই ঈশ্বর-প্রণীত বা ঈশ্বর-প্রেরিত। সে কথা এখন হইতেছে না।)

GNR