পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী সমােহ বন্ধনমািক্ত হইয়া অন্তহিত বত্রদেহের উপর প্রবাহিত হইতে লাগিল। ইন্দুদেবের সহিত শত্ৰতা করিয়া বন্দ্রাসরি চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হইল। ১১। দাস এবং আহিনামে প্রসিদ্ধ বন্দ্রাসরি যে সকল নদীর প্রবাহ নিরোধ করিয়াছিল যদুপ পাণি নামক অসাের গো সকল গাঁহাতে নিরদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিল, ইন্দ্রদেব বল্লাসরকে বধ করিয়া সেই সকল নিরোধ দীর করিয়া প্রবাহমাগ্য মক্ত করিয়া দিয়াছিলেন। ১২ । হে ইন্দ্রদেব! যখন অসহায় বন্দ্রাসরি আপনার বজে প্রতিপ্রহার করিয়াছিল তখন আপনি অনায়াসে বত্রাসরকে নিরাকৃত করিয়াছিলেন, যদ্রািপ অশ্বপচ্ছগত বালসমােহ মাক্ষিকাদি অনায়াসে নিরাকৃত করে। তদন্তর আপনি পণি নামক অসাের কর্তৃক অপহৃত অনিরদ্ধ ও নিরদ্ধ গোসমহ জয় করিয়া সর্ববশে আনয়ন করিয়াছিলেন। জয়লাভ করিয়া সোমরস পান করিয়াছিলেন এবং সপ্ত নদীর প্রবাহ নিরোধ অপনয়নপর্বক তাহাদিগকে প্রবাহিত করিয়াছিলেন। ১৩ । বত্রাসরি ইন্দ্রকে নিরস্ত করিবার নিমিত্ত যে বিদ্যুৎ প্রহার, যে গৰ্ভজন, যে বর্ষণ, যে অশনি নিক্ষেপ, এবং যে অপরাপর কৌশল প্রয়োগ করিয়াছিল, তৎসমদায়ই ইন্দ্রের অনিস্ট করিতে ব্যৰ্থ হইয়াছিল এবং অবশেষে ইন্দ্ৰ বত্রাসরকে অভিভূত করিয়াছিলেন। ১৪। হে ইন্দ্রদেব! আপনি যখন বল্লাসরকে বধ করিযা ভীত হইয়াছিলেন, এবং ভীত হইয়া শ্যেন পক্ষীর ন্যায় একোেনশত সংখ্যক প্রবহনশীল নদী পার হইয়াছিলেন, তখন বল্লাসর বধের নিয্যাতনেচ্ছ কোন জনকে দেখিয়াছিলেন। ১৫। বজধর ইন্দ্রদেব স্থাবর এবং জঙ্গম জগতের রাজা, শান্ত এবং দদােন্ত জীবগণের অধীশ্বর। এবশভূত ইন্দ্রদেব মনীষাদিগের প্রভু। রথচক্রের নেমি যদ্রপ চক্রগত অরাখ্যা কাঠ সকল বেস্টন করিয়া থাকে, তদ্রপ তিনি মনষ্যদিগকে সৰবতোভাবে বেস্টনপৰিবাক রক্ষা করেন।"* এই সক্তের তাৎপৰ্য্য বড় সাপটে। পন্ধেব বাবান গিয়াছে, ইন্দ্র বর্ষণকারী আকাশ। বত্ৰি বাল্টিনিরোধকারী নৈসগিক ব্যাপার। বর্ষণশক্তির দ্বারা সেই সকল নৈসগিক ব্যাপার অপহত হইলে বত্রবধ হইল। এই সক্তি বর্ষণকারী আকাশের সেই ক্রিয়ার প্রশংসা মাত্র। ইন্দ্র এখানে কোন চৈতন্যবিশিস্ট পরিষ নহেন, এবং এ সক্তে তাহার কোন সকাম উপাসনাও নাই। স্বীকার করি, এক্ষণে বৈদিক সংহিতায় যে উপাসনা আছে, তাহার প্রায অধিকাংশই সকাম, এবং উপাস্যেরা তাহাতে চৈতন্যবিশিষ্ট দেবতা বলিয়া বর্ণিত হইয়াছে। কিন্তু জড়শক্তির প্ৰশংসা-পদ্ধতি ক্রমে প্রচলিত হইয়া আসিলে, শব্দের আড়ম্বরে তাহার প্রকৃত তাৎপৰ্য্য লোকের চিত্ত হইতে অপসত হইল। “জগতের রাজা,” এবং “জীবগণের অধীশ্বর" ইত্যাকার বাক্যের যথাৰ্থ তাৎপৰ্য্য যে, বলিষ্ট হইতেই জগৎ ও জীবের রক্ষা, লোকে ইহা ক্ৰমে ভুলিয়া যাইতে লাগিল, এবং ইন্দ্রকে যথাৰ্থ জগতের চৈতন্যবিশিস্ট রাজা এবং জীবগণের চৈতন্যবিশিস্ট অধীশ্বর মনে করিতে লাগিল। তখন জগতের জড়শক্তির নিকাম প্রশংসার স্থানে সকাম উপাসনা আসিয়া উপস্থিত হইল। যাহা চিত্তরঞ্জিনী বত্তিগলির অনশীলন মাত্র ছিল, তাহা দেবতা বহল উপািধৰ্ম্মেম পরিণত হইল। বৈদিক ধৰ্ম্মের উৎপত্তি কি তাহা উপরি উদ্ধত অপেক্ষাকৃত প্রাচীন সক্তিগলি হইতেই আমরা বঝিতে পারি। ঋগোিবন্দ-সংহিতার সকল সত্তাগলি এক সময়ে প্রণীত হয় নাই; এবং ঋগ্বেদের সব্বত্র বহা দেবতার উপাসনাত্মক উপধৰ্ম্মই যে আছে, এমত নহে। অনেকগলি। এমত সক্ত আছে যে, তাহা হইতে আমরা একেশ্বরবাদই শিক্ষা করি। সময়ান্তরে আমরা তাহার আলোচনা করিব। সেইগলি যে বৈদিক ধর্মের অপেক্ষাকৃত শেষাবস্থায়, আর উপরি উদ্ধত সক্তের সদশে সক্তিগলি যে আদিম অবস্থায় আর সচেতন ইন্দ্রাদির উপাসনাত্মক সক্তিগলি প্রধানতঃ যে মধ্যাবস্থায় প্রণীত হইয়াছিল, ইহা যে মনোযোগপৰিবাক বেদাধ্যয়ন করিবে সেই বঝিতে পারিবে। বেদব্যাস, বেদ বিভাগ করিয়াছিলেন। সঙ্কলন ব্যতীত চতুৰে বাদের বিভাগ হয় নাই। যাহা সঙ্কলিত, তাহা নানা ব্যক্তির দ্বারা নানা সময়ে প্রণীত হইয়াছিল। অতএব, আদিম, মধ্যকালিক, এবং শেষাবস্থার সক্তি বলিয়া সত্তৌগলিকে বিভাগ করা যাইতে পারে। এই অনাবাদ “রমানাথ সরস্বতী কৃত। YSSR