পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঝিতে পারি না যে এখানেও কল্পনা বিরাজমান। তাই না হয় হইল, তথাপিও একটা প্রভেদ হইল। প্রথমোক্ত শ্রেণীর লোকের সহানভূতি তাঁহাদের ইচ্ছা বা চেস্টার অধীন। দ্বিতীয শ্রেণীর লোকের সহানুভূতি তাঁহাদের ইচ্ছাধীন নহে, তাঁহারাই সহানভূতির অধীন। এক শ্রেণীর লোক যখন মনে করেন, তখনই সহানভূতি আসিয়া উপস্থিত হয়, নহলে সে আসিতে পারে না; সহানভূতি তাহদের দাসী। অপর শ্রেণীর লোকেরা নিজেই সহানভূতির দাস, তাঁহারা তাকে চান বা না চান, সে আসিয়া ঘাড়ে চাপিয়াই আছে, হৃদয ব্যাপিয়া আসন পাতিয়া বিরাজ করিতেছে। প্রথমোক্ত শ্রেণীর লোকের কল্পনাশক্তি বড় প্রবল, দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকের প্রীতি দয়াদি বত্তি সকল প্রবল। দীনবন্ধ এই দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক ছিলেন। তাঁহার সহানভূতি তাহার অধীন বা আয়ত্ত নহে ; তিনিই নিজে সহানভূতির অধীন। তাঁহার সব্বব্যাপী সহানভূতি তাঁহাকে যখন যে পথে লইয়া যাইত, তখন তাহাই করিতে বাধ্য হইতেন। তাঁহার গ্রন্থে যে রচির দোষ দেখিতে, পাওয়া যায়, বোধ হধ, এখন তাহা আমরা বঝিতে পালিব । তিনি নিজে সশিক্ষিত এবং নিম্পমালচরিত্র, তথাপি তাঁহার গ্রন্থে সে রচির দোষ দেখিতে পাওয়া যায়, তাহার প্রবলা, দদািমনীয়া সহনাভূতিই তাহার কারণ। যাহার সঙ্গে তাঁহার সহনাভূতি, যাহার চরিত্র আকিতে বসিয়াছেন, তাহার সমদায় অংশই তাঁহার কলমের আগায় আসিয়া পড়িত । কিং, খাদসাদ দিবার তাঁর শক্তি ছিল না, কেন না, তিনি সহানভূী তব অধীন, সহনাভূতি তাহার অধীন। নহে । আমরা বলিয়াছি যে তিনি জীবন্ত আদেশ সম্মখে রাখিয়া চরিত্র প্রণয়নে নিযগুণ হইতেন। সেই জীবাশু আদশের সঙ্গে সহানভূতি হইত বলিয়াই তিনি তাহ কে আদশ করিতে পারিতেন। কিণ্ডু ৩াঁহার উপন্ণ আদশের এমনই বল যে, সেই আদশের কোন অংশ ত্যাগ করিতে পাবিতেন না। তোেরাপের সন্টিকালে তোবাপ যে ভাষাধ্য রাগ প্রকাশ করে, ৩াহা বাদ দিতে পারিতেন না। আদরীর সন্টিকালে আদরী যে ভাষায় রহস্য কবে, তাহ ( বাদ দিতে পারিতেন না। নিমচাঁদ গাড়িবার সমযে, নিমচাঁদ যে ভাষায মাতলামি কবে, ৩াহা ছাড়িতে পারিতেন • {া। অন্য কবি হইলে সহানভূতির সঙ্গে একটা বন্দোবস্ত করত,--বলিত -- তুমি আমাকে তোেরাপে< বা অাদরীর বা নিমচাঁদের স্বভাব চরিত্র বাবাইযা দাও-কিন্তু ভাষা আমাৰ পছন্দমত হইবে – ভাষা তোমাব কাছে লইব না।” কিন্তু দীনবন্ধীর সাধ্য ছিল না, সহ নিভৃতির সঙ্গে কোন প্রকার বন্দোবস্ত করেন। সহানভূতি তাঁহাকে বলিত, “ আমার হকুম-সবট,কু লইতে হইবে — মাধ্য ভাষা। দেখিতেছি না যে, তোরাপের ভাষা ছাড়িলে, তোেরাপের রাগ আর তোরাপের রাগের মত থাকে না, আদরীব ভাষা ছাড়িলে আদরীর তামাসা আর আদরীর তামাসার মত থাকে না, নিমচাঁদের ভাষা ছাড়িলে নিমচাঁদের মাতলামি আর নিমচাঁদের মাতলামির মত থাকে না ? সবটাঁকু দিতে হইবে।” দীনবন্ধর সাধ্য ছিল না যে বলেন-যে “না। তা হবে না।" তাই আমরা একটা আন্ত তোরাপ, আস্ত নিমচাঁদ আস্ত আদরী দেখিতে পাই। বাঁচিব মািখ রক্ষা করিতে গেলে, ছোড়া তোরাপ, কাটা আদরী, ভাঙ্গা নিমচাঁদ আমরা পাইতাম । আমি এমন বলিতেছি না যে, দীনবন্ধ যাহা করিয়াছেন, বেশ করিয়াছেন। গ্রন্থে রচির দোষ না ঘটে, ইহা সকবতোভাবে বাঞ্ছনীয়, তাহাতে সংশয় কি ? আমি যে কয়টা কথা বলিলাম তাহার উদ্দেশ্য প্রশংসা বা নিন্দা নহে। মানযেটা বঝােনই আমার উদ্দেশ্য। দীনবন্ধীর রচির দোষ তাঁহার ইচ্ছায় ঘটে নাই, তাঁহার তীব্ৰ সহানভূতির গণেই ঘটিয়াছে। গণেও দোষ জন্মে, ইহা সকলেই জানে। কথাটায় আমরা মানযেটা বঝিতে পারিতেছি। গ্রন্থ ভাল হউক আর মন্দ হউক, মানষটা বড় ভালবাসিবার মানষ। তাঁহার জীবনেও তাই দেখিয়াছি। দীনবন্ধকে যত লোক ভালবাসিত, আর কোন বাঙ্গালীকে যে তত লোকে ভালবাসিয়াছে, এমন আমি কখন দেখি নাই বা শনি নাই। সেই সব্বব্যাপিনী তীব্রা সহানভূতিই তাহার কারণ। দীনবন্ধর এই দটি গণ-(১) তাঁহার সামাজিক অভিজ্ঞতা, (২) তাঁহার প্রবল এবং স্বাভাবিক সব্বব্যাপী সহানভূতি, তাঁহার কাব্যের গণ দোষের কারণ-এই তত্ত্বটি বাঝান এই সমালোচনার প্রধান উদ্দেশ্য। আমি ইহাও বাবাইতে চাই যে, যেখানে এই দাইটির মধ্যে একটির অভাব হইয়াছে, সেইখানেই তাঁহার কবিত্ব নিৰ্ম্মফল হইয়াছে। যাহারা তাঁহার প্রধান নায়ক নায়িকা (hero এবং heroine), তাহাদিগের চরিত্র যে তেমন মনোহর হয় নাই, ইহাই তাহার কারণ। আদরী বা তোরাপ জীবন্ত চিত্র, কামিনী বা লীলাবতী, বিজয় বা ললিতমোহন সেরাপ নয়। ズ sー@ ○ げ○○