পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बश्कित्र ब्रष्नाबव्ी ঈশ্বরচন্দ্রের পীড়ায় সাধারণকে নিতান্ত উদ্বিগ্ন এবং বিশেষ বিবরণ জানিবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করিতে দেখিয়া, পরদিনের অর্থাৎ ৯ই মাঘের প্রভাকরে তাঁহার অবস্থার ও চিকিৎসার বিবরণ প্রকাশিত হয়। তৎপরদিন অর্থাৎ ১০ই মাঘের প্রভাকরে তাহার পর বক্তান্ত লিখিত হয়। পীড়ায় সকল মনষ্যেরই দঃখ সমান—সকল চিকিৎসকেরই বিদ্যা সমান এবং সকল ব্যাধিরই পরিণাম শেষ এক । অতএব সে সকল কিছই উদ্ধত করিবার প্রয়োজন দেখি না। ১oই মাঘ শনিবারে ঈশ্বরচন্দ্রের জীবনাশা। ক্ষীণ হইয়া আসিলে, হিন্দপ্রথামত তাঁহাকে গঙ্গাযাত্রা করান হয়। ১২ই মাঘ সোমবারের প্রভাকরে ঈশ্বরচন্দ্রের অনজ রামচন্দ্র লেখেন,— “সংবাদ প্রভাকরের জন্মদাতা ও সম্পাদক আমার সহোদর পরমপজ্যেবর * ঈশ্বরচন্দ্ৰ গগুপ্ত মহোদয় গত ১০ই মাঘ শনিবার রজনী অনামান দই প্রহর এক ঘটিকা কালে * ভাগীরথীতীরে নীরে সজ্ঞানে অনবরত স্বীয়াভিস্টদেব ভগবানের নাম উচ্চারণ পবিবািক এতন্মায়াময় কলেবর পরিত্যাগ পর্বক পরলোকে পরমেশ্বর সাক্ষাৎকারে গমন করিয়াছেন।” এক্ষণে ঈশ্বরচন্দ্রের চরিত্র সম্পবন্ধে দই একঢা কথা বলিযা এই পরিচ্ছেদ শেষ করিব । ঈশ্বরচন্দ্রের ভাগ্য তাঁহার স্বহস্তেগঠিত। তিনি কলিকাতায় আগমন করিয়া, অনজে রামচন্দ্রের সহিত পরান্নে প্রতিপালিত হইয়াছিলেন। একদা সেই সময়ে রামচন্দ্রকে বলিয়াছিলেন, “ভাই, আমাদিগের মাসিক ও O টাকা আয় হইলে, উত্তমরাপে চলিবো।” শেষ প্রভাকরের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্রের দৈন্যদশা বিদারিত হইয়া, সম্পন্দ্ৰান্ত ধনবানের ন্যায় আয় হইতে থাকে। প্রভাকর হইতেই অনেক টাকা আসিত। তদ্ব্যতীত সাধারণের নিকট হইতে সকল সমযেই বত্তি প্রভৃতি প্রাপ্ত হইতেন। একদ{ অনজ রামচন্দ্রকে অথোেপাজ্ঞজনে উদাসীন দেখিয়া বলিয়াছিলেন “আমি এক দিন ভিক্ষা করিতে বাহির হইলে, এই কলিকাতা হইতেই লক্ষ টাকা ভিক্ষা করিফা আনিতে পারি, তোর দশা কি হইবে ?” বাস্তবিক ঈশ্বরচন্দ্রের সেইরূপ প্রতিপত্তি হইযাছিল। অর্থের প্রতি ঈশ্বরচন্দ্রের কিছমাত্র মমতা ছিল না। পাত্ৰাপাত্র ভেদ জ্ঞান না করিয়া সাহায্যপ্রাথী মাত্রকেই দান করিতেন। ব্রাহ্মণ পন্ডিতগণ প্রতিনিয়তই তাঁহার নিকট যাতায়াত করিতেন, ঈশ্বরচন্দ্রও তাঁহাদিগকে নিয়মিত বাষিক বত্তি দান ব্যতীত সময়ে সময়ে অর্থসাহায্য করতেন। পরিচিত বা সামান্য পরিচিত ব্যক্তি, ঋণ প্রার্থনা করিলে, তদন্ডেই তাহা প্ৰদান করিতেন। কেহ সে ঋণ পরিশোধ না করিলে, তাহা আদায় জন্য ঈশ্বরচন্দ্র চেষ্টা করিতেন না। এই সত্রে তাঁহার অনেক অর্থ পরহস্তগত হয়। সমধিক আয় হইতে থাকিলেও তাহার রীতিমত কোন হিসাবপত্র ছিল না। ব্যয় করিয়া যে সময়ে যত টাকা বাঁচিত, তাহা কলিকাতার কোন না কোন ধনী লোকের নিকট রাখিয়া দিতেন। তাহার রসিদপত্র লাইতেন না। তাঁহার মাতৃত্যুর পর অনেক বড়লোক (!!) সেই টাকাগলি আত্মসাৎ করেন। রসিদ অভাবে তদীয় ভ্ৰাতা তৎসমস্ত আদায় করিতে পারেন নাই। ঈশ্বরচন্দ্রের বাটীর দ্বার অবারিত ছিল। দই বেলাই ক্রমাগত উনান জবলিত, যে অসিত, সেই আহার পাইত। তিনি প্রায় মধ্যে মধ্যে ভোজের অনঙ্গঠান করিয়া, আত্মীয় মিত্র এবং ধনী লোকদিগের আহার করাইতেন। ঈশ্বরচন্দ্ৰ প্ৰতি বৎসর বাঙ্গালার অনেক সম্প্রান্ত লোকের নিকট হইতে মল্যবান শাল উপহ } পাইতেন। তৎসমস্ত গাঁটরি বাঁধা থাকিত। একদা একজন পরিচিত লোক বলিলেন, ‘ শাল গলা ব্যবহার করেন না, পোকায় কাটিবে, নন্ট হইয়া যাইবে কেন; বিক্রয় করিলে, অনেক টাকা পাওয়া যাইবে। আমাকে দিউন, বিক্রয় করিয়া টাকা আনিয়া দিব।” ঈশ্বরচন্দ্র তাহার কথায় বিশ্বাস করিয়া কয়েক শত টাকা মূল্যের এক গটারি শাল তাহাকে দিলেন। কিন্তু সে ব্যক্তি আর টাকাও দেয় নাই, শালও ফিরিয়ে দেয় নাই, ঈশ্বরচন্দ্রও তাহার। আর কোন তত্ত্বও লয়েন নাই। ঈশ্বরচন্দ্ৰ গগুপ্ত বাল্যকালে যদিও উদ্ধত, অবাধ্য এবং স্বেচ্ছানরক্ত ছিলেন, বিয়োবদ্ধিসহকারে সে সকল দোষ যায়। তিনি সদাই হাস্যবন্দন; মিষ্টি কথা, রসের কথা, হাসির কথা নিয়তই মাখে লাগিয়া থাকিত। রহস্য এবং ব্যঙ্গ তাঁহার প্রিয় সহচর ছিল। কপটতা, ছলনা, চাতুরী জানিতেন না। তিনি সদালাপী ছিলেন। কথায় হউক, বক্তৃতায় হউক, বিবাদে হউক, কবিতায় Ե8ե