পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী ব্যতীত ব্যক্ত করিতে পারেন না, এই জন্য অনেক সময়ে, মহাকবিগণ দরহে ভাষার আশ্রয় লাইতে বাধ্য হন এবং সেই সকল উন্নত ভাবের অলঙ্কার স্বরপ পদ্যে সে সকলকে বিভূষিত করেন।* কিন্তু গদ্যে এরপে কোন প্রয়োজন নাই। গদ্য যত সখিবোধ্য হইবে, সাহিত্য ততই উন্নতিকারক হইবে। যে সাহিত্যের পাঁচ সাত জন মাত্র অধিকারী, সে সাহিত্যের জগতে কোন প্রয়োজন নাই। প্রাচীন কালে, অর্থাৎ এদেশে মাদ্রাযন্ত্র স্থাপিত হইবার পকেব, বাঙ্গালায় সচরাচর পাস্তকরচনা সংস্কৃতের ন্যায় পদেই হইত। গদ্য-রচনা যে ছিল না। এমন কথা বলা যায় না, কেন না। হস্ত-লিখিত গদ্য গ্রন্থের কথা শানা যায়। সে সকল গ্রন্থও এখন প্রচলিত নাই, সতরাং তাহার ভাষা কিরােপ ছিল, তাহা এক্ষণে বলা যায় না। মাদ্রাযন্ত্র সংস্থাপিত হইলে, গদ্য বাঙ্গালা গ্রন্থ প্রথম প্রচারিত হইতে আরম্ভ হইল। প্রবাদ আছে যে, রাজা রামমোহন রায় সে সময়ের প্রথম গদ্য-লেখক। তাঁহার পর যে গদ্যের সন্টি হইল, তাহা লৌকিক বাঙ্গালা ভাষা হইতে সম্পণেরাপে ভিন্ন। এমন কি বাঙ্গালা ভাষা দাইটি স্বতন্ত্র বা ভিন্ন ভাষায্য পরিণত হইয়াছিল। একটির নাম সাধভাষা অর্থাৎ সাধজনের ব্যবহায্য ভাষা, আর একটির নাম অপর ভাষা অর্থাৎ সাধ ভিন্ন অপর ব্যক্তিদিগের ব্যবহায্য ভাষা। এস্থলে সাধ, অর্থে পন্ডিত বঝিতে হইবে। আমি নিজে বাল্যকালে ভট্টাচাৰ্য্য অধ্যাপকদিগকে যে ভাষায় কথোপকথন করিতে শনিয়াছি, তাহা সংস্কৃত ব্যবসায়ী ভিন্ন অন্য কেহই ভাল বঝিতে পারিতেন না। তাঁহারা কদাচ “খয়ের’ BDDBB DDDSSYAqAgBBDS DBDBDBDBS DBBS BDD BDBDBBDB DYTLBBS BDBDDBSS DS DDBDD তাহাদের রসনা আশদ্ধ হইত, ‘আজাই বলিতেন, কদাচিৎ কেহ ঘতে নামিতেন। ‘চুলা’ বলা হইবে না-‘কেশ’ বলিতে হইবে। "কলা" বলা হইবে না,-“রম্ভ' বলিতে হইবে। ফলাহারে বসিয়া ‘দই’ চাহিবার সময় ‘দাধি’ বলিয়া চীৎকার করিতে হইবে। আমি দেখিয়াছি, একজন অধ্যাপক এক দিন শিশমার' ভিন্ন ‘শশীক’ শব্দ মাখে আনিবেন না, শ্রোতারাও কেহ শিশমার অথর্ব জানে না, সতরাং অধ্যাপক মহাশয় কি বলিতেছেন, তাহার অর্থবোধ লইয়া অতিশয় গন্ডগোল পড়িয়া গিয়াছিল। পন্ডিতদিগের কথোপকথনোর ভাষাই যেখানে এইরপ ছিল, তবে তাঁহাদের লিখিত বাঙ্গালা ভাষা আরও কি ভয়ঙ্কর ছিল, তাহা বলা বাহল্য। এরপ ভাষায় কোন গ্রন্থ প্রণীত হইলে, তাহা তখনই বিলপ্ত হইত, কেন না কেহ তাহা পড়িত না। কাজেই বাঙ্গালা সাহিত্যের কোন শ্ৰীবদ্ধি হইত না। এই সংস্কৃতানসারিণী ভাষা প্রথম মহাত্মা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমার দত্তের হাতে কিছ সংস্কার প্রাপ্ত হইল। ইহাদিগের ভাষা সংস্কৃতানসারিণী হইলে ও তত দিকেবাধ্য নহে! বিশেষতঃ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ভাষা অতি সমাধাের ও মনোহর। তাঁহার পন্বে কেহই এরপ সমধর বাঙ্গালা গদ্য লিখিতে পারে নাই, এবং তাঁহার পরেও কেহ পারে নাই। কিন্তু তাহা হইলেও সৰ্ব্বজন-বোধগম্য ভাষা হইতে ইহা অনেক দরে রহিল। সকল প্রকার কথা এ ভাষায় ব্যবহার হইত না বলিষ্যা, ইহাতে সকল প্রকার ভাব প্রকাশ করা যাইত না এবং সকল প্রকার রচনা ইহাতে চালিত না। গদ্যে ভাষার ওজস্বিতা এবং বৈচিত্র্যের অভাব হইলে, ভাষা উন্নতিশালিনী হয় না। কিন্তু প্রাচীন প্রথায় আবদ্ধ এবং বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ভাষার মনোহারিতায় বিমােন্ধ হইয়া কেহই আর কোন প্রকার ভাসায় রচনা করিতে ইচ্ছক বা সাহসী হইত না। কাজেই বাঙ্গালা সাহিত্য পািব্বমিত সঙ্কীণ পথেই চলিল। ইহা অপেক্ষা বাঙ্গালা ভাষায় আরও একটি গারতের বিপদ ঘটিয়াছিল। সাহিত্যের ভাষাও যেমন সঙ্কীর্ণ পথে চলিতেছিল, সাহিত্যের বিষয়ও ততোধিক সঙ্কীর্ণ পথে চলিতেছিল। যেমন ভাষাও সংস্কৃতের ছায়ামাত্র ছিল, সাহিত্যের বিষয়ও তেমনই সংস্কৃতের এবং কদাচিং ইংরাজির ছায়ামাত্র ছিল। সংস্কৃত বা ইংরাজি গ্রন্থের সারসংকলন বা অন্যবাদ ভিন্ন বাঙ্গালা সাহিত্য আর কিছই প্রসব করিত না। বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রতিভাশালী লেখক ছিলেন সন্দেহ নাই, কিন্তু তাঁহারও শকুন্তলা ও সীতার বনবাস সংস্কৃত হইতে, ভ্ৰান্তিবিলাস ইংরাজি হইতে

  • কবি যদি ভাষার উপর প্রকৃতরাপে প্ৰভুত্ব স্থাপন করিতে পারেন, তাহা হইলে মহাকাব্যও অতি প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত হয়। সংস্কৃতে রামায়ণ ও কালিদাসের মহাকাব্য সকল কাব্যের শ্রেষ্ঠ। কিন্তু এরপ সখিবোধ্য কাব্যও সংস্কৃতে আর নাই।

W SR