পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

সঞ্জীবনীষা-ভূমিকা

এবং বেতাল-পঞ্চবিংশতি হিন্দি হইতে সংগৃহীত। অক্ষয়কুমার দত্তের ইংরাজি একমাত্র অবলম্বন ছিল। আর সকলে তাঁহাদের অনকারী এবং অনবী। বাঙ্গালি-লেখকেরা গতানগতিকের বাহিরে হস্তপ্রসারণ করিতেন না। জগতের অনন্ত ভাণ্ডার আপনাদের অধিকারে আনিবার চেষ্টা না করিয়া, সকলেই ইংরাজি ও সংস্কৃতের ভাণ্ডাবে চুরির সন্ধানে বেড়াইতেন। সাহিত্যের পক্ষে ইহার অপেক্ষা গুরতর বিপদ, আর কিছুই নাই। বিদ্যাসাগর মহাশ্য ও অক্ষয় বাষ যাহা করিয়াছিলেন, তাহা সময়ের প্রয়োজনমত, অতএব তাঁহারা প্রশংসা ব্যতীত অপ্রশংসার পাত্র নহেন; কিন্তু সমস্ত বাঙ্গালি-লেখকের দল সেই একমাত্র পথেব পথিক হওযই বিপদ। এই দুইটি গুরতর বিপদ হইতে প্যারীচাঁদ মিত্রই বাঙ্গ লা সাহিত্যকে উদ্ধত করেন। যে ভাষা সকল বাঙ্গালির বোধগম্য এবং সকল বাঙ্গালি কর্তৃক ব্যবহৃত, প্রথম তি•ি তাহা গ্রন্থপ্রণয়নে ব্যবহার করিলেন। এবং তিনিই প্রথম ইংরাজি ও সংস্কৃতের ভাণ্ডাবে পগামী লেখকদিগের উচ্ছিষ্টবশেষেব ৩ সন্ধান কবি, স্বভাবের অনন্ত ভাণ্ডার হইতে আপনার রচনার উপাদান সংগ্রহ করিলেন। এক “আলালের ঘরের দুলাল” নামক গ্রন্থে এই উভয উদেশ। সিদ্ধ হইল। “আলালের ঘরের দুলাল” বাঙ্গালা ভাষায চিরস্থায়ী ও চি মরণীয হইবে। উহার অপেক্ষা উৎকৃষ্ট গ্রন্থ তৎপরে কেহ প্রণীত কবিয়া থাকিতে পারেন অথবা ভবিষ্যতে কেহ করিতে পারেন, কি “আলালেব ধবের দলালে ব দ্বারা বাঙ্গালা সাহি•ে1 যে উপকার ইসা, আর কোন বাঙ্গালা গ্রন্থের দ্বারা সেবাপ হয় নাই এবং ভবিত হইবে কি না সন্দেহ। আমি এমন বলিতেছি না যে আলালেব ঘবের দলালে"র ভাষা দশ ভাযা। উহাতে গাম্ভীর্যের এবং বিশদ্ধির অভাব আছে এবং উহাতে অতি উন্নত ভাব সকল সকল সময়ে, পরিক্ষ করা যায় কি না সন্দেহ। কিন্তু উহাতেই প্রথম এ বাঙ্গালা দেশে প্রচারিত হইল যে, যে বাঙ্গালা সর্বজনমধ্যে কথিত এবং প্রচলিত, তাহাতে গ্রন্থ রচনা করা যায, সে রচনা সবও হয়, এবং সে সর্বজন হৃদয় গতি সংস্কৃতান যামিনী ভাষার পক্ষে দলেভ, এ ভাষা তাহা সহজ গণ। এই কথা জানিতে পাবা বাঙ্গালি জাতির পক্ষে অপ লাভ হে, এবং এই কথা জানিতে পারার পর হইতে উন্নতির পথে বাঙ্গালা সাহিত্যের গতি অতিশয় দ্রুতবেগে চলিতেছে। বাঙ্গালা ভাষার এক সীমায় তারাশঙ্করের কাদম্বরীর অনুবাদ, আর এক সীমায় প্যারীচাঁদ মিত্রের “আলালের ঘরে দুলাল"। ইহাব কেহই আদর্শ ভাষায় রচিত নয়। কিন্তু “আলালের ঘরের দুলালের পর হইতে বাঙ্গালি লেখব জানিতে পারিল যে, এই উভয় জাতীয় ভাষাল উপযুক্ত সমাবেশ দ্বারা এবং বিষয়-ভেদে একের প্রবলতা ও অপরের অপতা দ্বারা, আদর্শ বাঙ্গালা গদ্যে উপস্থিত হওয়া যায়। প্যারীচাঁদ মিত্র আদর্শ বাঙ্গালা গদ্যের সষ্টিব ও ঁনহেন, কিন্তু বাঙ্গালা গদ্য যে উন্নতির পথে যাইতেছে, প্যারীচাঁদ মিত্র তাহার প্রধান ও প্রথম কারণ। ইহাই তাঁহার অক্ষয় কীর্ত্তি। | আর তাঁহার দ্বিতীয় অক্ষয় কীর্ত্তি এই যে, তিনিই প্রথম দেখাইলেন যে, সাহিত্যের প্রকৃত উপাদান আমাদের ঘরেই আছে,-তাহার জন্য ইংরাজি বা সংস্কৃতের কাছে ভিক্ষা চাহিতে হয় । তিনিই প্রথম দেখাইলেন যে, যেমন জীবনে তেমনই সাহিত্যে, ঘরের সামগ্রী যত সন্দর পরের সামগ্রী তত সুন্দর বোধ হয় না। তিনিই প্রথম দেখাইলেন যে, যদি সাহিত্যের দ্বারা বাঙ্গালা দেশকে উন্নত করিতে হয়, তবে বাঙ্গালা দেশের কথা লইয়াই সাহিত্য গড়িতে হইবে। প্রকৃত পক্ষে আমাদের জাতীয় সাহিত্যের আদি “আলালের ঘরের দুলাল"। প্যারীচাঁদ মিত্রের এই দ্বিতীয় অক্ষয়কীত্তি। | অতএব বাঙ্গালা সাহিত্যে প্যারীচাঁদ মিত্রের স্থান অতি উচ্চ। এই কপাই আমার বক্তব্য। তাঁহার প্রণীত গ্রন্থ সকলেব বিস্তারিত সমালোচনায় প্রবত্ত হইবার আমার আসর নাই। শ্রীবণিকমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী প্রতিভাশালী ব্যক্তিদিগের মধ্যে অনেকেই জীবিতকালে আপন আপন কৃতকার্যে পুরস্কার প্রাপ্ত হইয়া থাকেন। অনেকের ভাগ্যে তাহা ঘটে না। যাঁহাদের কার্য দেশ কালের উপযোগী নহে, বরং তাহার অগ্রগামী, তাঁহাদের ভাগ্যে ঘটে না। যাঁহারা লোকরঞ্জন অপেক্ষা লোকহিতকে