পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

I রবীন্দ্র বাবড় এ বিষয়ে সহায়তা করিবেন, কিন্তু বড় করেন নাই। তাঁহার কড়ি স্তম্ভ বস্তৃতার মধ্যে মোটে ছয় ছয় প্রমাণ প্রয়োগ খপূজিয়া পাইলাম। তাহা উদ্ধতে করিতেছি লেখক মহাশয় একটি হিন্দর আদশ কল্পনা করিয়া বলিয়াছেন, "তিনি যদি মিথ্যা কহেন, তবে মহাভারতীয় কৃফোক্তি অরণ পর্বক যেখানে লোকহিতার্থে মিথ্যা নিতান্ত প্রয়োজনীয়। অর্থাৎ যেখানে মিথ্যাই সত্য হয়, সেইখানেই মিথ্যা কথা কহিয়া থাকেন প্রমাণ প্রয়োগ এই পর্যত্তি; তার পর আদি ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক বলিতেছেন, "কোনখানেই মিথ্যা সত্য হয় না; শ্রদ্ধাস্পদ বকিম বাব বলিলেও হয় না, বয়ং শ্ৰীকৃষ্ণ বলিলেও হয় না। আমি বলিলেও মিথ্যা সত্য না হইতে পারে, গ্রীকৃষ্ণ বলিলেও না হইতে পারে, কপনা" সম্পাদক মহাশয়ের মৰুখ-নিঃসত এই চারিটি শব্দ পাঠককে উপহার দিতেছি প্রথম “কল্পনা” শব্দটি সত্য নহে। আমি আদশ হিন্দ, "কল্পনা" করিয়াছি, এ কথা আমার লেখার ভিতর কোথাও নাই। আমার লেখার ভিতর এমন কিছই নাই যে, তাহা হইতে এমন অন্যমান করা যায়। প্রচারের প্রথম সংখ্যায় হিন্দু ধর্ম" শীৰ্ষক প্ৰবন্ধ হইতে কথাটা রবীন্দ্র বাব, তুলিয়াছেন। পাঠক ঐ প্রবন্ধ পড়িয়া দেখিবেন যে, “কপনা" নহে। আমার নিকট অনিতে পারি। পট্টই বলিয়াছি যে, আমি ঐ ব্যক্তিকে দেখিয়াছি। ঐ ব্যক্তির পবিচয় দিয়া বলিয়াছি, “আর একটি হিন্দরে কথা বলি।” ইহাতে কলপনা বঝায় না, পরিচিত ব্যক্তির পরিচয় বঝোয়। তার পর "আদৰ্শ” কথাটি সত্য নহে। “আদৰ্শ” শব্দটা আমার উক্তিতে নাই। ভাবেও বাঝায় না। যে ব্যক্তি কখন কখন সরো পান করে, সে ব্যক্তি আদর্শ হিন্দ, বলিয়া গহীত হইল। কি প্রকারে ? এই দনুইটি কথা “অসত্য" বলিতে হয়। অথচ সত্যের মহিমা কীৰ্ত্তনে লাগিয়াছে। অতএব। কৃষ্ণের আজ্ঞায় মিথ্যা সত্য হউক না হউক, অদি ব্রাহ্ম সমাজের লেখকের বাক্যবলে হইতে পারে। প্রয়োজন হইলে এরপ উদাহরণ আরও দেওয়া যাইতে পারে। কিন্তু রবীন্দ্র বাবর সঙ্গে এরপ বিচারে আমার প্রবত্তি নাই। আমার যদি মনে থাকিত যে, আমি রবীন্দ্র বাবর প্রতিবাদ করিতেছি, তাহা হইলে এতটকুও বলিতাম না। এই রবির পিছনে যে ছায়া আছেআমি তাহারই প্রতিবাদ করিতেছি, বলিয়া এত কথা বলিলাম। এখন এ সকল বাজে কথা ছাড়িয়া দেওয়া যাক। স্থল কথার মীমাংসায় প্রবত্ত হওয়া যেখানে মিথ্যাই সত্য হয়”—এ কথার কোন অর্থ আছে কি ? যদি বলা যায়, "একটা চতুকোণ গোলক”—তবে অনেকেই বলিবেন, এমন কথার অর্থ নাই। যদি রবীন্দ্র বাব; আমার উক্তি তাই মনে করিতেন, তবে গোল মিটিত। তাঁহার বন্ধুতাও হইত না-আমাকেও এ পাপ প্ৰবন্ধ লিখিতে হইত না। তাহা নহে। ইহা অর্থ র্যক্ত বাক্য বটে, এবং তিনিও ইহাকে অর্থ র্যক্ত বাক্য মনে করিয়াইহার উপর বস্তৃতাটি খাড়া করিয়াছেন। যদি তাই, অবে জিৰ্জাসা করিতে হয়তিনি এমন কোন চেষ্টা করিয়াছেন কি, যাহাতে। লেখক যে অর্থে এই কথা ব্যবহার করিয়াছিল, সেই অর্থটি তাঁহার হদয়ঙ্গম হয় ? যদি তাহা না করিয়া থাকেন, তবে গালিই তাঁহার উদ্দেশ্যসত্য তাঁহার উদ্দেশ্য নহে। তিনি বলিবেন, "এমন কোন চেষ্টার প্রয়োজনই হয় নাই। লেখকের যে ভাব, লেখক নিজেই স্পষ্ট করিয়া বঝাইয়া দিয়াছেন-বলিয়াছেন, যেখানে লোকহিতার্থে মিথ্যা নিতান্ত প্রয়োজনীয়। ঠিক কথা কিন্তু এই কথা বলিয়াই আমি শেষ করি নাই। মহাভারতীয় একটি কৃফোক্তির উপর বরাত দিয়াছি। এই কৃফোক্তিটি কি, রবীন্দ্র বাব, তাহা পড়িয়া দেখিয়াছেন কি? যদি না দেখিয়া থাকেন, তবে কি প্রকারে জানিলেন যে, আমার কথার ভাবার্থ তিনি বাঝিয়াছেন। প্রত্যুত্তরে রবীন্দ্ৰ বাব বলিতে পারেন, “অষ্টাদশপ মহাভারত সমন্দ্রবিশেষ, আমি কোথায় সে বৃকোক্তি ইন্দ্ৰজিয়া পাইব ? তুমি ত কোন নিদর্শন লিখিয়া দাও নাই।” কাজটা রবীন্দ বাবর পক্ষে বড় কঠিন ছিল না। ১৫ই প্রাক আমার ঐ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তার পর, অনেক বার রবীন্দু বাবরে সঙ্গে সাক্ষাৎ হইয়াছে। প্রতিবার অনেকস ধরিয়া কথাবার্তা হইয়াছে।