পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাল্যরচনা

[এই কবিতাগুলি লেখকের পঞ্চদশ বৎসর বয়সে লিখিত। লিখিত হওয়ার তিন বৎসর পরে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হইয়া বিক্রেতার আলমারীতেই পচে-বিক্রয় হয় নাই। তাহার পর আর এ সকল পুনর্মুদ্রিত করিবার যোগ্য বিবেচনা করি নাই, এখনও আমার এমন বিবেচনা হয় না যে, ইহা পুনর্মুদ্রিত করা বিধেয়। বাল্যকালে কিরূপ লিখিয়াছিলাম, তাহা দেখাইয়া বাহাদুরী করিবার ভরসা কিছুমাত্র নাই; কেন না, অনেকেই অল্প বয়সে এরূপ কবিতা লিখিতে পারে। যাহা অপাঠ্য, তাহা বালক প্রণীত হউক, বা বৃদ্ধপ্রণীত হউক, তুল্যরূপে পরিহার্য্য। অতএব কিছু পরিবর্ত্তন না করিয়া “ললিতা” নামক কাব্যখানি পুনর্মুদ্রিত করিতে পারিলাম না। “মানস” নামক কাব্যখানিতে পরিবর্ত্তন বড় সহজ নহে, এ জন্য সে চেষ্টা করিলাম না। তথাপি সামান্যরূপ পরিবর্ত্তন করা গিয়াছে।]


বাল্যরচনা

ভৌতিক গল্প

“O Love! In such a wilderness as this.
Where transport with security entwine.
Here is the Empire of thy perfect bliss.
And there art thou a God indeed divine.”
                                         Gertrude of Wyoming.
“But mortal pleasure, what art thou in truth!
The torrents’ smoothness ere it dash below.”
                                                      Ibid.

প্রথম সর্গ


মহারণ্যে অন্ধকার, গভীর নেশায়
নির্ম্মল আকাশ নীলে, শশী ভেসে যায় ||
কাননের পাতা ছাদ, নীচে শশিকরে।
পবন দোলায় তারে সুমধুর স্বরে ||
নীচে তার অন্ধকারে, আছে ক্ষুদ্র নদী।
অন্ধকার মহাস্তব্ধ, বহে নিরবধি ||
ভীম তরুশাখা যথা পড়িয়াছে জলে,
কল কল করি বারি সুরবে উছলে ||
আঁধারে অস্পষ্ট দেখি, যেন বা স্বপন!
কলিকাস্তবকময় ক্ষুদ্র তরুগণ ||
শাখার বিচ্ছেদে, কভু, শশধরকর,
স্থানে স্থানে পড়িয়াছে, নীল জলোপর ||
ঘোর স্তব্ধ নদীতটেঃ শুধু ক্ষণে ক্ষণে,
কোন কীট যায় আসে নাড়া দিয়ে বনে ||
শুধু অন্ধকার মাঝে, অলক্ষ্য শরীর!
কোন হিংস্র পশু ছাড়ে, নিশ্বাস গভীর ||
অসংখ্য পত্রের শুধু, ভীষণ মর্ম্মর।
আর শুধু শুনি এক, সঙ্গীতের স্বর ||
গভীর সঙ্গীত সেই! ভাসে নদী দিয়ে।
ভাঙ্গিল গভীর স্তব্ধ স্বরে শিহরিয়ে-
কখন কোমল স্থির করুণার স্বরে,
যেন কোন বিরহিণী কেঁদে কেঁদে মরে ||
শুনিয়ে তা মনে হয়, ঈষৎ আভাস,
যেন কত সুখস্বপ্ন, হয়েছে বিনাশ;
কি কারণে দুঃখোদয় কিসের স্মরণে,
কিছুই বুঝি না তবু, উচাটন মনে ||
ফুলিয়া উঠেছে ধ্বনি, স্থির শূন্য কেটে।
ইচ্ছা করে গগনেতে উঠে যাই ফেটে ||
ছেঁড়ে হৃদয়ের ডোর গভীর যাতনে।
ইচ্ছা করে গলি গিয়ে মিশি গান সনে ||
আর যদি সঙ্গীতের দেহ দেখা পাই!
যতনেতে আলিঙ্গিয়া, মোহে মরে যাই ||

নদীতীরে বৃক্ষ নাহি ছিল এক স্থানে।
দীর্ঘ তৃণে চন্দ্রকর জ্বলিছে সেখানে ||
ছোট গাছে তারামত ফুল্ল পুষ্পদলে।
স্থির তার প্রতিরূপ স্থির নদীজলে ||
সুখস্বপ্নে যেন তারা, নিদ্রাভরে হাসে।
গগন গুমুরে মরে, সুখময় বাসে ||
সেই স্থানে বসি এক নারী একাকিনী।
ফুলহীন বনে যেন স্থলকমলিনী ||