পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, দাগেশনন্দিনী পঞ্চম পরিচ্ছেদ ৪ বিধবা তিলোত্তমা কোথায় ? পিতৃহীনা, অনাথিনী বালিকা কোথায় ? বিমলাই বা কোথায় ? কোথা হইতে বিমলা সবামীর বধ্যভূমিতে আসিয়া দশন দিয়াছিলেন ? তাহার পরই আবার <गाथा काळ ? কেন বীরেন্দ্ৰসিংহ মাতুত্যুকালে প্রিয়তমা কন্যার সহিত সাক্ষাৎ করিলেন না ? কেনই বা নামমাত্রে হতাশনবৎ প্ৰদীপিত হইয়াছিলেন ? কেন বলিয়াছেন “আমার কন্যা নাই ?” কেন বিমলীর পত্র বিনা পাঠে দরে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন ? এতেকে, কতল খাঁর প্রতি বীরেন্দ্রর তিরস্কার স্মরণ করিয়া দেখ, কি ভয়ানক ব্যাপার “পবিত্ৰ কুল কালি পড়িয়াছে।” এই কথা বলিয়া শঙ্খলাবদ্ধ ব্যাঘ্র গজািন করিয়াছিল। তিলোত্তমা আর বিমলা কোথায়, জিজ্ঞাসা করা ? কতল খাঁর উপপত্নীদিগের আবাসগহে। সন্ধান কর, দেখা পাইবে। সংসারের”এই গতি! অদক্ৰটচক্রের এমনি নিদারণ আবৰ্ত্তন!! রােপ, যৌবন, সরলতা, অমলতা সকলই নেমির পোষণে দলিত হইয়া যায় ! কতলা খাঁর এই নিয়ম ছিল যে, কোন দােগ বা গ্রাম জয় হইলে, তন্মধ্যে কোন উৎকৃষ্ট সন্দরী যদি বন্দী হইত, তবে সে তাঁহার আত্মসেবার জন্য প্রেরিত হইত। গড় মান্দারণ জয়ের পরদিবস, কতল, খাঁ তথায় উপনীত হইয়া বন্দৰীদিগের প্রতি যথা-বিহিত বিধান ও ভবিষ্যতে দাগের রক্ষণাবেক্ষণ পক্ষে সৈন্য নিয়োজন ইত্যাদি বিষয়ে নিযক্ত হইলেন। বন্দৰীদিগের মধ্যে বিমলা ও তিলোত্তমাকে দেখিবামাত্ৰ নিজ বিলাসগহ সাজাইবার জন্য তাহাদিগকে পাঠাইলেন। তৎপরে অন্যান্য কায্যে বিশেষ ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। এমন শ্রত ছিলেন যে, রাজপত সেনা জগৎসিংহের বন্ধন শনিয়া নিকটে কোথাও আক্রমণের উদ্যোগে আছে; অতএব তাহাদিগকে পরাঙামাখ করিবার জন্য উচিত ব্যবস্থা বিধানাদিতে ব্যাপতি ছিলেন, এজন্য এ পয্যন্ত কতল খাঁ নািতন দাসীদিগের সওগসখলাভ করিতে অবকাশ পান নাই। বিমলা ও তিলোত্তম পথক পথক কক্ষে রক্ষিত হইয়াছিলেন। তথায় পিতৃহীনা। নবীনার ধলি-ধােসর দেহলতা ধরাতলে পড়িয়া আছে, পাঠক! তথায় নেত্রপাত করিয়া কাজ নাই। কাজ কি ? তিলোত্তমা প্ৰতি কে আর এখন নেত্রপাত করিতেছে ? মধদয়ে নববল্লারী যখন মন্দ-বায়হিল্লোলে বিধত হইতে থাকে, কে না তখন সবােসাশয়ে সাদরে তাহার কাছে দন্ডায়মান হয় ? আর যখন নৈদাঘ ঝটিকাতে অবলম্বিবত ব্যক্ষ সহিত সে ভূতলশায়িনী হয়, তখন উন্মলিত পদার্থ রাশি মধ্যে বক্ষু ছাড়িয়া কে লতা দস্টি করে ? কাঠারিয়ারা কাঠ কাটিয়া লইয়া যায়, লতাকে পদতলে দলিত করে মাত্র। চল, তিলোত্তমাকে রাখিয়া অন্যত্র যাই। যথায় চঞ্চলা, চতুরা, রসপ্রিয়া, রসিকা বিমলার পরিবত্তে গম্ভীরা, অনাতাপিতা, মলিনা বিধবা চক্ষে অঞ্চল দিয়া বসিয়া আছে, তথায় যাই । এই কি বিমলা ? তাহার সে কেশবিন্যাস নাই। মাথায় ধালিরাশি ; সে কার্যকাৰ্য্য-খচিত ওড়না নাই; সে রত্ন-খচিত কাঁচালি নাই; বসন বড় মলিন। পরিধানে জনীণ, ক্ষদ্র বসন । সে অলঙ্কার-ভার কোথায় ? সে অংসসংসপেশী লোভী কণাভরণ কোথায় ? চক্ষ ফলিয়াছে কেন ? সে কটাক্ষ কই ? কপালে ক্ষত কেন ? রধির যে বাহিত হইতেছে! বিমলা ওসমানের প্রতীক্ষা করিতেছিলেন। ওসমান পাঠানকুলতিলক। যাদ্ধ তাঁহার সাবাথ সাধন ও নিজ ব্যবসায় এবং ধৰ্ম্ম; সতরাং যাদ্ধজয়ার্থ ওসমান কোন কায্যেই সঙ্কোচ করিতেন না। কিন্তু যাদ্ধপ্রয়োজন সিদ্ধ হইলে পরাজিত পক্ষের প্রতি কদাচিৎ নিম্পপ্রয়োজনে তিলাদধি অত্যাচার করিতে দিতেন না। যদি কতল খাঁ সবিয়ং বিমলা, তিলোত্তমার আদলেট এ দারণ বিধান না করিতেন, তবে ওসমানের কৃপায় তাঁহারা কদাচি বন্দী থাকিতেন না। তাঁহারই অনাকক্ষপায় স্বামীর মাতুত্যুকালে বিমলা তৎসাক্ষাৎ লাভ করিয়াছিলেন। পরে যখন ওসমান জানিতে পারিলেন যে, বিমলা বীরেন্দ্ৰসিংহের সন্ত্রী, তখন କିଳକିଳ