পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দগেশনন্দিনী করিলেন। মাহর নাম পরিবত্তন করিয়া বিমলা নাম রাখিলেন। আমি পিত্ৰালয়ে থাকিয়া পিতার সেবায় বিধিমতে মনোভিনিবেশ করিলাম; তাঁহার যাহাতে তুম্পিট জন্মে, তাহাতে যত্ন করিতে লাগিলাম। সাবাথ সিদ্ধি কিম্বা পিতার স্নেহের আকাঙক্ষায় এইরুপ করিতাম, তাহা নহে; বস্তুতঃ পিতৃসেবায় আমার আন্তরিক আনন্দ জন্মিত; পিতা ব্যতীত আমার আর কেহ ছিল না। মনে করিতাম, পিতৃসেবা অপেক্ষা আর সখি নাই। পিতাও আমার ভক্তি দেখিয়াই হউক বা মনয্যের সর্বভাব সিদ্ধ গণবশতঃই হউক, আমাকে স্নেহ করিতে লাগিলেন। স্নেহ সমদ্ৰমাখী নদীর ন্যায়; যত প্রবাহিত হয়, তত বন্ধিত হইতে থাকে। যখন আমার সখবাসর প্রভাত হইল, তখন জানিতে পারিয়াছিলাম যে, পিতা আমাকে কত ভালবাসিতেন।” সপতম পরিচ্ছেদ ঃ বিমলার পত্র সমাপত “আমি পকেবই বলিয়াছি যে, গড় মান্দারণের কোন দরিদ্রারমণী আমার পিতার ঔরসে গভর্ণবতী হয়েনু । আমার মাতার যেরপে অদভটলিপির ফল, ইহারও তদ্রপ ঘটিয়াছিল। ইহার গভে ও একটি কন্যা জন্মগ্রহণ করে, এবং কন্যার মাতা অচিরাৎ বিধবা হইলে, তিনি আমার মাতার ন্যায়, নিজ কায়িক পরিশ্রমের দবারা অথোেপাজন করিয়া কন্যা প্রতিপালন করিতে লাগিলেন। বিধাতার এমত নিয়ম নহে যে, যেমন আকর, তদপ্যযন্ত সামগ্রীরই উৎপত্তি হইবে। পৰ্ব্বতের পাষাণেও কোমল কুসমলতা জন্মে; অন্ধকার খনিমধ্যেও উত্তজবল রত্ন জন্মে। দরিদ্রের ঘরেও অদভুত সন্দরী কন্যা জন্মিল। বিধবার কন্যা গড় মান্দারণ গ্রামের মধ্যে প্রসিদ্ধ সন্দরী বলিয়া পরিগণিত হইতে লাগিলেন। কালে সকলেরই লয়; কালে বিধবার কলঙ্কেরও লয় হইল। বিধবার সন্দরী কন্যা যে জারজা, এ কথা অনেকে বিস্মত হইল। অনেকে জানিত না। দগমধ্যে প্রায় এ কথা কেহই জানিত না। আর অধিক কি বলিব ? সেই সন্দরী তিলোত্তমার গভর্ধারিণী হইলেন। তিলোত্তমা যখন মাতৃগভে তখন এই বিবাহ কারণেই আমার জীবনমধ্যে প্রধান ঘটনা ঘটিল। সেই সময়ে এক দিন পিতা তাঁহার জামাতাকে সমভিব্যাহারে করিয়া আশ্রমে আসিলেন। আমার নিকট মন্ত্রশিষ্য বলিয়া পরিচয় দিলেন, সবগীয় প্রভুর নিকট প্রকৃত পরিচয় পাইলাম। যে অবধি তাঁহাকে দেখিলাম, সেই অবধি আপন চিত্ত পরের হইল। কিন্তু কি বলিয়াই বা সে সব কথা আপনাকে বলি ? বীরেন্দ্ৰসিংহ বিবাহ ভিন্ন আমাকে লাভ করিতে পারবেন না। বঝিলেন। পিতাও সকল বক্তান্ত অন্যভাবে জানিতে পারিলেন ; একদিন উভয়ে এইরাপ কথোপকথন হইতেছিল, অন্তরাল হইতে শনিতে পাইলাম। পিতা কহিলেন, “আমি বিমলাকে ত্যাগ করিয়া কোথাও থাকিতে পারিব না। কিন্তু বিমলা যদি তোমার ধৰ্ম্মপত্নী হয় তবে আমি তোমার নিকট থাকিব। আর যদি তোমার সে অভিপ্রায় না থাকে-” পিতার কথা সমাপত না হইতে হইতেই সবগীয় দেব কিঞ্চিৎ রাস্ট হইয়া কহিলেন, “ঠাকুর! শদ্রী-কন্যাকে কি প্রকারে বিবাহ করিব ?” পিতা শেলষ করিয়া কহিলেন, ‘জারজা কন্যাকে বিবাহ করিলে কি প্রকারে ?” প্ৰাণেশ্ববর কিঞ্চিৎ ক্ষম হইয়া কহিলেন, “যখন বিবাহ করিয়াছিলাম, তখন জানিতাম না যে, সে জারজা। জানিয়া শনিয়া শব্দ্রীকে কি প্রকারে বিবাহ করিব ? আর আপনার জ্যোিঠা কন্যা জারজা হইলেও শািন্দ্ৰী নহে।” পিতা কহিলেন, “তুমি বিবাহে অস্বীকৃত হইলে, উত্তম। তোমার যাতায়াতে বিমলার অনিন্ট ঘটিতেছে, তোমার আর এ আশ্রমে আসিবার প্রয়োজন করে না। তোমার গহেই আমার সহিত সাক্ষাৎ হইবেক !” সে অবধিই তিনি কিয়দিবস যাতায়াত ত্যাগ করিলেন। আমি চাতকীর ন্যায় প্রতিদিবস তাঁহার আগমন প্রত্যাশা করিতাম; কিন্তু কিছ কাল আশা নিস্ফল হইতে লাগিল। বোধ করি, তিনি আর স্থির থাকিতে পারিলেন না। পনেকবার পািব্বমত যাতায়াত করিতে লাগিলেন। এজন্য পনেকবার তাঁহার দশন পাইয়া আর তত লতাজাশীলা হইলাম না। পিতা তাহা পৰ্যবেক্ষণ NS O VO