পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী করিলেন। একদিন আমাকে ডাকিয়া কহিলেন, “আমি অনাশ্রম-ব্ৰত-ধৰ্ম্মম অবলম্বন করিয়াছি, চিরদিন আমার কন্যার সহবাস ঘটিবেক না। আমি সস্থানে সথানে পৰ্যটন করিতে যাইব, তুমি তখন কোথায় থাকিবে ?” আমি পিতার বিরহাশঙ্কায় অত্যন্ত কাতর হইয়া রোদন করিতে লাগিলাম। কহিলাম, ‘আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে যাইব । না হয়, যেরপ কাশীধামে একাকিনী ছিলাম, এখানেও সেইরােপ থাকিব।” r পিতা কহিলেন, “না বিমলে! আমি তদপেক্ষা উত্তম সঙকলাপ করিয়াছি। আমার অনবস্থানকালে তোমার সরক্ষক বিধান করিব। তুমি মহারাজ মানসিংহের নবোঢ়া মহিষীর সাহচয্যে নিযক্ত থাকিবে।” আমি কাঁদিয়া কহিলাম, “তুমি আমাকে পরিত্যাগ করিও না।’ পিতা কহিলেন, “না, আমি এক্ষণে কোথাও যাইব না। তুমি এখন মানসিংহের গহে যাও । আমি এখানেই রহিলাম; প্রত্যহই তোমাকে দেখিয়া আসিব । তুমি তথায় কিরােপ থােক, তাহা বঝিয়া কৰ্ত্তব্য বিধান করিব।” যদুবরাজ ! আমি তোমাদিগের গহে পরাঙ্গনা হইলাম। কৌশলে পিতা আমাকে নিজ জামাতার চক্ষঃপথ হইতে দীর করিলেন। যদুবরাজ ! আমি তোমার পিতৃভবনে অনেক দিন পৌরস্ত্রী হইয়া ছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে চেন না। তুমি তখন দশমন্বষীয় বালক মাত্র; অম্বরের রাজবাটীতে মাতৃ-সন্নিধানে থাকিতে, আমি তোমার (নবোঢ়া) বিমাতার সাহচর্য্যে দিল্লীতে নিযক্ত থাকিতাম। কুসমের মালার তুল্য মহারাজ মানসিংহের কণ্ঠে অগণিতসংখ্যা রমণীরাজি গ্রথিত থাকিত ; তুমি কি তোমার বিমাতা সকলকেই চিনিতে ? যোধপরিসম্ভূতা উমিলা দেবীকে তোমার সমরণ হইবে ? উন্মিলার গণ তোমার নিকট কত পরিচয় দিব ? তিনি আমাকে সহাচারিণী দাসী বলিয়া জানিতেন না ; “আমাকে প্ৰাণাধিকা সহোদরা ভগিনীর ন্যায় জানিতেন। তিনি আমাকে সযত্নে নানা বিদ্যা শিখাইবার পদবীতে আরােঢ় করিয়া দিলেন। তাঁহারই অনাকক্ষপায় শিলপকাৰ্য্যাদি শিখিলাম। তাঁহারই মনোরঞ্জনাৰ্থে ন ত্যগীত শিখিলাম। তিনি আমাকে স্বয়ং লেখাপড়া শিখাইলেন। এই যে কদাক্ষরসম্বন্ধ পত্ৰী তোমার নিকট পাঠাইতে সক্ষম হইতেছি, ইহা কেবল তোমার বিমাতা উম্মিলা দেবীর অনকক্ষপায়। সখী উমিলার কৃপায় আরও গরতের লাভ হইল। তিনি নিজ প্রীতিচক্ষে আমাকে যেমন দেখিতেন, মহারাজের নিকট সেইরােপ পরিচয় দিতেন। আমার সঙগীতাদিতে কিঞ্চিৎ ক্ষমতা জন্মিয়াছিল; তদশন শ্রবণেও মহারাজের প্রীতি জন্মিত। যে কারণেই হউক, মহারাজ মানসিংহ আমাকে নিজ পরিবারস্থার ন্যায়। ভাবিতেন । তিনি আমার পিতাকে ভক্তি করিতেন; পিতা সব্বদা আমার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া আসিতেন। উম্মিলা দেবীর নিকট আমি সব্বাংশে সখী ছিলাম। কেবল এক মাত্র পরিতাপ যে, যাঁহার জন্য ধৰ্ম্ম ভিন্ন সৰ্ব্বত্যাগী হইতে প্রস্তুত ছিলাম, তাঁহার দর্শন পাইতাম না। তিনিই কি আমাকে বিস্মত হইয়াছিলেন ? তাহা নহে। যবরাজ ! আশামানি নাম্নী পরিচারিকাকে কি আপনার সমরণ হয় ? হইতেও পারে। আশামানির সহিত আমার বিশেষ সম্প্রীতি ঘটিল; আমি তাহাকে প্রভুর সংবাদ আনিতে পাঠাইলাম। সে তাঁহার অন্যসন্ধান করিয়া তাঁহাকে আমার সংবাদ দিয়া আসিল। প্রত্যুত্তরে তিনি আমাকে কত কথা কহিয়া পাঠাইলেন, তাহা কি বলিব ? আমি আশমানির হস্থে তাঁহাকে -পত্ৰ লিখিয়া পাঠাইলাম, তিনিও তাহার প্রত্যুত্তর পাঠাইলেন। পািনঃ পানঃ ঐরাপ ঘটিতে লাগিল। এই প্রকার আদর্শনেও পরস্পর কথোপকথন করিতে লাগিলাম। এই প্ৰণালীতে তিন বৎসর কাটিয়া গেল। যখন তিন বাংসরের বিচ্ছেদেও পরস্পর বিস্মত হইলাম না, তখন উভয়েই বঝিলাম যে, এ প্রণয় শৈবালপক্ষেপর ন্যায়। কেবল উপরে ভাসমান নহে, পদ্মের ন্যায় ভিতরে বন্ধমলে। কি কারণে বলিতে পারি না, এই সময়ে তাঁহারও ধৈৰ্য্যাবিশেষ হইল। একদিন তিনি বিপরীত ঘটাইলেন। নিশাকালে একাকিনী শয়নকক্ষে শয়ন করিয়াছিলাম, অকস্মাৎ নিদ্ৰাভঙ্গ হইলে স্তিমিত দীপালোকে দেখিলাম, শিয়রে একজন মনষ্যে। মধর শব্দে আমার কর্ণরন্ধুে এই বাক্য প্রবেশ করিল যে, ‘প্ৰাণেশবরী ! ভয় পাইও না। আমি তোমারই একান্ত দাস।” আমি কি উত্তর দিব ? তিন বৎসর পর সাক্ষাৎ। সকল কথা ভুলিয়া গেলাম—তাঁহার SO 8