পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী আমার পরিচয় দেওয়া শেষ হইল। কেবল আত্মপ্রতিশ্রতি উদ্ধার করাই আমার উদ্দেশ্য নহে। অনেকে মনে করে, আমি কুলধৰ্ম্মম বিসঙ্জন করিয়া গড় মান্দারণের অধিপতির নিকট ছিলাম। আমার লোকান্তর হইলে, নাম হইতে সে কালি আপনি মছাইবেন, এই ভরসাতেই আপনাকে এত লিখিলাম। এই পত্রে কেবল আত্মবিবরণই লিখিলাম। যাহার সংবাদ জন্য আপনি চঞ্চলচিত্ত, তাহার নামোল্লেখও করিলাম না। মনে করন, সে নাম এ পথিবীতে লোপ হইয়াছে। তিলোত্তমা বলিয়া যে কেহ কখন ছিল, তাহা বিস্মত হউন—” ওসমান লিপিপাঠ সমাপত করিয়া কহিলেন, “মা! আপনি আমার জীবন রক্ষা করিয়াছিলেন, আমি আপনার প্রত্যুপকার করিব।” বিমলা দীঘ নিশবাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “আর আমার পথিবীতে উপকার কি আছে ? তুমি আমার কি উপকার করিবে! তবে এক উপকার—“ ওসমান কহিলেন, “আমি তাহাই সাধন করিব।” বিমলার চক্ষ প্রোক্তজবল হইল, কহিলেন, “ওসমান! কি কহিতেছ? এ দগধ হৃদয়কে আর কেন প্রবণ8না করা ?” ওসমান হস্ত হইতে একটি অঙ্গরীয় মক্ত করিয়া কহিলেন, “এই অঙ্গরীয় গ্রহণ কর, দই একদিন মধ্যে কিছ, সাধন হইবে না। কতল খাঁর জন্মদিন আগতপ্ৰায়, সে দিবস বড় উৎসব হইয়া থাকে। প্রহরীগণ আমোদে মত্ত থাকে। সেই দিবস। আমি তোমাকে উদ্ধার করিব। তুমি সেই দিবস নিশীথে অন্তঃপােরন্দবারে আসিও ; যদি তথায় কেহ তোমাকে এই রােপ দিবতীয় অঙ্গরীয় দলটি করায়, তবে তুমি তাহার সঙ্গে বাহিরে আসিও ; ভরসা করি, নিৰ্ভকৰ্ণাটক আসিতে পরিবে। তবে জগদীশবারের ইচ্ছা।” বিমলা কহিলেন, “জগদীশবার তোমাকে দীঘজীবী করান, আমি অধিক কি বলিব।” বিমলা রন্ধকন্ঠ হইয়া আর কথা কহিতে পারিলেন না। বিমলা ওসমানকে আশীৰ্ব্ববাদ করিয়া বিদায় লইবেন, এমন সময়ে ওসমান কহিলেন, “এক কথা সাবধান করিয়া দিই। একাকিনী আসিবেন। আপনার সঙ্গে কেহ সঙিগনী থাকিলে কাৰ্য্যসিদ্ধ হইবে না, বরং প্রমাদ ঘটিবে।” বিমলা বঝিতে পারিলেন যে, ওসমান তিলোত্তমাকে সঙ্গে আনিতে নিষেধ করিতেছেন। মনে মনে ভাবিলেন, “ভাল, দইজন না। যাইতে পারি, তিলোত্তমা একাই আসিবে।” বিমলা বিদায় হইলেন। অভটম পরিচ্ছেদ ঃ আরোগ্য দিন যায়। তুমি যাহা ইচ্ছা তাহা কর, দিন যাবে, রবে না। যে অবস্থায় ইচ্ছা, সে অবস্থায় থােক, দিন যাবে, রবে না। পথিক ! বড় দারণ ঝটিকা বান্টিতে পতিত হইয়ােছ ? উচ্চ রবে: শিরোপার ঘনগডজনি হইতেছে ? বন্টিতে পলাবিত হইতেছ? অনাবািত শরীরে করকাভিঘাত হইতেছে ? আশ্রয় পাইতেছ না ? ক্ষণেক ধৈয্য ধর, এ দিন যাবে—রবে না! ক্ষণেক অপেক্ষা কর; দন্দিন ঘচিবে, সদিন হইবে ; ভানদয় হইবে; কালি পৰ্যন্ত অপেক্ষা কর। কাহার না দিন ফন্ধয় ? কাহার দঃখ স্থায়ী করিবার জন্য দিন বসিয়া থাকে ? তবে কেন রোদিন করা ? কার দিন গেল না ? তিলোত্তম ধােলায় পড়িয়া আছে, তব দিন যাইতেছে। বিমলার হৃৎপদ্মে প্রতিহিংসা-কালফণী বসতি করিয়া সৰ্ব্বশরীর বিষে জািজর করিতেছে, এক মহত্ত তাহার দংশন অসহ্য; এক দিনে কত মহত্ত! তথাপি দিন “কি গেল না ? কতলা খাঁ মসনদে শত্র জয়ী: সমুখে দিন যাইতেছে। দিন যাইতেছে, রহে না। জগৎ সিংহ রক্ষনশয্যায়; রোগীর দিন কত দীঘ, কে না জানে ? তথাপি দিন গেল! দিন গেল। দিনে দিনে জগৎসিংহের আরোগ্য জন্মিতে লাগিল। একেবারে যমদণ্ডড হইতে নিস্কৃতি পাইয়া রাজপত্র দিনে দিনে নিরাপদ হইতে লাগিলেন। প্রথমে শরীরের গলানি দর; পরে আহার; পরে বল ; শেষে চিন্তা। N O V