পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দূগেশনন্দিনী প্রথম চিন্তা-তিলোত্তমা কোথায়? রাজপত্র যত আরোগ্য পাইতে লাগিলেন, তত সংবন্ধিত ব্যাকুলতার সহিত সকলকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন; কেহ তুভিটজনক উত্তর দিল না। আয়েষা জানেন না; ওসমান বলেন না; দাসদাসী জানে না, কি ইঙিগত মতে বলে না। রাজপত্রে কণাটকশয্যাশায়ীর ন্যায় চঞ্চল হইলেন । দিবতীয় চিন্তা—নিজ ভবিষ্যৎ । “কি হইবে।” অকস্মাৎ এ প্রশেনর কে উত্তর দিতে পারে ? রাজপত্র দেখিলেন, তিনি বন্দী। করণহাদয় ওসমান ও আয়েষার অনকক্ষপায় তিনি কারাগারের বিনিময়ে সমসজিজত, সবাসিত শয়নকক্ষে বসতি করিতেছেন ; দাসদাসী তাঁহার সেবা করিতেছে ; যখন যাহা প্রয়োজন, তাহা ইচ্ছা-ব্যক্তির পর্বেই পাইতেছেন; আয়েষ্যা সহোদরাধিক স্নেহের সহিত তাঁহার যত্ন করিতেছেন; তথাপি দাবারে প্রহরী; সাবণ পিঞ্জীরবাসী সরস পাণীয়ে পরিতৃপিতি বিহঙ্গমের ন্যায় রন্ধ আছেন। তবে মাক্তিপ্রাপতি হইবেন ? মাক্তিপ্রাপিতর কি সম্ভাবনা ? তাঁহার সেনা সকল কোথায় ? সেনাপতিশান্য হইয়া তাহদের কি দশা হইল ? তৃতীয় চিন্তা—আয়েষা। এ চমৎকারিণী, পরহিত মাত্তিময়ী, কেমন করিয়া এই মন্ময় পথিবীতে অবতরণ করিল ? জগৎ সিংহ দেখিলেন, আয়েষার বিরাম নাই, শ্রান্তি বোধ নাই, অবহেলা নাই। রাত্রিদিন রোগীর শাশ্রষ্টা করিতেছেন। যতদিন না। রাজপত্র নীরোগ হইলেন, ততদিন তিনি প্রত্যহ প্রভাতে দেখিতেন, প্রভাতসােয্যর পিণী কুসমী-দাম হস্তে করিয়া লাবণ্যময় পদ-বিক্ষেপে নিঃশব্দে আগমন করিতেছেন। প্রতিদিন দেখিতেন, যতক্ষণ সনানাদি কায্যের সময় অতীত না হইয়া যায়, ততক্ষণ আয়েষা সে কক্ষ ত্যাগ করিতেন না। প্রতিদিন দেখিতেন, ক্ষণকাল পরেই প্রত্যাগমন করিয়া কেবল নিতান্ত প্রয়োজনবশতঃ গাত্ৰোথান করিতেন; যতক্ষণ না তাঁহার জননী বেগম তাঁহার নিকট কিঙকরী পাঠাইতেন, ততক্ষণ তাঁহার সেবায় ক্ষান্ত হইতেন না। কে রিগান-শয্যায় না। শয়ন করিয়াছেন ? যদি কাহারাও রাগনাশয্যার শিয়রে বসিয়া মনোমোহিনী রমণী ব্যজন করিয়া থাকে, তবে সেই জানে রোগেও সখ। পাঠক! তুমি জগৎসিংহের অবস্থা প্রত্যক্ষীভূত করিতে চাহ ? তবে মনে মনে সেই শয্যায় শয়ন কর, শরীরে ব্যাধিযন্ত্রণা অনভূত কর; স্মরণ করা যে, শত্র মধ্যে বন্দী হইয়া আছ; তার পর সেই সবাসিত, সমসজিজত, সস্নিগধ শয়নকক্ষ মনে কর। শয্যায় শয়ন করিয়া তুমি দবারপানে চাহিয়া আছা; অকস্মাৎ তোমার মাখ প্রফতুল্ল হইয়া উঠিল; এই শত্রপরীমধ্যে যে তোমাকে সহোদরের ন্যায় যত্ন করে, সেই আসিতেছে। সে আবার রমণী, যাবতী, পণবিকসিত পদম! আমনই শয়ন করিয়া একদম্পেট চাহিয়া আছ; দেখা কি মাত্তি ! ঈষৎ—ঈষৎ মাত্ৰ দীঘ আয়তন, তদপযন্ত গঠন, মহামহিম দেবী-প্রতিমা সবন প! প্রকৃতি-নিয়মিত রাজ্ঞী সবরপ! দেখা কি ললিত পাদবিক্ষেপ ! গজেন্দ্রগমন শনিয়াছ ? সে কি ? মরালগমন বল ? ঐ পাদবিক্ষেপ দেখ; সরের লয়, বাদ্যে হয় ; ঐ পাদবিক্ষেপের লয়, তোমার হৃদয় মধ্যে হইতেছে। হস্তে ঐ কুসমদাম দেখ, হস্তপ্রভায় কুসম মলিন হইয়াছে দেখিয়াছ ? কন্ঠের প্রভায় সবর্ণহার দীপিতহীন হইয়াছে দেখিয়াছ ? তোমার চক্ষর পলক পড়ে না কেন ? দেখিয়াছ কি সন্দির গ্রীবাভঙগী ? দেখিয়াছ প্রস্তরধবল গ্রীবার উপর কেমন নিবিড় কুণ্ডিত কেশগচ্ছ পড়িয়াছে ? দেখিয়াছ তৎপাশেব কেমন কৰ্ণ ভূষা দলিতেছে ? মস্তকের ঈষৎ-ঈষৎ মাত্র বঙ্কিম ভঙ্গী দেখিয়াছ ? ও কেবল ঈষৎ দৈঘ্যহেতু। অত একদা ভিটতে চাহিতেছ। কেন ? আয়েষ্যা কি মনে করিবে ? যতদিন জগৎ সিংহের রোগের শাশ্রষা আবশ্যকতা হইল, ততদিন পম্যান্ত আয়েষা প্রত্যহ এইরুপ অনবরত তাহাতে নিযন্ত রহিলেন। ক্ৰমে যেমন রাজপত্রের রোগের উপশম হইতে লাগিল, তেমনই আয়েষারও যাতায়াত কমিতে লাগিল; যখন রাজপত্রের রোগ নিঃশেষ হইল, তখন আয়েষার জগৎ সিংহের নিকট যাতায়াত প্রায় একেবারে শেষ হইল ; কদাচিৎ দই একবার আসিতেন। যেমন শীতাত্ত মধ্যক্তির অঙ্গ হইতে ক্ৰমে ক্ৰমে বেলাধিক্যে রৌদ্র সরিয়া যায়, আয়েষা সেইরাপ ক্ৰমে ক্ৰমে জগৎ সিংহ হইতে আরোগ্য কালে সরিয়া যাইতে লাগিলেন। একদিন গহমধ্যে অপরাহে জগৎ সিংহ, গবাক্ষে দাঁড়াইয়া দাগের বাহিরে দণ্টিপাত করিতেছেন ; কত লোক অবাধে নিজ নিজ ঈপিসত বা প্রয়োজনীয় স্থানে যাতায়াত করিতেছে, রাজপত্র দঃখিত হইয়া তাহাদিগের অবস্থার সহিত আত্মাবস্থা তুলনা করিতেছিলেন। এক স্থানে কয়েকজন লোক মন্ডলীকৃত হইয়া কোন ব্যক্তি বা বস্তু বেস্টন পাকবািক দাঁড়াইয়াছিল। রাজপত্রের NO ČR