পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী ওসমান রাজপত্রের অভিপ্রায় 'বঝিতে পারিয়া উদিবগন হইলেন। দিগগজ কহিলেন, “আর অভিরাম সবামী পলায়ন করিয়াছেন।” রাজপত্র বঝিলেন, নিকেবােধকে সপস্ট সাপস্ট জিজ্ঞাসা না করিলে কিছই শনিতে পাইবেন। না। কহিলেন, “বীরেন্দ্ৰসিংহের কি হইয়াছে ?” ব্রাহ্মণ কহিলেন, “নবাব কতল খাঁ তাঁহাকে কাটিয়া ফেলিয়াছেন!” রাজপত্রের মািখ রান্তিমবণ হইল। ওসমানকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ ‘সে কি ?” এ ব্রাহ্মণ অলীক কথা কহিতেছে ?” ওসমান গম্ভীরভাবে কহিলেন, “নবাব বিচার করিয়া রাজবিদ্রোহী জ্ঞানে প্ৰাণদণড করিয়াছেন।” রাজপত্রের চক্ষতে অগিন প্রোক্তজবল হইল। ওসমানকে জিজ্ঞাসিলেন, “আর একটা নিবেদন করিতে পারি কি ? কায্য কি আপনার অভিমতে হইয়াছে ?” ওসমান কহিলেন, “আমার পরামশের বিরদ্ধে।” রাজকুমার বহনক্ষণ নিস্তবধ হইয়া রহিলেন। ওসমান সসময় পাইয়া দিগগজকে কহিলেন, “তুমি এখন বিদায় হইতে পাের।” দিগগজ গাত্ৰোখান করিয়া চলিয়া যায়, কুমার তাঁহার হস্তধারণপব্বক নিবারণ করিয়া কহিলেন, “আর এক কথা জিজ্ঞাসা ; বিমলা কোথায় ?” དག་ নিশবাস ত্যাগ করিল, একটি রোদিনও করিল। কহিল, “বিমলা এখন নবাবের ডপ রাজকুমার বিদ্যান্দন্টিতে ওসমানের প্রতি চাহিয়া কহিলেন, “এও সত্য ?” ওসমান কোন উত্তর না করিয়া ব্রাহ্মণকে কহিলেন, “তুমি আর কি করিতেছ? চলিয়া যাও।” রাজপত্র ব্রাহ্মণের হসন্ত দঢ়তর ধারণ করিলেন, যাইবার শক্তি নাই। কহিলেন, “আর এক মহত্ত রহ ; আর একটা কথা মাত্র।” তাঁহার আরক্ত লোচন হইতে দিবগণতর অগি নবিসফরণ হইতেছিল, “আর একটা কথা। তিলোত্তমা ?” ব্ৰাহ্মণ উত্তর করিল, “তিলোত্তম নবাবের উপপত্নী হইয়াছে। দাস দাসী লইয়া তাহারা সবচ্ছন্দে আছে।” রাজকুমার বেগে ব্ৰাহ্মণের হস্ত নিক্ষেপ করিলেন, ব্রাহ্মণ পড়িতে পড়িতে রহিল। ওসমান লজিজত হইয়া মন্দভাবে কহিলেন, “আমি সেনাপতি মাত্র।” রাজপত্র উত্তর করিলেন, “আপনি পিশাচের সেনাপতি।” দশম পরিচ্ছেদ ঃ প্ৰতিমা বিসঙ্গজনি বলা বাহাল্য যে, জগৎসিংহের সে রাত্রে নিদ্ৰা আসিল না। শয্যা অগিনবিকীর্ণবৎ, হৃদয়মধ্যে অগিন জীবলিতেছে। যে তিলোত্তমা মরিলে জগৎসিংহ পথিবী শান্য দেখিতেন, এখন সে তিলোত্তম প্রাণত্যাগ করিল না কেন, ইহাই পরিতাপের বিষয় হইল। সে কি ? তিলোত্তমা মরিল না কেন ? কুসমসকুমার দেহ, মাধযময় কোমলালোকে বেষ্টিত যে দেহ, যে দিকে জগৎসিংহ নয়ন ফিরান, সেই দিকে মানসিক দর্শনে দেখিতে পান, সে দেহ শমশানমত্তিকা হইবে ? এই পথিবী—অসীম পথিবীতে কোথাও সে দেহের চিহ্ন থাকিবে না ? যখন এইরােপ চিন্তা করেন, জগৎসিংহের চক্ষতে দর দর বারিধারা পড়িতে থাকে; অমনই আবার দরাত্মা কতল খাঁর বিহারমন্দিরের সন্মতি হৃদয়মধ্যে বিদ্যদবৎ চমকিত হয়, সেই কুসমসকুমার বপ, পাপিষ্ঠ পাঠানের অঙ্কন্যস্ত দেখিতে পান, আবার দারণাগিনিতে হৃদয় জীবলিতে থাকে। তিলোত্তমা। তাঁহার হৃদয়-মন্দিরাধিভদ্ঠাত্রী দেবীমত্তি । সেই তিলোত্তমা পাঠানভবনে! সেই তিলোত্তমা কতল খাঁর উপপত্নী! আর কি সে মাত্তি রাজপতে আরাধনা করে ? সে প্রতিমা স্বহস্তে স্থানচ্যুত করিতে সঙ্কোচ না করা কি রাজপতের কুলোচিত ? SS O