পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী তিলোত্তমা আগ্রহ সহকারে কহিলেন, “বহিয়া কাজ কি ? এতদিন বহিল কেন, এই মনসস্তাপ ৷ ” বিমলা নিরািত্তর হইলেন। তিনিও রোদন করিতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে বিমলা দীঘ নিশবােস পরিত্যাগ করিয়া কহিলেন, “এখন আজিকার উপায় ?” তিলোত্তমা অসন্তোষের সহিত বিমলার অলঙ্কারাদির দিকে পনববার চক্ষঃপাত করিয়া কহিলেন, “উপায়ের প্রয়োজন কি ?” বিমলা কহিলেন, “বাছা, তাচ্ছিল্য করিও না ; আজও কি কতল খাঁকে বিশেষ জান না ? আপনার অবকাশ অভাবেও বটে, আমাদিগের শোক নিবারণার্থ অবকাশ দেওয়ার অভিলাষেও বটে, এ পয্যন্ত দরাত্মা আমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছে ; আজ পৰ্য্যন্ত আমাদিগের অবসরের যে সীমা, পকেবই বলিয়া দিয়াছে। সতরাং আজ আমাদিগকে নাতাশালায় না দেখিলে না জানি কি প্ৰমাদ ঘটাইবে।” তিলোত্তম কহিলেন, “আবার প্রমাদ কি ?” বিমলা কিঞ্চিৎ সিথর হইয়া কহিলেন, “তিলোত্তম, একবারে নিরাশ হও কেন ? এখনও আমাদিগের প্রাণ আছে, ধৰ্ম্মম আছে; যত দিন প্ৰাণ আছে, তত দিন ধৰ্ম্মম রাখিব।” তিলোত্তমা তখন কহিলেন, “তবে মা! এই সকল অলঙ্কার খলিয়া ফেল: তুমি অলঙ্কার পরিয়াছ, আমার চক্ষঃশল হইয়াছে।” t". ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, “বাছা, আমার সকল আভরণ না দেখিয়া আমাকে তিরস্কার কারও না । ’ এই বলিয়া বিমলা নিজ পরিধেয় বাসমধ্যে লক্কায়িত এক তীক্ষাধার ছরিকা বাহির করিলেন ; দীপপ্ৰভায় তাহার শাণিত ফলক বিদ্যুদিবৎ চমকিয়া উঠিল। তিলোত্তম বিস্মিতা ও বিশন্ডিকমখী হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ কোথায় পাইলে ?” বিমলা কহিলেন, “কাল হইতে অন্তঃপারমধ্যে একজন নািতন দাসী আসিয়াছে দেখিয়াছ ?” তি। দেখিয়াছি——আশামানি আসিয়াছে। বি। আশামানির দাবার। ইহা অভিরাম স্বামীর নিকট হইতে আনাইয়াছি। তিলোত্তম নিঃশবদ হইয়া রহিলেন ; তাঁহার হৃদয় কম্পিপতি হইতে লাগিল। ক্ষণেক পরে বিমলা জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি এ বেশ অদ্য ত্যাগ করিবে না ?” তিলোত্তম কহিলেন, “না।” বি। নিত্যগীতাদিতে যাইবে না ? তি। না। বি । তাহাতেও নিস্তার পাইবে না। তিলোত্তম কাঁদিতে লাগিলেন। বিমলা কহিলেন, “স্থির হইয়া শািন, আমি তোমার নিম্প্রকৃতির উপায় করিয়াছি।” তিলোত্তম আগ্রহ সহকারে বিমলার মািখপানে চাহিয়া রহিলেন। বিমলা তিলোত্তমার হস্তে ওসমানের অঙ্গরীয় দিয়া কহিলেন, “এই অঙ্গরীয় ধর; নিত্যাগহে যাইও না; অন্ধ্যরাত্রের এ দিকে উৎসব সম্পপণ্য হইবেক না ; সে পৰ্য্যন্ত আমি পাঠানকে নিবত্ত রাখিতে পারিব। আমি যে তোমার বিমাতা, তাহা সে জানিয়াছে, তুমি আমার সাক্ষাতে আসিতে পরিবে না, এই ছলে নিত্যগীত সমাধা পয্যন্ত তাহার দর্শন-বাঞ্ছা ক্ষান্ত রাখিতে পারিব। অন্ধ রাত্রে অন্তঃপােরন্দবারে যাইও, তথায় আর একব্যক্তি তোমাকে এইরােপ আর এক অঙ্গরীয় দেখাইবে । তুমি নিভয়ে তাহার সঙ্গে গমন করিও, যেখানে লইয়া যাইতে বলি বো, সে তোমাকে তথা লইয়া যাইবে । তুমি তাহাকে অভিরাম স্বামীর কুটীরে লইয়া যাইতে কহিও ।” তিলোত্তমা শনিয়া চমৎকৃত হইলেন ; বিসময়ে হউক বা আহাদে হউক, কিয়ৎক্ষণ কথা কহিতে পারিলেন না, পরে কহিলেন, “এ বািত্তান্ত কি ? এ অঙ্গরীয় তোমাকে কে দিল ?” বিমলা কহিলেন, “সে সকল বিস্তর কথা: অন্য সময়ে অবকাশ মত কহিব। এক্ষণে নিঃসঙ্কোচচিত্তে, যাহা বলিলাম, তাহা করিও।” \S(GINESI , “তোমার কি গতি হইবে ? তুমি কি প্রকারে বাহির হইবে ?” বিমলা কাঁ “আমার জন্য চিন্তা করিও না। আমি অন্য উপায়ে বাহির হইয়া কাল প্রাতে তোমার সহিত মিলিত হইব ।” ఏఏ \