পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७का ब्रष्नावली কুঞ্জ পরিচারিকা গৃহমধ্যে প্রবেশ করল। তিলােত্মা তাহাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “রাত্ৰি কত ?” করিতে লাগিলেন। দাসী প্রয়োজন সমাপন করিয়া চলিয়া গেল, তিলোত্তমা বিমলা-প্রদত্ত অঙ্গরীয় লইয়া কক্ষমধ্য হইতে যাত্রা করিলেন। তখন আবার মনে আশঙ্কা হইতে লাগিল। পা কাঁপে, হৃদয় কাঁপে, মাখ শকায় ; একপদে অগ্রসর একপদে পশ্চাৎ হইতে লাগিলেন। ক্ৰমে সাহসে ভর করিয়া অন্তঃপােরন্দবার পর্যন্ত গেলেন। পৌরবগাঁ খোজা হাবাসী প্রভৃতি সকলেই প্রমোদে ব্যস্ত; কেহ তাঁহাকে দেখিল না; দেখিলেও তৎপ্রতি মনোযোগ করিল না; কিন্তু তিলোত্তমার বোধ হইতে লাগিল যেন সকলেই তাঁহাকে লক্ষ্য করিতেছে। কোনক্রমে আন্তঃপরদবার পয্যন্ত আসিলেন ; তথায় প্ৰহারিগণ আনন্দে উন্মত্ত। কেহ নিদ্রিত, কেহ জাগ্রাতে অচেতন, কেহ অন্ধচেতন। কেহ তাঁহাকে লক্ষ্য করিল না। একজন মাত্র দবারে দন্ডায়মান ছিল; সেও প্রহরীর বেশধারী। সে তিলোত্তমাকে দেখিয়া কহিল, “আপনার হাতে আঙ্গটি আছে ?” তিলোত্তমা সভয়ে বিমলাদত্ত অঙ্গরীয় দেখাইলেন। প্ৰহারিবেশী উত্তমরপে সেই অঙ্গরীয় নিরীক্ষণ করিয়া নিজ হস্তস্থ অঙ্গরীয় তিলোত্তমাকে দেখাইল। পরে কহিল, “আমার সঙ্গে আসন, কোন চিন্তা নাই।” তিলোত্তমা চঞ্চল চিত্তে প্রহরীর সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন। অন্তঃপারদ্বারে প্রহরিগণ যেরপ শিথিলভাবাপন্ন, সব্বত্র প্রহরিগণ প্রায় সেইরােপ। বিশেষ অদ্য রাত্রে অবারিত দাবার, কেহই কোন কথা কহিল না। প্রহরী তিলোত্তমাকে লইয়া নানা দাবার, নানা প্রকোম্পাঠ, নানা প্রাঙ্গণভূমি অতিক্ৰম করিয়া আসিতে লাগিল। পরিশেষে দগপ্রান্তে ফটকে আসিয়া কহিল, “এক্ষণে বিমলা কি বলিয়া দিয়াছিলেন, তাহা তিলোত্তমার সমরণ হইল না। আগে জগৎ সিংহকে সমরণ হইল। ইচ্ছা, প্রহরীকে কহেন, “যথায় রাজপত্র আছেন, তথায় লইয়া চল।” । কিন্তু পািব্বশত্র লজা আসিয়া বৈর সাধিলা। কথা মাখে বাধিয়া আসিল। প্রহরী পনেকবার জিজ্ঞাসা তিলোত্তমা কিছই বলিতে পারিলেন না; যেন জ্ঞােনশন্যা হইলেন, আপনা। আপনিই হৃৎকক্ষপ হইতে লাগিল। নয়নে দেখিতে, কণে শনিতে পান না ; মািখ হইতে কি কথা বাহির হইল, তাহাও কিছ জানিতে পারিলেন না; প্রহরীর কণে অদ্ধাির্সপশুট “জগৎসিংহ” শব্দটি প্রবেশ করিল। প্রহরী কহিল, “জগৎসিংহ এক্ষণে কারাগারে আবদ্ধ আছেন, সে অন্যের আগম্য। কিন্তু আমার প্রতি এমন আজ্ঞা আছে যে, আপনি যথায় যাইতে চাহিবেন, তথায় লইয়া যাইব, আসন।” প্রহরী দগমধ্যে পানঃপ্রবেশ করিল। তিলোত্তমা কি করিতেছেন, কোথায় যাইতেছেন, কিছই বঝিতে না পারিয়া কলের পত্তলীর ন্যায়। সঙ্গে সঙ্গে ফিরিলেন ; সেই ভাবে তাহার সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন। প্রহরী কারাগারদিবারে গমন করিয়া দেখিল যে, অন্যত্র প্রহরিগণ যেরপ প্রমোদাসক্ত হইয়া নিজ নিজ কায্যে শৈথিল্য করিতেছে, এখানে সেরাপ নহে, সকলেই সব সব স্থানে সতক আছে। একজনকে জিজ্ঞাসা করিল, “রাজপত্র কোন স্থানে আছেন?” সে অঙ্গলি নিৰ্দেশ দবারা দেখাইয়া দিল। অঙ্গরীয়বাহক প্রহরী কারাগার-রক্ষীকে জিজ্ঞাসা করিল, “বন্দী এক্ষণে নিদ্রিত না জাগরিত আছেন?” কারাগার-রক্ষী কক্ষদ্বারা পৰ্য্যন্ত গমন করিয়া প্রত্যাগমনপকেবািক কহিল, “বন্দীর উত্তর পাইয়াছি, জাগিয়া আছে।” অঙ্গরীয়বাহক প্রহরী রক্ষীকে কহিল, “আমাকে ও কক্ষের দাবার খালিয়া দাও, এই সত্ৰীলোক সাক্ষাৎ করিতে যাইবেক ।” রক্ষী চমৎকৃত হইয়া কহিল, “সে কি ? এমত হাকুম নাই, তুমি কি জান না ?” অঙ্গরীয়বাহক কারাগারের প্রহরীকে ওসমানের সাঙ্কেতিক অঙ্গরীয় দেখাইল। সে তৎক্ষণাৎ নতশির হইয়া কক্ষের দবারোদঘাটন করিয়া দিল । রাজকুমার কক্ষমধ্যে এক সামান্য চৌপায়ার উপর শয়ন করিয়া ছিলেন। দবারোদঘাটন-শব্দ শনিয়া কৌতহলপ্রযক্ত দবারপ্রতি চাহিয়া রহিলেন। তিলোত্তমা বাহির দিকে দবারের নিকট আসিয়া আর আসিতে পারলেন না। আবার পা চলে না; দবারপাশে বা কবাট ধরিয়া দাঁড়াইয়া রাঁহিলেন । Nd Nd bf