পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দগেশনন্দিনী এই কথা আয়েষ্যা এমন সমিস্টস্বরে কহিলেন যে, তিলোত্তমার তৎপ্রতি কিছমাত্র অবিশ্ববাস হইল না। বিশেষ এক্ষণে চলিতেও আর পারেন না, জগৎ সিংহের নিকট বসিয়াও থাকিতে পারেন না, সতরাং স্বীকৃত হইলেন। আয়েষা কহিলেন, “তুমি ত চলিতে পরিবে না। এই দাসীর উপর শরীরের ভর রাখিয়া চল ।” তিলোত্তম দাসীর সকন্ধে হস্ত রাখিয়া তদবলম্বনে ধীরে ধীরে চলিলেন। আয়েষাও রাজপত্রের নিকট বিদায় হয়েনা; রাজপত্র তাঁহার মািখপ্রতি চাহিয়া রহিলেন, যেন কিছ: বলিবেন। আয়েষা ভােব বঝিতে পারিয়া দাসীকে কহিলেন, “তুমি ইহাকে আমার শয়নাগারে বসাইয়া পনেকবার আসিয়া আমাকে লইয়া যাইও ।” দাসী তিলোত্তমাকে লইয়া চলিল । জগৎ সিংহ মনে মনে কহিলেন, “তোমায় আমায় এই দেখা শনা।" গম্ভীর নিশবাস ত্যাগ করিয়া নিঃশব্দ, হইয়া রহিলেন। যতক্ষণ তিলোত্তমাকে দবারপথে দেখা গেল, ততক্ষণ তৎপ্রতি চাহিয়া রহিলেন। তিলোত্তম৷৷ও ভাবিতেছিলেন, “আমার এই দেখা শনা।” যতক্ষণ দন্টিপথে ছিলেন ততক্ষণ ফিরিয়া চাহিলেন না। যখন ফিরিয়া চাহিলেন, তখন আর জগৎ সিংহকে দেখা গেল না। অঙ্গরীয়বাহক তিলোত্তমার নিকটে আসিয়া কহিল, “তবে আমি বিদায় হই ?” তিলোত্তমা উত্তর দিলেন না। দাসী কহিল, “হাঁ।” প্রহরী কহিল, “তবে আপনার নিকট যে সাঙ্কেতিক অঙ্গরীয় আছে, ফিরাইয়া দিউনা।” তিলোত্তম অঙ্গরীয় লইয়া প্রহরীকে দিলেন। প্রহরী বিদায় হইল। পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ ঃ মন্ত কন্ঠ তিলোত্তমা ও দাসী কক্ষমধ্য হইতে গমন করিলে আয়েষ্যা শয্যার উপর আসিয়া বসলেন ; তথায় আর বসিবার আসন ছিল না ; জগৎ সিংহ নিকটে দাঁড়াইলেন। আয়েষা কবরী হইতে একটি গোলাব খসাইয়া তাহার দলগলি নখে ছিড়িতে ছিড়িতে কহিলেন, “রাজকুমার, ভাবে বোধ হইতেছে যে, আপনি আমাকে কি বলিবেন। আমা হইতে যদি কোন কম সিদ্ধ হইতে পারে, তবে বলিতে সঙেকাচ করিবেন না ; আমি আপনার কায্য করিতে পরম সখী হইব।” রাজকুমার কহিলেন, “নবাবপত্রি, এক্ষণে আমার কিছরই বিশেষ প্রয়োজন নাই। সে জন্য আপনার সাক্ষাতের অভিলাষী ছিলাম না। আমার এই কথা যে, আমি যে দশাপন্ন হইয়াছি, ইহাতে আপনার সহিত পনেকবার দেখা হইবে, এমন ভরসা করি না, বোধ করি এই শেষ দেখা। আপনার কাছে যে ঋণে বন্ধ আছি, তাহা কথায় প্রতিশোধ কি করিব ? অার কায্যেও কখন যে তাহার প্রতিশোধ করিব, সে অদ্যুলেটর ভরসা করি না। তবে এই ভিক্ষা যে, যদি কখন সাধ্য হয়, যদি কখন অন্য দিন হয়, তবে আমার প্রতি কোন আজ্ঞা করিতে সঙেকাচ করবেন না।” জগৎ সিংহের সবর এতাদশ সকাতর, নৈরাশ্যব্যঞ্জক যে, তাহাতে আয়েষাও ক্লিন্সটা হইলেন ; আয়েষা কহিলেন, “আপনি এত নিভরসা হইতেছেন কেন ? এক দিনের অমঙ্গল পর দিনে থাকে না ।” জগৎ সিংহ কহিলেন, “আমি নিভরসা হই নাই, কিন্তু আমার আর ভরসা করিতে ইচ্ছা! করে না। এ জীবন ত্যাগ করিতে ব্যতীত আর ধারণ করিতে ইচ্ছা করে না। এ কারাগার ত্যাগ করিতে বাসনা করি না। আমার মনের সকল দঃখ আপনি জানেন না, আমি জানাইতেও পারি না।” যে কারণ স্বরে রাজপত্র কথা কহিলেন, তাহাতে আয়েষা বিস্মিত হইলেন, অধিকতর কাতর হইলেন। তখন আর নবাবপত্রী-ভােব রহিল না; দরিতা রহিল না ; স্নেহময়ী রমণী, রমণীর ন্যায়। যত্নে, কোমল করপল্লবে রাজপত্রের কর ধারণ করিলেন, আবার তখনই তাঁহার হস্ত ত্যাগ করিয়া, রাজপত্রের মািখপানে উদ্ধর্বদন্টি করিয়া কহিলেন, “কুমার! এ দারণ দঃখ তোমার হৃদয়মধ্যে কেন ? আমাকে পরজ্ঞান করিও না। যদি সাহস দাও, তবে বলি,--বীরেন্দ্ৰসিংহের কন্যা কি-” ఏ SRఏ