পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দগেশনন্দিনী 一早一 যবেরাজ কহিলেন, “পাঠানেরা দিল্লীশ্ববরের প্রভুত্ব স্বীকার করিলে, আমি সন্ধির জন্য অনরোধ করিতে স্বীকার করিলাম।” কতলা খাঁ পনরাপি আন্ধব সফটশবাসে কহিলেন, “উড়িষ্যা ?” রাজপত্র বঝিয়া কহিলেন, “যদি কায্য সম্পন্ন করিতে পারি, তবে আপনার পত্রেরা উড়িষ্যাচু্যত হইবে না।” কতলার মাতৃত্যু-ক্লেশ-নিপীড়িত মািখকান্তি প্ৰদীপত হইল। মমষ, কহিল, “আপনি—মক্ত—জগদীশবর—মঙ্গল—” জগৎ সিংহ চলিয়া যান, আয়েষ্যা মািখ অবনত করিয়া পিতাকে কি কহিয়া দিলেন। কতল খাঁ খাজা ইসার প্রতি চাহিয়া আবার প্ৰতিগমনকারী রাজপত্রের দিকে চাহিলেন। খাজা ইসা রাজপত্রকে কহিলেন, “বঝি আপনার সঙেগ আরও কথা আছে।” রাজপত্র প্রত্যাবত্তন করিলেন, কতল খাঁ কহিলেন, “কাণ।” রাজপত্র বঝিলেন। মমষর অধিকতর নিকটে দাঁড়াইয়া মাখের নিকট কর্ণাবনত করিলেন। কতল খাঁ পািব্বাপেক্ষা অধিকতর অসপস্ট স্বরে বলিলেন, “বীর —” ক্ষণেক সাতবধ হইয়া রহিলেন, পরে বলিতে লাগিলেন, “বীরেন্দ্ৰসিংহ—তৃষা।” আয়েষা পনরাপি অধরে পেয় সিঞ্চন করিলেন। “বীরেন্দ্ৰসিংহের কন্যা।” রাজপত্রকে যেন বশিচক দংশন করিল ; চমকিতের ন্যায় ঋজবায়ত হইয়া কিঞ্চিৎন্দরে দাঁড়াইলেন। কতল খাঁ বলিতে লাগিলেন, “পিতৃহীনা—আমি পাপিষ্ঠ—উঃ তৃষা।” আয়েষা পািনঃ পািনঃ পানীয়াভিসিঞ্চন করিতে লাগিলেন। কিন্তু আর বাক্যস্ফারণ দর্ঘািট হইল। শাবাস ছাড়িতে ছাড়িতে বলিতে লাগিলেন, “দারণ জবালা—সাধবী—তুমি দেখিও—” রাজপত্ৰ কহিলেন, “কি ?” কতল খাঁর কণে এই প্রশন মেঘগজজািনবৎ বোধ হইল। কতল খাঁ বলিতে লাগিলেন, “এই ক-কন্যার—মত পবিত্ৰা।—তুমি।—উঃ!—বড় তৃষা—যাই যে— আয়োষ।” আর কথা সরিল না ; সাধ্যাতীত পরিশ্রম হইয়াছিল, শ্রমাতিরেক ফলে নিজজীব মস্তক ভূমিতে গড়াইয়া পড়িল। কন্যার নাম মাখে থাকিতে থাকিতে নবাব কতল খাঁর প্রাণবিয়োগ হইল । অম্পটাদশ পরিচ্ছেদ ঃ প্রতিযোগিতা জগৎ সিংহ কারামক্স হইয়া পিতৃশিবিরে গমনান্তর নিজ স্বীকারানযায়ী মোগলপাঠানে সন্ধিসম্মবন্ধ করাইলেন। পাঠানেরা দিল্লীশবরের অধীনতা সবীকার করিয়াও উৎকলাধিকারী হইয়া রহিলেন। সন্ধির বিস্তারিত বিবরণ ইতিব্বত্তে বৰ্ণনীয়। এ স্থলে অতি-বিস্তার নিম্প্রয়োজন। সন্ধি সমাপন্যান্তে উভয় দল কিছ দিন পৰ্ব্বব্যাবস্থিতির স্থানে রহিলেন। নবপ্রীতিসম্প্ৰবন্ধনাৰ্থে কতলা খাঁর পত্রদিগকে সমভিব্যাহারে লইয়া প্রধান রাজমন্ত্রী খাবাজা ইসা ও সেনাপতি ওসমান রাজা মানসিংহের শিবিরে গমন করিলেন ; সাদ্ধবশত হস্তী আর অন্যান্য মহােঘ দ্রব্য উপঢৌকন দিয়া রাজার পরিতোষ জনমাইলেন ; রাজাও তাঁহাদিগকে বহবিধ সম্পমান করিয়া সকলকে খেলোয়াৎ দিয়া বিদায় করিলেন। এইরুপ সন্ধিসম্প্ৰবন্ধ সমাপন করিতে ও শিবির-ভঙ্গোদ্যোগ করিতে ক্‌ছি, দিন গত হইল। পরিশেষে রাজপত সেনার পাটনায় যাত্রার সময় আগত হইলে, জগৎ সিংহ এক দিবস অপরাহে সহচর সমভিব্যাহারে পাঠান-দগের্ণ ওসমান প্রভৃতির নিকট বিদায় লইতে গমন করিলেন। কারাগারে সাক্ষাতের পর, ওসমান রাজপত্রের প্রতি আর সৌহৃদ্যভােব প্রকাশ করেন। নাই। আদ্য সামান্য কথাবাত্তা কহিয়া বিদায় দিলেন। জগৎ সিংহ ওসমানের নিকট ক্ষমমনে বিদায় লইয়া খবাজা ইসার নিকট বিদায় লইতে গেলেন। তথা হইতে আয়েষার নিকট বিদায় লইবার অভিপ্ৰায়ে চলিলেন। একজন অন্তঃপররক্ষী দেবারা আয়েষার নিকট সংবাদ পাঠাইলেন, আর রক্ষীকে কহিয়া দিলেন যে, “বলিও, নবাব সাহেবের লোকান্তর পরে আর তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ হয় নাই। এক্ষণে আমি পাটনায় চলিলাম, পােনকবার সাক্ষাতের সম্পভাবনা অতি বিরল ; অতএব তাঁহাকে অভিবাদন করিয়া যাইতে চাহি৷” SRCA